বিসর্জন ঘিরে অশান্তি ভীমপুরে

দুর্গাপুজোর বিসর্জনকে কেন্দ্র করে তুমুল গোলমাল পুলিশ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে। তাতে কার্যত রণক্ষেত্র এলাকা। ভীমপুর থানার ঝাউতলা এলাকায় গত রবিবার রাতের এই ঘটনায় উভয় পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:০৩
Share:

সংঘর্ষের পর এলাকায় টহল। ভীমপুর। নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুজোর বিসর্জনকে কেন্দ্র করে তুমুল গোলমাল পুলিশ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে। তাতে কার্যত রণক্ষেত্র এলাকা। ভীমপুর থানার ঝাউতলা এলাকায় গত রবিবার রাতের এই ঘটনায় উভয় পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। তিন জন পুলিশকর্মীকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবারও গোটা এলাকা ছিল থমথমে। চাপা উত্তেজনা সর্বত্র। গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য। চলেছে পুলিশি টহলদারি। এই ঘটনায় পুলিশ পোড়াগাছা সর্বজনীন দুর্গা উৎসব কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক-সহ মোট আট জনকে গ্রেফতার
করেছে পুলিশ।

Advertisement

রবিবার রাতে ভীমপুর থানার ঝাউতলা এলাকার প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বহু মহিলাও সেখানে ছিলেন। ঝাউতলা থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটি বিলে প্রতি বারই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। শোভাযাত্রা সেই রাস্তায় যাচ্ছিল। সঙ্গে ছিল বাজনা। শোভাযাত্রায় শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছিল। শোভাযাত্রা বিলের কাছে আসতেই কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের দিকে শব্দবাজি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। এই নিয়ে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে পুজোর আয়োজক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক জনের বচসা শুরু হয়ে যায়। উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে।

শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন প্রায় তিনশো গ্রামবাসী। অভিযোগ, সেই সময় উত্তেজিত গ্রামবাসীদের একাংশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের উপরে চড়াও হন। তাঁরা পুলিশকর্মীদের কিল, চড়, ঘুসি মারতে থাকেন। কয়েক জন মদ্যপ যুবক বাঁশ নিয়ে পুলিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মারতে থাকে। সংখ্যায় অনেক কম থাকায় পুলিশ প্রথমে মারমুখি জনতাকে রুখতে পারেনি।

Advertisement

কিছু ক্ষণের মধ্যে খবর পেয়ে আরও পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে আসেন ভীমপুর থানার ওসি রাজা সরকার। তা দেখে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। চড়াও হন তাঁদের উপরেও। অভিযোগ, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে। গ্রামবাসীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এলাকা যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয়। গ্রামের ভিতর থেকে পুলিশের দিকে ইট ছোড়া শুরু হয়। আহত হন পুলিশকর্মীরা। রবিবার রাতেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার সকালে গ্রেফতার করা হয় পুজো কমিটির সভাপতি দিলীপ সর্দার ও সম্পাদক উৎপল দাস-সহ আরও
তিন জনকে।

রবিবারের ঘটনা নিয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না এখন। সকলেই আতঙ্কিত। কেউই আর নিজেকে পুজো কমিটির সদস্য বসে পরিচয় দিতে চাইছেন না। যেমন পঙ্কজ দাস। রবিবার রাতের ঘটনা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে জানিয়ে দেন, গত বছর কমিটির সদস্য থাকলেও এ বছর ছিলেন না। অথচ, গ্রামবাসীরাই জানাচ্ছেন যে, তিনি এ বছরও পুজো কমিটির সদস্য ছিলেন।

গ্রামের একাংশের দাবি, শোভাযাত্রার ভিতরে বেশ কিছু মদ্যপ যুবক ঢুকে গোলমাল পাকিয়েছে। আরেক অংশ আবার জানিয়েছে, সাময়িক উত্তেজনার বসে গ্রামবাসীরাই ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে এবং পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে।

জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের উপরে শব্দবাজি ছোড়া হয়েছিল। গ্রামবাসীদের মারে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।” তবে লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন