Teenage Marriage

লকডাউনের আবহে ৩ নাবালিকার নিভৃত বিয়ে রুখল পুলিশ

মহেশপুরে  এক নবম শ্রেণির পড়ুয়া কিশোরীর  বিয়ে হতে চলেছে রাতে। খবর পেয়ে সে তাই মহেশপুরে হাজির হয়ে বিয়ে রোখে পুলিশ। 

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০২:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

কারও সর্বনাশ তো কারও পৌষ মাস! লকডাউনে পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে গোপনে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম, শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গল ও বুধবার রাতে তিন-তিনটি বিয়ে বাড়িতে হানা দিয়ে বিয়ে বন্ধ করল পুলিশ। আর সেই বিয়ের আসরে নেমে পুলিশ দেখল, শুধু পাত্রী নয়, বিয়ের পাত্রেরাও নাবালক।

Advertisement

ফরাক্কার বিডিও রাজর্ষি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিয়ের কিছু নিয়ম থাকে। এই এলাকায় বিয়ে সাধারণত দিনের বেলাতেই সম্পন্ন হয় । কিন্তু মঙ্গল ও বুধবার ফরাক্কার তিনটি বিয়ে গোপন রাখতে আয়োজন হয়েছিল রাতে।’’ জনা দশেক লোকজন ছাড়া গ্রামের বিশেষ কেই নিমন্ত্রিতও ছিলেন না। তবে তাতেও চাপা থাকেনি। কন্যাশ্রী যোদ্ধারা খবর পেয়েই স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ফরাক্কার ব্লক অফিসে খবর পাঠায়। খবর যায় ফরাক্কা থানার পুলিশের কাছেও। লকডাউনের ব্যস্ততা সত্বেও পুলিশ হানা দেয় সেই সব বিয়ের আসরে। বন্ধ করা হয় নাবালিকা বিয়ে। মঙ্গলবার সন্ধ্যে ৭ টা নাগাদ বিডিও অফিসে খবর আসে, মহেশপুরে এক নবম শ্রেণির পড়ুয়া কিশোরীর বিয়ে হতে চলেছে রাতে। খবর পেয়ে সে তাই মহেশপুরে হাজির হয়ে বিয়ে রোখে পুলিশ।

এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিল না বিয়ে বাড়ি। পুলিশ ঘরে ঢুকতেই তাদের নজরে পড়ে যথারীতি ঘরের মধ্যে বসে রয়েছে পাত্রও । গ্রামেরই ছেলে, পেশায় বাবার মতই দিনমজুর। কিন্তু পাত্রকে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। জেরা করতেই বেরিয়ে পড়ে নিতান্তই নাবালক।’’ এর পরেই গ্রামের অন্য পাড়ায় তার নিজের বাড়িতে পাঠানো হয়, ওই ছাত্রটিকে। বিয়ে দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে পাত্রপাত্রী ও পরিবারের ছবিও তুলে রাখে পুলিশ।

Advertisement

বুধবার, অন্য একটি সূত্রে বিডিও খবর পান— দু-দুটি বিয়ে হচ্ছে মহাদেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তারাপুরে। ফোন যায় পুলিশের কাছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে সেই সময়ে ডিউটিতে ছিল পুলিশের মোবাইল ভ্যান। রাতেই তারা গাড়ি ছুটিয়ে হাজির হয় গ্রামে। সেখানেও ছবিটা প্রায় একই রকমের। নবম শ্রেণির এক ১৪ বছরের ছাত্রীর বিয়ের গোপন আয়োজন চলছিল সেখানে। আশপাশের বাড়ির লোকজনও কেউ নিমন্ত্রিত নন সেখানে। পাত্র পাড়ারই বছর ১৮ বয়সের এক গাড়ির চালক। কিন্তু পুলিশের গাড়ি দেখে আর পাত্রীর বাড়ির মুখো হয়নি সেই পাত্র। তবে পুলিশ পাত্রের বাবা-মা’কে তলব করে জানিয়ে দেয় বিয়ে হলেই হাতকড়া। অন্য একটি বাড়িতেও গিয়েও দেখা যায়, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছাত্রী বিয়ের সাজে বসে সতেরো বছরের পাত্রের মুখোমুখি। এক ঝিলে দুই পাখি মেরে ফিরে আসে পুলিশ।

স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী রবিউল ইসলাম নাবালিকা বিয়ে রোখার কাজ করে চলেছে দীর্ঘ দিন ধরে। রবিউল বলেন, ‘‘লকডাউনের সুযোগ নিয়ে রাতের অন্ধকারে গোপনে বিয়ের আসর বসেছিল। আসলে ওই পরিবারগুলির ধারনা ছিল, পুলিশ ব্যস্ত, এখন আর এ দিকে নজর দেওয়ার সময় হবে না, তার জেরেই চুপি চুপি বিয়েটা সেরে রাখার চেষ্টা করেছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন