প্রতীকী ছবি।
বিসিকেভি-র ইতিহাস বলছে, রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের অনুগত ছাত্র সংগঠনের প্রভাব বেশির ভাগ সময়ে এড়িয়েই এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
বাম আমলে এখানে ‘ফোরাম ফর প্রোগেসিভ স্টুডেন্টস’ নামে একটি সংগঠন ছিল। ’৭৭ থেকে ’৮৪ পর্যন্ত সংগঠনের রাশ ছিল বামবিরোধী ছাত্রদের হাতে। এর পর সব বামপন্থী ছাত্র সংগঠন মিলে তৈরি করে ‘লেফট ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস ফেডারেশন’। কয়েক বছর তাদের রমরমা চলার পর ফের প্রতিষ্ঠান-বিরোধী বাতাস বইতে শুরু করে। ১৯৯২ সালে তৈরি হয় ‘ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ফোরাম’। সেই সময়েই উত্থান হয় বামবিরোধী নতুন মুখ মুশিয়ার আলির। তবে মূলত কোচবিহার ক্যাম্পাস থেকে সংগঠনে চালানো হত। সংসদ ভোটে মনোনয়ন দাখিল করা হত সেখান থেকেই। আর ভোট দিতেন মোহনপুর ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা। ১৯৯৪-তে তারা ছাত্র সংসদ দখল করে। সাধারণ সম্পাদক হন মুশিয়ার। পরে অবশ্য এসএফআই ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু টিএমসিপি-র ইউনিটও দাপট দেখাত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পাশা পাল্টে গিয়েছে। টিএমসিপি নেতাদের সঙ্গে গন্ডগোলের জেরে দুই নেতৃস্থানীয় ছাত্র এখন হস্টেলের বাইরে থাকেন। তাঁরা এবং আরও কিছু ছাত্রছাত্রী মিলে নতুন ধারার রাজনীতি করার চেষ্ট করছেন। ওঁদের এক জন মধ্যেই কথায়-কথায় এক দিন বলে ফেলেছিলেন: চলো পাল্টাই বিসিকেভি। সেটাই তাঁদের স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যা সহ্য করতে পারছেন না শাসক দলের নেতারা। তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত হরিণঘাটা পুরসভার চেয়ারম্যান রাজীব দালাল থেকে শুরু করে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত প্রশ্ন তুলছেন: চলো পাল্টাই আবার কী! আন্দোলন করতে চাও, বেশ তো, টিএমসিপি-ই তো আছে!
আসলে টিএমসিপি যে কায়দায় ক্যাম্পাসে রাজনীতিটা করার চেষ্টা করছে, তাতে ছাত্রদের মধ্যে সংঘাত কার্যত অনিবার্যই ছিল। প্রথম বিবাদ বাধে টিএমসিপি-রই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের দাবি, গত ২৮ অগস্ট টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসে টিএমসিপি-র একটি গোষ্ঠী প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের মধ্যে প্রচার চালাতে ক্লাসে গেলে অপর গোষ্ঠী কৃষি অনুষদের ডিন শ্রীকান্ত দাসের দ্বারস্থ হয়। এই দ্বিতীয় দলটি ডিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ডিন প্রথম গোষ্ঠীর লোকজনকে ক্লাস থেকে বার করে দেন। পরে তাঁর অনুগামীরা গিয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের মধ্যে প্রচার চালায়। এতে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের অনেকে ‘চলো পাল্টাই বিসিকেভি’ শিবিরের দিকে ঝুঁকে যান।
এ নিয়ে যখন উত্তজেনা ধোঁয়াচ্ছে,
৫ সেপ্টেম্বর এক পক্ষের শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে অন্য পক্ষের না আসা নিয়ে রাতে জগদীশ ও রমন হস্টলের পড়ুয়াদের মধ্যে গন্ডগোল বেধে যায়। পুলিশ আসে। এবং এই জায়গা থেকেই অন্য মাত্রা নিয়ে নেয় গোটা পরিস্থিতি। দাবি ওঠে, ডিন অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার গৌতম চক্রবর্তী ও কৃষি অনুষদের ডিন শ্রীকান্ত দাসকে সরাতে হবে। উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থান শুরু হয়। তা ভাঙতে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা হামলা চালালে বিসিকেভি-র প্রতিষ্ঠান-বিরোধী চেহারাটা ফের স্বমূর্তিতে সামনে আসে। দলের জার্সি সরিয়ে রেখে একত্রিত হয়ে যান ছাত্র, ও শিক্ষকদের অধিকাংশই।
কিন্তু এর পরে উপাচার্য যা করলেন, যে ভাবে তিনি দুই ডিনকে সরানোর লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা করলেন না, তাতে কার্যত আগুনে ঘি পড়েছে। কয়েক দিন কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে নিজের দফতরে ফিরেছেন উপাচার্য। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষকদের বারবার দাবি সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে হামলার মূল পান্ডার নামে অভিযোগ করেননি।
ছাত্রদের প্রশ্ন: কেন দুই ডিন এবং এক টিএমসিপি নেতাকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপাচার্য? যেখানে শনিবারই কৃষ্ণনগরে এসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলে গিয়েছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। কর্মসমিতিকে বলব, এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিক।’’
(চলবে)