ইদে দেখা হবে না? উদ্বেগে দুই বাংলা

ইফতারের পরে মাগরিবের নমাজ শেষ করে লালগোলার মানিকচকের বাসিন্দা কবিরুল ইসলামেরও সেই এক প্রশ্ন, ‘‘এ বার তো বর্ডারে গণ্ডগোল নেই। অসুবিধা কোথায়?’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ১২:৪৫
Share:

চোখের-দেখা: এ বছরও দেখা মিলবে এমন ছবির? ফাইল চিত্র

কাঁটাতারেরে ওপারের খেত থেকে বাড়ি ফিরছেন পাকশি সীমান্তের নাসিরুদ্দিন শেখ। আর একটু পরেই ইফতার। সময়ে বাড়ি পৌঁছতে হবে।

Advertisement

ঠিক সেই সময়ে পিছুডাক, ‘‘ও মিঞা, ইদে এ বার দেখা হচ্ছে তো?’’

মাথা চুলকে নাসিরুদ্দিন বলছেন, ‘‘জানি না গো। গত বারও তো সব ভেস্তে গেল।’’

Advertisement

খেতে কাজ করতে আসা রংমহলের সেই আটপৌরে কৃষকের গলায় রীতিমতো ক্ষোভ, ‘‘সে বার তো গুলশনই সব শেষ করে দিল!’’

ইফতারের পরে মাগরিবের নমাজ শেষ করে লালগোলার মানিকচকের বাসিন্দা কবিরুল ইসলামেরও সেই এক প্রশ্ন, ‘‘এ বার তো বর্ডারে গণ্ডগোল নেই। অসুবিধা কোথায়?’’

সারা বছরে এই একটা মাত্র দিন—ইদ-উল-ফিতর। চাতকের মতো এই দিনটার অপেক্ষায় থাকেন দুই বাংলার মানুষ। কাঁটাতারের দু’পারে এসে দাঁড়ান দু’দেশের বাসিন্দারা। মেয়ের সঙ্গে দেখা হয় বৃদ্ধ বাবার। ভাইয়ের সঙ্গে ও পার বাংলার দিদির দেখা হয় বহু দিন পরে। বেশ কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে এপার বাংলার প্রৌঢ়া চিনতে পারেন তারকাঁটার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা সেই কতদিন আগে ফেলে আসা পড়শিকে।

আগের রাতে ইদের চাঁদ ওঠে। খুশির বাঁধ ভাঙে সীমান্তে। বিএসএফের ধমক, সীমান্তের রাঙাচোখ ভুলে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলা। কেউ কেউ আনন্দে আত্মহারা হয়ে ভয়ডর ভুলে বিএসএফকেও মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে ভুল হিন্দিতে বলেন, ‘‘খাইয়ে খাইয়ে, খুবই ভাল মিষ্টি হ্যায়। ওপার বাংলার হ্যায় না। একেবারে আসলি ছানা।’’

বছরের পর বছর ধরে ইদের দিনে পাকশি কিংবা মানিকচক, বাউসমারির এটাই ছিল চেনা ছবি। কিন্তু গোলটা বাধল গত বছর গুলশন-কাণ্ডের পরে। গত ইদে বিএসএফ কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। কিন্তু এ বার?

পিপুলবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল সদস্য তথা পাকশির বাসিন্দা আদের মণ্ডল বলছেন, ‘‘বুঝতেই পারছেন, বহু আশা নিয়ে এলাকার লোকজন ইদের দিনটার জন্য বসে থাকে। সকলেরই তো আর ভিসা পাসপোর্ট করে ওদেশে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই কাঁটাতারকে মাঝে রেখেই একটিবার শুধু চোখের দেখা। সেই সঙ্গে একটু গল্পগাছা, সেমুই, মিষ্টি, মাংস বিনিময়। এ বারেও আমরা বিএসএফকে অনুরোধ করেছি। দেখা যাক কী হয়!’’

বিএসএফের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সীমান্তের মানুষের আবেগকে আমরা সম্মান করি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন