দোকান গুঁড়িয়ে গ্যারাজে ট্রাক

রাত পৌনে একটা নাগাদ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে ওই বন্ধ গ্যারাজে। তবে, গ্যারাজে ঢুকে পড়ার আগে টালমাটাল ট্রাকটি একে একে ভাঙতে থাকে গ্যারাজ লাগানো চায়ের দোকানগুলো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০২:৩২
Share:

ধরা-পড়ে: দুর্ঘটনার পর। —নিজস্ব চিত্র।

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল মালবোঝাই ট্রাকটা। সোমবার গভীর রাতে বহরমপুর শহরের কাছে নিয়াল্লিশপাড়া ফেরিঘাটের একটি মোটরবাইক গ্যারাজে ঢুকে পড়ায় ঘটনাসস্থলেই মারা গিয়েছেন চার জন। সেই তালিকায় রয়েছে পঞ্চম শ্রেণির, সাকুল্যে বছর বারোর এক কিশোরও। বাকিরা ওই গ্যারাজের কর্মী বলেই প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানাচ্ছে, মৃতেরা সকলেই রাতে ওই গ্যারাজের ভিতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত পৌনে একটা নাগাদ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে ওই বন্ধ গ্যারাজে। তবে, গ্যারাজে ঢুকে পড়ার আগে টালমাটাল ট্রাকটি একে একে ভাঙতে থাকে গ্যারাজ লাগানো চায়ের দোকানগুলো। তবে, সেখানে রাতে কেউ না থাকায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে, দোকানের ভিতরেই ঘুমিয়ে ছিলেন, গ্যারাজের মালিক নিধু স্বর্ণকার আর বিমল মণ্ডল (১৯) ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা যান তাঁরা। মোল্লাগেড়ের বাসিন্দা নিধু দীর্ঘ দিন ধরেই গ্যারাজটি চালাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। বিমল বহরমপুরের ভাগীরথী
পাড়ের বাসিন্দা।

পঞ্চম শ্রেণির ওই কিশোর, মানিক দাস কুঞ্জঘাটার বাসিন্দা। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, স্কুলে ভর্তি হলেও ইদানিং সে গ্যারাজের খুটিনাটি কাজ করত। রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেলে রাতটা কাটিয়ে দিত গ্যারাজেই। তার মা শিবানি বলেন, ‘‘ছেলেকে এ বার ক্লাস ফাইভে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্কুলে যেতে চাইত না, নিজেই গ্যারাজে ঢুকেছিল। ওখানেই যে মরণ আছে কে জানত!’’

Advertisement

বহরমপুর থানার আইসি সুব্রত ইন্দ্র বলেন, ‘‘লরিটি আটক করা হয়েছে। তবে, চালক আর খালাসির খোঁজ মেলেনি।’’ পুলিশ অবশ্য ওই লরির মালিক কৌশিক মণ্ডলকে আটক করেছে। তিনি বলেন, ‘‘রাতে লরিটি ছিল বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডের পুলিশ ফাঁড়ির কাছে। আমার চালক ও খালাসি দু’জনেই রাতে বাড়িতে ছিলেন। অন্য কেউ লরিটি চুরি করে পালানোর সময় ওই বিপত্তি।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লরিটি স্থানীয় নজরুল সরণি ধরে লালবাগের দিক থেকে বহরমপুরের দিকে আসছিল। লরিতে জনা চারেক ছিল বলেও জানান তাঁরা। নিয়াল্লিশপাড়া ঘাটের কাছে ডান দিকে মোড় নিতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারায় ট্রাকটি। তার পর একে একে চায়ের দোকানগুলো গুঁড়িয়ে ঢুকে পড়ে গ্যারাজের মধ্যে।

অবিবাহিত এক দিদিকে নিয়ে মোল্লাগেড়ের ধারে থাকতেন ৪২ বছরের অকৃতদার নিধু স্বর্ণকার। তাঁর দিদি বলেন, ‘‘ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ের বাঁশের বেড়া দেওয়া গ্যারাজ থেকে মাস খানেক আগে কিছু যন্ত্রাংশ চুরি হয়। তারপর থেকেই ভাই তার দুই কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গ্যারাজেই থাকত। সেটাই কাল হল গো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন