মৃত তিন, আক্রান্ত ৬৫

জেলা জুড়ে নিঃশব্দ ছায়া টাইফাসের

দিন দশেক আগেই নবগ্রামের অমরকুণ্ডুর যুবক তরুণ সরকার স্ক্রাব টাইফাসে মারা গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর ও বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৭
Share:

প্রতীকী চিত্র।

ফের স্ক্রাব টাইফাসের থাবা মুর্শিদাবাদে। বৃহস্পতিবার ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। মৃতেরা বহরমপুরের কর্ণসুবর্ণ লাগোয়া ডাবকা এলাকার তামান্না ফিরদৌস (১৪) এবং বেলডাঙার কুমারপুরের শ্যামল প্রামাণিক (৪৬)।

Advertisement

এ দিন বহরমপুরের দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে ওই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তামান্না মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং শ্যামলের গ্রামে একটি স্টেশনারি দোকান রয়েছে। দিন দশেক আগেই নবগ্রামের অমরকুণ্ডুর যুবক তরুণ সরকার স্ক্রাব টাইফাসে মারা গিয়েছিলেন। এই নিয়ে গত এক মাসে জেলায় স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হল। চলতি বছরে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৫ বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বহরমপুরে দলীয় কর্মসূচিতে এসেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি জেনেছি। গোটা বিষয়টি নজরে রেখেছি। বিষয়টি বিধানসভাতেও তোলা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ অন্য আধিকারিকদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছি।’’

Advertisement

স্ক্রাব টাইফাস কী?

মাইট নামক পোকার আক্রমণে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে ‘স্ক্রাব টাইফাস’ রোগ হয়। মাইটের লার্ভা দশা ‘চিগারস’ ওই ব্যকটিরিয়া বহন করে। এক জায়গায় থাকা কাঠের ভিতরে, মাঠে, জঙ্গলে, ঝোপঝাড়ে এই পোকা থাকে। বিড়াল, কুকুর ইঁদুরের শরীরে পোকা বাড়িতে আসে। ডেঙ্গির মতোই আক্রান্তের প্রবল জ্বর দেখা দেবে। সেই সঙ্গে । গায়ে মশার কামড়ে মতো দাগ দেখা দেয়।

কী করতে হবে?

স্ক্রাব টাইফাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। ফুল হাতা জামা পরুন। ঘরে ফিরে সাবান দিয়ে স্নান করুন। পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে মাকড় বা কীটনাশক ব্যবহার করুন। জ্বর হলে দ্রুত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তামান্নার পরিবারের দাবি, বুধবার সকালে জ্বর ও পেটে ব্যথা নিয়ে কর্ণসুবর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বহরমপুরে স্টেশন লাগোয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়। বুধবার রাত অবধি সে ভাল ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সে

মারা গিয়েছে। মৃতার মামা আল্লারাখা শেখ বলেন, ‘‘তামান্না কাল রাতেও ভাল ছিল। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে সে মারা গিয়েছে।’’ তামান্নার মৃত্যুর খবরে এ দিন সকালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে মৃতার পরিজনেরা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে বহরমপুর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মৃত্যুর শংসাপত্রে স্ক্রাব টাইফাসের উল্লেখ রয়েছে। ওই হাসপাতালের সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) অলোক সাউ চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘তামান্নাকে আগে একটি ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসার পর এখানে নিয়ে আসা হয়। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ অবধি বাঁচানো যায়নি। এটা খুব দুঃখজনক ঘটনা।’’ তামান্নার চিকিৎসক মানস ঘোষ চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম থেকে অবস্থা ভাল ছিল না। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারিনি।’’

গত রবিবার জ্বর, পেটে ব্যথা নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বেলডাঙার কুমারপুরের শ্যামল প্রামাণিক। মঙ্গলবার পেটে খিঁচুনি শুরু হওয়ায় তাঁকে এনআরএসে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে সে দিন বাড়ির লোকজন তাঁকে বহরমপুরের উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস টার্মিনাস লাগোয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার পৌনে এগারোটায় তাঁর মৃত্যু হয়। শ্যামলের মৃত্যুর শংসাপত্রে স্ক্রাব টাইফাসের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। শ্যামলের স্ত্রী শম্পা বলেন, “দিন পনেরো আগে আমার স্বামী দোকানের পিছনে জঙ্গল পরিষ্কার করছিল। সে দিন বাড়ি ফিরে বলেছিল, কানের পাশে কিছুতে কামড়েছে। তারপর থেকেই জ্বর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন