প্রতীকী চিত্র।
এ রকম একটা সম্ভাবনার কথা বেশ কয়েক দিন ধরেই বিজেপির অন্দরে ঘুরছিল। সেটাই শেষমেশ সত্যি হল। বদলে দেওয়া হল নদিয়ায় বিজেপির দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতিকে।
শনিবার বিকেলে জানা যায়, বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ থেকে মহাদেব সরকারকে সরিয়ে ফেরানো হয়েছে আশুতোষ পালকে। তিনিই আগে অখণ্ড নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। গত বছর ১ জানুয়ারি নদিয়া জেলাকে দু’টি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করে বিজেপি। উত্তরের সভাপতি করা হয় মহাদেবকে। আর দক্ষিণের সভাপতি হন জগন্নাথ সরকার। রানাঘাটের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরে জগন্নাথকে সরিয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছিল। এ বার তাঁকেও সরিয়ে সভাপতি করা হল অশোক চক্রবর্তীকে।
নদিয়ায় বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল দীর্ঘদিনের। মহাদেবের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে নিজের লোক ছাড়া অন্যদের গুরুত্ব না দেওয়ার। তৃণমূলের কোনও-কোনও নেতার তিনি ঘনিষ্ঠ বলেও নানা সময় সরাসরি অভিযোগ করেছে দলেরই একটা অংশ। দলের একটি সূত্রের দাবি, মহাদেবের এই সব কার্যকলাপ ভাল চোখে দেখছিল না আরএসএস। তার উপরে করিমপুর উপ-নির্বাচনে দলের শোচনীয় পরাজয় মহাদেবের বিরোধীদের আরও সক্রিয় করে তোলে। তবে মহাদেব-গোষ্ঠীর ধারণা ছিল, পঞ্চায়েত নির্বাচনে নদিয়া উত্তরে বিজেপির ‘অভাবনীয়’ ভাল ফলের কথা মাথায় রেখে তাঁকে সরানো হবে না। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বেরও একটা অংশ তাঁর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। মহাদেব-বিরোধী শিবিরের এক নেতার দাবি, “রাজ্যের প্রথম সারির নেতাকে অপমান করেছিল মহাদেব। তিনি তো কার্যত চ্যালেঞ্জ করে গিয়েছিলেন।”
অন্য দিকে আশুতোষ পাল শুধু আরএসএস ঘনিষ্ঠ নন, নিজে এক জন স্বয়ংসেবক। তাঁর একাধিক প্রশিক্ষণও নেওয়া আছে। আশুতোষ শুধু বলেন, “দল দায়িত্ব দিয়েছে। আমি আবার সকলকে নিয়ে সংগঠন মজবুত করার চেষ্ঠা করব।”
যদিও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় বিজেপির শোচনীয় ফলের জন্য আশু পালের সাংগঠনিক ব্যর্থতাকে দায়ী করেছিল দলের একটি বড় অংশ। এখনও দলের একাংশ মনে করছে, তাঁর কাজ কঠিন হবে। কারণ ৩৩টি মণ্ডলের বেশির ভাগের সভাপতি ও কাউন্সিল সদস্য মহাদেবের অনুগামী। যদিও মহাদেব বলছেন, “আমি দলের সৈনিক। দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা-ই করব। আগেও কোনও দিন পদের জন্য দল করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।”
নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি অশোক চক্রবর্তী অবশ্য আরএসএস-ঘনিষ্ঠ নন। তিনি নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি ছিলেন। পেশায় শিক্ষক, নয়ের দশক থেকে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। এক সময়ে দলের তাহেরপুর শহর মণ্ডলের সভাপতিও ছিলেন। জগন্নাথ দক্ষিণ জেলা সভাপতি হওয়ার পরেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অশোক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। আবার মানবেন্দ্রনাথ সভাপতি হওয়ার পরে তাঁকে করা হয় সহ-সভাপতি।
কিন্তু হঠাৎ মানবেন্দ্রকে সরিয়ে কেন অশোককে সভাপতি করা হল ?
বিজেপির অন্দরের একটি সূত্রের দাবি, মানবেন্দ্রনাথ সভাপতি হওয়ার পরে গোষ্ঠী কোন্দল প্রবল আকার নিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের কোনও এক পক্ষকে বেছে নেওয়ার প্রযোজন পড়ে। অশোককে সভাপতি করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেন জগন্নাথ। অনেকের ধারণা, অশোককে সামনে রেখে পিছন থেকে সংগঠন চালাবেন জগন্নাথই। অশোক বলছেন, “আমি চেষ্টা করব, সকলের সহযোগিতা নিয়ে চলতে, যাতে ভোটে ফল ভাল হয়।”
আর, মানবেন্দ্রনাথ সন্ধ্যায় বলেন, “দলের তরফে আমায় কিছুই জানানো হয়নি। তবে আমি শুনেছি। সংগঠনের প্রয়োজনে দল আমায় যে দায়িত্ব দেবে, আমি সেটাই পালন করব।” মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় জগন্নাথ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।