Migrant Workers

টাকা নেননি ট্রাকচালক, তবে পেটে পড়েছে শুধু চিঁড়ে

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার

Advertisement

পলাশ দাস

মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০৫:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোভিড-১৯ রোধ করতে দেশ জুড়ে লাগাতার লকডাউন হবে সেটা বুঝতে পারিনি। পাঁচ বছর ধরে চেন্নাইয়ে দিনমজুরের কাজ করি। আমাদের এখানের থেকে প্রায় দ্বিগুণ মাইনে পাওয়া যায়। খাওয়া ও থাকা নিজেকেই করতে হয়। তবুও লাভ হয়, কারণ নিয়মিত কাজ পাওয়া যায়, কাজের অভাব ওই রাজ্যের নেই। এখানে সারা দিনে ৩২০ টাকা পাওয়া যায় আর ওই রাজ্যে সাত ঘণ্টা কাজ করলে ৯০০ টাকা আবার অতিরিক্ত কাজ করতে ঘন্টায় ২০০ টাকা করে পাওয়া যায়। ভালই ছিলাম। কিন্তু লকডাউনের সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে আমার জীবনে। প্রথম দফার লকডাউনের তিন সপ্তাহ খুব কষ্ট করে ছিলাম।

Advertisement

কিন্তু পরে যখন লকডাউনের মেয়াদ বাড়ল তখন গচ্ছিত টাকা খরচ করে বসে বসে খেতে ও ঘর ভাড়ার টাকার ব্যবস্থা করতে সমস্যা হবে সেটা বুঝতে পেরেই একটু পুরোন সাইকেল কিনে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করি। চার জন সঙ্গীও হয়ে যায়। বাস, ট্রেন সব কিছুই বন্ধ। রাস্তায় মাঝে মধ্যে পণ্য বোঝায় ট্রাক দেখা গিয়েছে। চেন্নাই থেকে বাড়ি ফিরতে আমাদের ১৬ দিন সময় লেগেছিল।

ছয় মাস কাজ করার পর লকডাউন হয়। মার্চ মাসের টাকা বাড়িতে পাঠানো হয়নি। তাতেই বিপদ মুক্ত হতে পেরেছি বলা যেতে পারে। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা কাছে ছিল। ওই টাকা থেকে ঘরভাড়া, ও খাওয়া খরচ চালিয়ে ১০ হাজার টাকা ছিল। দু’জনে মিলে দু’হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরোনো সাইকেল কিনেছিলাম। ওই সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে বেরিয়ে পড়ি।

Advertisement

তবে রাস্তা তো চিনি না। সাইকেলে আসার সময় দফায় দফায় পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। ঠিক মতো বোঝাতে না পারলে জুটেছে লাঠির মার। তবে তিন দিন টানা সাইকেল চালিয়ে এসেছি শুধু চিঁড়ে আর চিনি খেয়ে। তারপর রাস্তায় এক জন পুলিশ আমাদের রাস্তা আটকায়। সেখানে আর পাঁচটা পুলিশের মতোই আমাদের জিজ্ঞাসা করে। সেখানে আমাদের মারধর খেতে হয়নি। ভাত, ডাল, তরকারি, ডিমের ঝোল দিয়ে খেতে দিয়েছিল। তারপর সাইকেল চালিয়ে শরীর অসুস্থ দেখে ওষুধ কিনেও দিয়েছিল। শেষে একটি ট্রাক থামিয়ে আমাদের ওই ট্রাকে চালিয়ে দিয়ে ছিল। ওই ট্রাকেই আমরা ওড়িশা পর্যন্ত আসতে পেরেছিলাম। ট্রাকের চালকও আমাদের কাছে কোনও টাকা নেয়নি। তবে রাস্তাতে আর কোথাও খেতে পাইনি। ওই ভাবেই চিঁড়ে আর চিনি খেয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

কিন্তু এখানেও কোন কাজ নেই। কী ভাবে চলবে, কবে সংসার স্বাভাবিক হবে জানিনা। স্ত্রী, দু’ছেলেমেয়ে কে নিয়ে চারজনের সংসার। কী হবে আমি বুঝতে পারছি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন