নেতা বলছেন, ‘দেখি যাব এক বার’

পাক্কা ৬ কিলোমিটার সেই রাস্তার পরে একখানা নির্জীব গ্রাম, বলরামপুর। গত শীতে ঘনঘন কয়েকবারের বৃষ্টির রেশ সে রাস্তা এখনও ধরে রেখেছে। গ্রামের মানুষ তাই সে পথে সাইকেলে চলাচলও একরকম ছেড়ে দিয়েছেন।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০১
Share:

প্রতীকী ছবি।

বহরমপুর-হরিহরপাড়া সড়ক ছেড়ে খানিক এগোলে বারুইপাড়া মোড়, তার পর সাবেক পথ আর নেই। লাল মাটির যে রাস্তাটা শীতে জেগে ওঠে শেষ গ্রীষ্মে খান দুয়েক বৃষ্টির পরেই তা হারিয়ে যায়।

Advertisement

কাদা প্যাচপ্যাচ একটা ঘোলা মাঠের মতো পড়ে থাকা সেই অনাবাদি জমিতে ট্রাপিজের খেলা দেখিয়েই বলরামপুরের দিকে হেঁটে যান গ্রামবাসীরা।

পাক্কা ৬ কিলোমিটার সেই রাস্তার পরে একখানা নির্জীব গ্রাম, বলরামপুর। গত শীতে ঘনঘন কয়েকবারের বৃষ্টির রেশ সে রাস্তা এখনও ধরে রেখেছে। গ্রামের মানুষ তাই সে পথে সাইকেলে চলাচলও একরকম ছেড়ে দিয়েছেন। তবে, গ্রামের সুগম রাস্তার প্রতিশ্রুতিটা রয়ে গিয়েছে এখনও। গত বিধানসভা থেকে পঞ্চায়েত— নির্বাচনের ইশারা দেখলেই একটা মৃদু আশায় বুক বাঁধে বলরামপুর। তার পর প্রতিশ্রুতি ফিকে হয়ে গেলে ওই ভাঙা রাস্তাতেই ফের অভ্যস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা। ভেবে নেন, এটাই ভবিতব্য! কেউ কেউ রাগ করেন, ভোট-বয়কটের একটা ডাকও ওঠে। তবু, বুথ বন্টনের পরে কেউ কেউ ভোট দেন। আবার সব আগের মতো। গ্রামের সঞ্জিদা বিবি বলছেন, ‘‘গ্রামের সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছে। কোনও দলের প্রার্তী কদাচিৎ আসেন, গাল ভরা কথা বলে যান। আমরা বুঝে গেছি, ও সব কথার কথা!’’

Advertisement

গত নভেম্বরে ভরা শীতে এই গ্রামেই সাইনুল ইসলামের মেয়ে সুইটি খাতুনের বিয়ে হল। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা রীতিমতো ব্যালান্সের খেলা দেখিয়ে বাড়ি এসেছিল বর। সঞ্জিদা বলছেন, “কি লজ্জার কথা বলুন তো! বর্ষার ভয়ে শীতকালে মেয়ের দিন ঠিক করেছিলাম। সে দিনও বৃষ্টি হওয়ায় কপা ঠুকে মরতে হল, অথচ বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ভোট-বাবুরা বলে গিয়েছিলেন, ‘আর দু’টো মাস অপেক্ষা করুন, রাস্তা পাকা করে দেব।’’ এ ভাবেই ভোট আসে প্রার্তীরা আসেন, এক বার কাদা ভেঙে এক বিধায়কও, গ্রামের ভাঙা তোবড়ানো চায়ের দোকানে বসে এমন ‘ঘনিষ্ঠ’ হয়ে কথা বলেন, যেন পুরনো গ্রামে এসেছেন! তার পর যে কে সেই।

সেই চায়ের দোকানে বসে পাশের গ্রামের সাইনুল ইসলাম খান বলেন, “দেখো এ বারে বিনা লড়াইয়ে হয়ে যাচ্ছে ভোট, এ বার কেউ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিতেও আসবে না!’’

বলরামপুরে কোনও স্কুল নেই। হাসপাতাল অন্তত দশ কিলোমিটার দূরে। ওই এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় টাল সামলে সাত কিলোমিটার দূরের প্রাথমিক বা উচ্চ বিদ্যালয়ে যায়। বলরামপুরের নিরুফা খাতুন জিতারপুর হাইস্কুলে নবম শ্রেণির পড়ুয়া। সে বলছে, “বর্ষাকালে রাস্তা এতটাই খারাপ হয় যে, সাইকেলে রেখে হেঁটে স্কুল যেতে হয়। অনেক সময় স্কুল ব্যাগে একটা বাড়তি পোশাক নিয়ে নিই, কি করব পড়ে গিয়ে কাদা মেখে যায় যদি!’’

গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান সিপিএমের শাখা কমিটির সদস্য, স্বীকার করছেন, ‘‘হ্যাঁ আমাদের আমলেও নেতা-মন্ত্রীদের পা পড়েনি এ গ্রামে।’’ আর স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নিয়ামৎ শেখ? বলছেন, ‘‘হ্যাঁ যাওয়া হয়নি বলরামপুর, দেখি, এ বার যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন