মেসে ওরা কারা আসে যায়, মেলে না সদুত্তর

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, রাত গড়িয়ে সকাল, সপ্তাহ গড়িয়ে মাস পেরিয়ে গেলেও কল্যাণীর সেই মেস মালিক এখনও পর্যন্ত নামের লিস্টি নেওয়ার সময় বের করতে পারেননি। অভিযোগ, তিনি একা নন, কল্যাণীর সিংহভাগ মেস মালিকের মানসিকতাই কমবেশি এরকম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

কল্যাণী শহরের বি-ব্লকের বকুল পার্ক সংলগ্ন এলাকার একটি মেসবাড়ি। নীচের তলায় থাকেন বাড়ির মালিক। উপরের ঘরে ভিড় ছিল ভালই। আবাসিকদের কয়েকজন বন্ধু দুপুরে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ভিড়ের বহর দেখে বাড়ির মালিক জানতে চাইলেন, ‘‘তোমরা ঠিক কত জন এখানে থাক? নামগুলো একটা সাদা কাগজে লিখে সন্ধ্যার মধ্যে দিও।’’ আবাসিকদের এক জন বললেন, ‘‘কাকু আপনি ওঁদের ভোটার বা আধার কার্ডের ফটোকপি নিতে পারেন তো।’’ মেস মালিক বেশ গর্বের সঙ্গেই জানিয়ে দেন, ‘‘সে সবের দরকার হবে না। মেস কি আজ থেকে চালাচ্ছি নাকি? আমার এখানে কোনও ভয় নেই! ’’

Advertisement

ছবিটা আলাদা নয় পড়শি জেলা, মুর্শিদাবাদেও। বহরমপুর শহর ও তার আনাচকানাচে রয়েছে অসংখ্য মেস বাড়ি। অভিযোগ, সেখানকার মেস মালিকেরাও আবাসিকদের তথ্য রাখেন না। এক মেস বালিক যেমন বলছেন, ‘‘এই তো ক’বছরের জন্য ওরা আসে। কেউ কেউ আবার কয়েক মাস থেকেই চলে যায়। তাছাড় সবই তো আমার নজরে থাকে।’’

কিন্তু সত্যিই কি নজরে থাকে? নজরে রাখা সম্ভব? জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এই আত্মবিশ্বাসই এক দিন কাল হবে। কে যে লেখাপড়া বা কাজের সূত্রে মেসে এসে থাকছে আর কে অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে এসে থাকছে, তা বোঝার উপায় থাকে না। ফলে আবাসিকদের সচিত্র পরিচয়পত্র অবশ্যই রাখা উচিত মেস মালিকদের।’’ সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, রাত গড়িয়ে সকাল, সপ্তাহ গড়িয়ে মাস পেরিয়ে গেলেও কল্যাণীর সেই মেস মালিক এখনও পর্যন্ত নামের লিস্টি নেওয়ার সময় বের করতে পারেননি। অভিযোগ, তিনি একা নন, কল্যাণীর সিংহভাগ মেস মালিকের মানসিকতাই কমবেশি এরকম।

Advertisement

কল্যাণী শহরের এ এবং বি-ব্লকে বহু মেস রয়েছে। ঘোষপাড়া, আইটিআই মোড়, সেন্ট্রাল পার্ক, ১ নম্বর বাজার এলাকাতেও মেসের সংখ্যা কম নয়। ধানতলার সাহিন দফাদার লেখাপড়ার কারণে বছর চারেক ধরে কল্যাণীর একটি মেসে থাকছেন। তিনি বলছেন, ‘‘মেস মালিক ভোটার কার্ডের ফটোকপি নেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই! তা আর থানা পর্যন্ত পৌঁছয় না। অনেক মেস মালিক আবার নিজের কাছেও কোনও নথি রাখেন না। মেসে আবাসিকদের সঙ্গে কে আসে, কেন আসে, তাঁরা কারা, তী তাঁদের পরিচয় তা আমরাই তো বুঝতে পারি না।’’

নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘আমরা তথ্য রাখি। তবে পুরো তথ্য কী ভাবে সংগ্রহ করা যাবে, সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে।’’ বহরমপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের নীলরতন আঢ্য বলছেন, ‘‘পুরসভা সব তথ্য পুলিশকে দিয়ে দেয়।’’ জেলার পুলিস সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘জেলা পুলিশের একটি অ্যাপস রয়েছে। মালিকেরা তাঁদের ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত তথ্য ওই অ্যাপসে আপলোড করে দেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement