—প্রতীকী ছবি।
জাল নথি তৈরি করে জাতিগত শংসাপত্র তৈরির একটি চক্রের হদিস পেল কল্যাণীর মহকুমাশাসকের দফতর। দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে।
কল্যাণী মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে চাকদহের তিন বাসিন্দা— সৌরভ অধিকারী, সুজন রায় ও অমিতাভ মল্লিক নিজেদের তফসিলি জাতিভুক্ত বলে দাবি করে শংসাপত্র চেয়ে আবেদন জানান। সেই আবেদনগুলি পরীক্ষা করার সময়ে দেখা যায়, তিন জনেই দেখিয়েছেন, এর আগে তাঁদের তুতোভাইদের এই শংসাপত্র রয়েছে। তিন জনেই ভোটার কার্ড অনুযায়ী ‘প্রমাণ’ করে দেন তাঁদের সঙ্গে তাঁদের ‘দাদু’র সম্পর্ক। কিন্তু গোল বাধে তুতোভাইয়ের সঙ্গে দাদুর সম্পর্ক প্রমাণ করতে গিয়ে।
দফতরের এক কর্তার দাবি, জাতিগত শংসাপত্র রয়েছে, এমন এক জনকে তুতোভাই সাজিয়েছিলেন তিন জন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে নিজেদের দাদুর সম্পর্ক প্রমাণ করতে গিয়ে গোলমাল পাকান। ভোটার কার্ডের নম্বর ব্যবহার করা তুতোভাইয়ের সঙ্গে দাদুর সম্পর্ক প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছিল। ওই নম্বর ব্যবহার করে সুকৌশলে তাঁরা নতুন ভোটার কার্ড বানান। সেই ভোটার কার্ড দেখলে সাদা চোখে মনেই হবে না যে নকল।
কিন্তু ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সেবানন্দ পন্ডার সন্দেহ হয়। কেননা ভোটার কার্ডগুলি ‘গ্রুপ এ’ আধিকারিকের দ্বারা প্রত্যয়িত। আধিকারিকের সাক্ষর ও সিলমোহর ছিল। কিন্তু সিলমোহর পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি পূর্ত দফতরের এগজ়িকিউটিভ অ্যাসিস্টান্ট ইঞ্জিনিয়ারের। আসলে দফতরে ওই রকম কোনও পদই নেই। ইঞ্জিনিয়ার হয় ‘এগজ়িকিউটিভ’ হবে না হয় ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হবে। দুটো এক সঙ্গে মিলিয়ে কোনও পদ হতে পারে না। এটা দেখেই ওই তিন জনের আবেদন খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে শুরু করেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনটি ভোটার কার্ডের নম্বর পরীক্ষা করে তিনি দেখেন, নির্বাচন কমিশন কার্ডগুলি দিয়েছে অন্য লোকের নামে। সেই নম্বরগুলি ব্যবহার করে অন্য নাম ব্যবহার করে কার্ড বানানো হয়েছে।
দফতরের একটি সূত্রের দাবি, এর পর এক দিন আবেদনকারী সুজন রায় দফতরে আসেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জেরা করতেই তিনি ভেঙে পড়েন। তিনি দাবি করেন, ভোলা দাস নামে এক জনকে টাকা দিয়েছিলেন তিনি। এ সব তারই কারসাজি। তখন ভোলা ও সুজন দুজনের বিরুদ্ধেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। পুলিশ দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে। বাকি দুই আবেদনকারীকে চিঠি দিয়ে ডাকা হয়েছে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভাগ্যিস সিলমোহরে ভুল ছিল। তাই এটা ধরা পড়ল। না হলে এমন কায়দায় নকল ভোটার কার্ড বানিয়েছিল, ধরাই মুশকিল।’’