নদী খুঁড়ে তেষ্টা মেটাচ্ছে বালিয়া

খড়গ্রাম ব্লকের বালিয়া অঞ্চলে জল এখনও বুঝি তেলের চেয়েও দামী।

Advertisement

কৌশিক সাহা

কান্দি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩৯
Share:

জলহারা কানা ময়ূরাক্ষীর চর খুঁড়ে এ ভাবেই সংগ্রহ করা হচ্ছে জল। পার্বতীপুরে। নিজস্ব চিত্র

রাজা আসে, ভোটের রায়ে রাজা ফিরে যায়, জল আসে না!

Advertisement

খড়গ্রাম ব্লকের বালিয়া অঞ্চলে জল এখনও বুঝি তেলের চেয়েও দামী। গ্রামবাসীদের পানীয় জলের খোঁজে পাড়ি দিতে হয় কোথাও পাঁচ কোথাও বা সাত কিলোমিটার পথ। আশপাশে শ্যালো পাম্প দূরস্থান, নেই নলকূপও। ফলে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কানা ময়ূরাক্ষীর চরের বালি খুঁড়েই তেষ্টা মেটে গ্রামবাসীদের।

কান্দি ব্লকের পুরন্দরপুর অঞ্চল ও খড়গ্রাম ব্লকের বালিয়া অঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম পা রাখলেই এ কথা মালুম হয়। নদীর এক পারে পুরন্দরপুর অন্য পারে বালিয়া। নদী আছে তবু প্রাক বর্ষাতেও গ্রামবাসীর জল সমস্যা মেটে না। পুরন্দরপুর অঞ্চলের গত ছ’বারের প্রধান তৃণমূলের বৃন্দাবন মণ্ডলের গলায় স্পষ্ট হতাশা, “এখানে জল সমস্যা মেটার নয়।”

Advertisement

নলকূপ আছে, বা তা না থাকার দশা। গ্রামবাসীরা দেখাচ্ছেন, একের পর এক নলকূপ, মরচে ধরা পুরনো বাতিল যন্ত্রাংশের মতো গ্রামের ইতিউতি পড়ে আছে। পুরন্দরপুর অঞ্চলের পার্বতীপুর, লক্ষ্মী নারায়ণপুর ও বালিয়া অঞ্চলের ধামালিপাড়া থেকে মহারাজপুরের মতো গ্রামের বাসিন্দাদের নদীর চরের বালি খুঁড়ে জল সংগ্রহ করে সেই জল দিয়ে রান্নার কাজ করতে হয়, আর পানীয় জলের জন্য পাড়ি দিতে হয় দূরের গ্রামে।

গ্রামবাসীরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের কোনও উদ্যোগই নেই পানীয় জলের আকাল মেটানোর।’’ পার্বতীপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা তাজমুন বেওয়া বলেন, “আমার কিশোরী বেলা থেকে দেখে আসছি, এই অবস্থা। বিয়ের পরে গ্রামে এসে থেকে নদীর চর খুঁড়েই জল তুলে আসছি। চল্লিশ বছরে কোনও বদল হল না গো!’’

রেক্সনা বিবি শোনালেন, ‘‘সকাল বিকেল, দু’বেলা নদীর চরের বালি খুঁড়ে জল সংগ্রহ করেই রান্না করতে হয়। অনেক সময় ওই জল ফুটিয়ে নিয়ে পানীয় জল হিসাবেই ব্যবহার করি। বেশি জল খেতেই ভয় লাগে, শেষ হয়ে গেলে রাতেও তো ছুটতে হবে নদীর চরে।’’ বালিয়ার ধামালিপাড়া ও মহারাজপুরের বাসিন্দা রাজেন শেখ বলেন, “রান্না কেন খাওয়ার জলই বা নদীর চর ছাড়া পাব কোথায়!’’

পার্ব্বতীপুরের আবুল হোসেন, নেকবাস শেখ জানান, পার্ব্বতীপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকায় প্রায় ২০টি নলকূপ ছিল। কিন্তু সব নলকূপ এখন বিকল। একটি সাবমার্সেবল পাম্প রয়েছে, তবে তা নামেই।

পুরন্দরপুর অঞ্চল প্রধান বৃন্দাবন মণ্ডল বলেন, “জলস্তর এখন অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। ফলে নলকূপগুলি সংস্কার করা হলেও কাজে আসে না।”

কান্দির মহকুমাশাসক অভীককুমার দাস বলেন, “আজকের দিনেও মানুষ নদী খুঁড়ে জল সংগ্রহ করে রান্না করছে, পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করছে এটা ভাবাই যায় না। পঞ্চায়েত বলেছি এমন অবস্থা কেন হল খোঁজ নিন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন