এলেম নিজের দেশে
West Bengal Lockdown

তিন দিন কাটে বিস্কুট খেয়ে, এক বার শুধু খিচুড়ি

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার

Advertisement

প্রণবকুমার সাহা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ ০৬:৫৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

নিজেদের এক বিঘাও জমি নেই যে চাষ করে সংসার চালাব। আবার দিনমজুরের কাজ নিয়মিত পাওয়া যায়না। বাবা, মা-কে নিয়ে আমরা তিন জন। বাবা আর আমি দিনমজুরের কাজ করেও সংসারের অভাব ঘোচাতে পারিনি। তাই ১৩ বছর আগে গ্রামের এক দাদার হাত ধরে মুম্বই শহরে গিয়েছিলাম। সেখানে মিষ্টি তৈরির কারখানায় প্রথম যোগ দিয়েছিলাম। তখন থাকা ও খাওয়া দিয়ে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পেতাম। বছরে একবার বাড়ি আসতাম ওই ভাবেই সংসারের খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও অভাব কিছুটা দূর হয়ে যায়। এখন মাসে আট হাজার টাকা উপার্জন করি। সংসারের এখন বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ছয় জনের সংসার। এখন মিষ্টি তৈরি কারিগর হয়েছি। কাজের অভাব নেই মুম্বইয়ে।

Advertisement

গ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় বাড়ি এসেছিলাম। মুম্বই ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু লকডাউন শুরু হয়। মুম্বইয়ে কোনও অসুবিধা হয়নি। থাকা ও খাওয়া সব ঠিকই ছিল।

কিন্তু আয় বন্ধ। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কী করে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ঘরে বসে থাকলে তো আর সংসার চলবে না। তাই বাড়ি আসার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু ট্রেন চলেছে না, কাছের রাস্তা নয় যে হেঁটে বাড়ি ফিরব। আমাদের রাজ্যের কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করি। ৩৪জন একত্রিত হয়ে একটি বাস ভাড়া করে হাওড়া আসি।

Advertisement

নয় হাজার টাকা ভাড়া লাগে। কিন্তু মুম্বই থেকে তিন দিন ধরে হাওড়া আসতে যে কী কষ্ট হয়েছে সেটা আমি কোনও দিন ভুলতে পারব না। কিছু শুকনো খাবার নিয়ে বাসে উঠেছিলাম। ভেবেছিলাম রাস্তায় কিছু পাওয়া যাবে। তিন ধরে বাসে বসে থেকে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর খাবার পাওয়া যায়নি। এক একটা রাজ্য ঢোকার সময় আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা কিছু খাইনি, কিছু খাবারের ব্যবস্থা করার আর্জি করছি কিন্তু কেউ সে কথা কানে তোলেনি। তিন দিনে দু’প্যাকেট বিস্কুট খেয়েছি। তবে এক দিন রাতে কোথায় জানি না, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর খিচুরী খেতে দিয়েছিল, ওই একদিন খাবার পেয়েছিলাম। কোনও রাজ্যই কিছু দেয় না। শুধু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখছে আমাদের করোনাভাইরাস নিয়ে যাচ্ছি কি না। হাওড়াতে নেমে দশ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছোট গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফিরেছি। দু’মাসে ১৬ হাজার টাকা উপার্জন করেছি, আর তিন দিনে ১৯ হাজার টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরেছি। এমন ঘটনা এই প্রথম। বাড়ি ফেরার পর আমি অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম। সারা শরীরে ব্যথা। তবে এখানে এসেও কাজ নেই। দিনমজুরের কাজ করব কিন্তু কাজ নেই। কবে সব ঠিক হবে সেটাই বুঝতে পারছি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement