প্রতীকী ছবি।
গল্পে ব্যস্ত দুই বন্ধু। সাইকেল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা পৌঁছে গিয়েছেন রেলেগেটে। গেট বন্ধ। কিন্তু সেই গেট গলেই তাঁরা হাঁটছেন রেললাইনের দিকে।
ঠিক তখনই কৃষ্ণনগর থেকে শিয়ালদহগামী ট্রেনটা বেরিয়ে গেল। উল্টো দিক থেকে আসছে কৃষ্ণনগরগামী আপ ট্রেন। কিন্তু দুই বন্ধুর সে দিকে হুঁশ নেই। তাঁরা হাঁটছেন।
মঙ্গলবার রাতে কৃষ্ণনগরের বারুইহুদা রেলগেটে তখন হইহই কাণ্ড। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন তাঁদের থামতে বলছেন। নাগাড়ে চিৎকার করে তাঁদের ডাকছেন গেটম্যান গজেন কিস্কু। কিন্তু কারও কথা ওঁরা যেন শুনতেই পাচ্ছেন না।
মুহূর্তের মধ্যে একটা বিকট আওয়াজ। বেরিয়ে গেল আপ ট্রেন। রেললাইন থেকে বেশ কিছুটা দূরে পড়ে রয়েছে দুমড়ে যাওয়া দু’টি সাইকেল। আর লাইনের পাশে পড়ে দুই বন্ধু রিতম চক্রবর্তী (১৯) ও তন্ময় রায়ের (১৯) নিথর দেহ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কৃষ্ণনগরের বৌবাজারের বাসিন্দা, রানাঘাট পলিটেকনিক কলেজের ওই দুই ছাত্র মত্ত ছিল। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রিতম ও তন্ময়কে তাঁর বন্ধুরা হরিহর আত্মা বলতেন। দিনের বেশিরভাগ সময় তাঁরা একসঙ্গেই থাকতেন। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা কম্পিউটর ক্লাসে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন।
পুলিশ জানতে পেরেছে, রাত ৮টা নাগাদ তাঁরা ভাতজাংলায় তাঁদের বন্ধু ও সহপাঠী রোহন বসুর বাড়িতে যান। সেখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির পথেই পড়ে বারুইহুদা রেলগেট। গেটম্যান গজেন কিস্কু বলছেন, ‘‘আমি আপ্রাণ ডাকলাম। কিন্তু দু’জনের কেউ ফিরেও তাকাল না। মুহূর্তের মধ্যেই সব শেষ।’’ প্রত্যক্ষদর্শী রাজেশ পাল বলছেন, ‘‘একে আত্মহত্যা ছাড়া আর কী বলব বলুন তো? আমরা সকলে চিৎকার করে ওদের ডাকলাম। ট্রেনের চালকও বারবার হর্ন বাজালেন। কিন্তু কোনও কিছুই ওদের কানে পৌঁছল না!’’ রিতম ও তন্ময়ের বন্ধু রোহনের দাবি, “ওরা মদ খেয়ে আমার বাড়িতে এসেছিল। এত মদ খেয়েছিল যে ভাল করে কথাই বলতে পারছিল না।” পুলিশ জানতে পেরেছে, পৌনে ৯টার সময় তাঁরা রোহনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। এ দিকে, ছেলে বাড়িতে না ফেরায় ও ফোন না ধরায় তন্ময়ের মা ফোন করেন রোহনকে। রোহন দুই বন্ধুকে ফোন করেন। রিতমের ফোন ‘নট রিচেবল’। তন্ময়ের ফোন ধরে পুলিশ। তারাই রোহনকে জানায় দুর্ঘটনার কথা।
বিষয়টি জানাজানি হতেই দুই পরিবারের শোকের ছায়া নেমে আসে। তন্ময় ও রিতম দু’জনেই বন্ধুমহলে যথেষ্ট জনপ্রিয় ও মেধাবী ছাত্র বলেই পরিচিত। তন্ময়ের মামা মানস পাল বলেন, “ভাগ্নে অত্যন্ত ভাল ছেলে। কোনও দিন তেমন সন্দেহজনক কিছু দেখিনি ওর ব্যবহারে। গোটা ব্যাপারটা কেমন রহস্যময় লাগছে।” কৃষ্ণনগর জিআরপি থানার ওসি দীপক পাইক বলেন, “ঠিক কী কারণে ছেলে দু’টো ও ভাবে লাইন পার হতে গেল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’