‘তাড়া কী, এমনই হয়’, ডাক্তারি অভয়, পেটে মৃত শিশু

হাসপাতালে আসার পথেই মহিলা টের পেয়েছিলেন, ‘জল ভাঙছে’। ছটফট করতে করতেই মহেশগঞ্জ হাসপাতালে এসে ছিলেন তিনি। তবে বেগতিক দেখে সেই গ্রামীণ হাসপাতাল আর ঝুঁকি নেয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৬
Share:

প্রণমিতা

হাসপাতালে আসার পথেই মহিলা টের পেয়েছিলেন, ‘জল ভাঙছে’। ছটফট করতে করতেই মহেশগঞ্জ হাসপাতালে এসে ছিলেন তিনি। তবে বেগতিক দেখে সেই গ্রামীণ হাসপাতাল আর ঝুঁকি নেয়নি।

Advertisement

সরকারি হাসপাতালের চেনা ‘রেফার’ রোগের ঠেলায় বৃহস্পতিবার দুপুরেই চরব্রহ্মনগরের প্রণমিতা দেবনাথকে ছুটতে হয়েছিল কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে।

চিকিৎসকও এসেছিলেন। দিব্যি হাসিমুখে তিনি অভয় দিয়েছিলেন, ‘‘এত তাড়াহুড়োর কী আছে, এমনই তো হয়। সকালে স্বাভাবিক ভাবেই প্রসব হবে।’’ যন্ত্রণা থামেনি। রাত গড়িয়ে বেলা হলেও চিকিৎসক আসেননি।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত, এ দিন দুপুরে য়ন্ত্রণা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় সিজার করে তাঁর মৃত শিশুটি বের করা হয় ওই হাসপাতালে।

প্রসূতির স্বামী কালীপদবাবু এ দিন হাসপাতালের সুপারের কাছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক অবশ্য একইরকম দায়সারা ভঙ্গিতে জবাব দিচ্ছেন, “আমি চেয়েছিলাম স্বাভাবিক ভাবেই প্রসব হোক। সে জন্যই অপেক্ষা করতে বলেছিলাম।”

কালীপদ

চিকিৎসার গাফিলতি যে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলে কথা, রাতে প্রসূতিকে দেখেও ওঁর বোঝা উচিত ছিল। কেন এমন হল, তার কোনও সদুত্তোরও দিতে পারেননি ওই চিকিৎসক। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাতেই ওই চিকিৎসকে শো-কজ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

আর, হাসপাতালের শয্যায় প্রণমিতা সকাল থেকে কেঁদে চলেছেন, “আমি বুঝতে পারছিলাম পেটের মধ্যে জল ভাঙতে শুরু করেছে। বাচ্চাটা ছটফট করছিল। ওই সময়ে অপারেশন করলেই বেঁচে যেত। ডাক্তারবাবু পাত্তাই দিলেন না। খামোখা মারা গেল আমার সন্তানটা।’’

কালীপদও বলছেন, “আমরা বার বার ওই চিকিৎসককে অনুরোধ করেছি, হাত জোড় করে বলেছি, ‘স্যার, একটু দেখুন’, উনি কিছু শুনতেই চাইলেন না। হেসে বললেন, ‘কোনও ভয় নেই।’’ কালীপদ বলছেন, ‘‘এরপরেও সরকারি হাসপাতালে ভরসা করব বলুন!’’

হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলছেন, ‘‘এত দায়সারা মনোভাব নিয়ে চিকিৎসক হওয়া যায় না। এতে সরকারি ডাক্তারদেরই মুখ পুড়ছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন