কে পুরপ্রধান, জল্পনা তুঙ্গে মুর্শিদাবাদে

জেলা প্রশাসনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই মুর্শিদাবাদের ছ’টি পুরসভার কে কোথায় পুরপ্রধান হবেন—তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠল। এ নিয়ে দলীয় কাউন্সিলরদের মধ্যে যেমন উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে, এলাকার পুরপ্রধানের নাম জানতে উৎসাহী পুরবাসিন্দারাও। যদিও সম্ভাব্য পুরপ্রধানের নাম নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম বা শাসক দল কেউই খোলসা করে কিছু জানায়নি।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০২:০০
Share:

জেলা প্রশাসনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই মুর্শিদাবাদের ছ’টি পুরসভার কে কোথায় পুরপ্রধান হবেন—তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠল। এ নিয়ে দলীয় কাউন্সিলরদের মধ্যে যেমন উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে, এলাকার পুরপ্রধানের নাম জানতে উৎসাহী পুরবাসিন্দারাও। যদিও সম্ভাব্য পুরপ্রধানের নাম নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম বা শাসক দল কেউই খোলসা করে কিছু জানায়নি।

Advertisement

সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, আগামী ২১ মে ধুলিয়ান, ২৫ মে জঙ্গিপুর, ২৭ মে মুর্শিদাবাদ, ২৮ মে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ ও বেলডাঙা এবং ২৬ মে (সম্ভাব্য) কান্দি পুরসভার পুরপ্রধান নির্বাচন হতে পারে।

গত ২৫ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের ৬টি পুরসভায় নির্বাচন হয়। ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, জঙ্গিপুর ও জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ বামেদের দখলে, কান্দি ও মুর্শিদাবাদ কংগ্রেস দখল করেছে এবং বেলডাঙা ও ধুলিয়ান পুরসভা ত্রিশঙ্কু হয়েছে। ২১ আসনের ধুলিয়ান পুরসভায় তৃণমূল ৬টি, কংগ্রেস ৮টি, বিজেপি ৪, সিপিএম ২ এবং একটি আসনে নির্দল প্রার্থী জয়ী হন। এই অবস্থায় বিজেপির তিন জন, সিপিএমের দু’জন এবং এক নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ১২ জন সদস্য নিয়ে পুরবোর্ড দখলের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে শাসক দল।

Advertisement

কোথায় কে পুরপ্রধান হবেন, তা নিয়ে জেলা নেতারা মুখে কুলুপ আটলেও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল—কোথায় কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে পারে। যেমন, ধুলিয়ানে পুরপ্রধানের দৌড়ে রয়েছেন তিন জন। বসুমতি সিংহ, সুবল সাহা, প্রশান্ত সরকার—এই তিন কাউন্সিলরের নাম প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে একজনের নামে সিলমোহর দিয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে তা জানানোও হয়েছে। তিনি কে? তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন মুখ খুলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘পুরপ্রধান নির্বাচনের দিনই নাম জানা যাবে।’’

একই ভাবে ১৪ আসনের বেলডাঙা পুরসভায় ফলের নিরিখে কংগ্রেস ৭টি, আরএসপি ২টি, সিপিএম ২টি এবং বিজেপি ৩টি আসনে জেতে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে পুরবোর্ড দখল করতে হলে কংগ্রেসের এখনও এক জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। ওই পুরসভায় বিরোধীরা এক জোট হলে অবশ্য কংগ্রেসের বোর্ড গঠনের স্বপ্ন অধরা রয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় ২৮ মে পুরপ্রধান নিয়োগ রয়েছে। কংগ্রেস দল অবশ্য ভরত ঝাওরকে সামনে রেখে পুরভোটে লড়েছে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ভরতবাবু জিতেছেন। কিন্তু তিনিই যে পুরপ্রধান হবেন, তা নিয়ে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনও নিশ্চিৎ নন। ভরতবাবু বলছেন, ‘‘আমাকে পুরপ্রধান করা হবে কি না, নিশ্চিত নই। এ ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ পুরপ্রধানের দায়িত্ব পেলে নিতে তিনি পিছপা হবেন না তা অবশ্য স্পষ্ট করেছেন তিনি।

মুর্শিদাবাদ পুরসভার সম্ভাব্য পুরপ্রধান পদে বেশ কয়েক’টি নাম শোনা যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক কংগ্রেসের শাওনী সিংহ রায়ের অনুগামী বিশ্বজিৎ দে ওরফে মিন্টা পুরপ্রধানের দৌড়ে এগিয়ে। সাধন বিশ্বাস ও বিপ্লব চক্রবর্তীর নাম উঠে এসেছে। গেল বার পুরপ্রধান নিয়োগের সময়েও বিপ্লববাবুর নাম শোনা গিয়েছিল। তবে বহরমপুর থেকে অধীর চৌধুরীর তরফে মুখবন্ধ যে খাম গিয়েছিল, তাতে বিপ্লববাবুর নাম ছিল না! পুরবোর্ড পরিচলানায় তাঁর দক্ষতার কথা বিবেচনা করে এ বার তাঁকে পুরপ্রধান করা হতে পারে বলে অনেকেরই আশা। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন অধীরবাবুই, জানালেন শাওনীদেবীও। তবে কংগ্রেসেরই একটি সূত্রে খবর, পুরভায় অনিন্দিতা হালদার বা সহিদা বিবির মত কাউন্সিলরদের পুরপ্রধানের চেয়ারে বসতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

গত দু’বারের মত এ বারও জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের পুরপ্রধান হতে পারেন সিপিএম মনোনীত নির্দল প্রার্থী শঙ্কর মণ্ডল। তবে জঙ্গিপুর পুরসভায় কে পুরপ্রধান হবেন, তা নিয়ে দল এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি বলে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য জানান। তিনি বলেন, ‘‘জিয়াগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে কাকে পুরপ্রধান করা হবে তা দলীয় স্তরে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী দু’দিনের মধ্যে ওই বৈঠক হবে।’’

কান্দিতে পুরপ্রধানের দৌড়ে রয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক অপূর্ব সরকার এবং গত পুরবোর্ডের পুরপ্রধান গৌতম রায়। এঁরা দু’জন না কি তৃতীয় কেউ? সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি দল। তবে এগিয়ে রয়েছেন অপূর্ববাবু। কান্দিতে কে পুরপ্রধান সে দিকে চেয়ে তৃণমূল শিবিরও। কেন? তৃণমূলেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, সেক্ষেত্রে অপূর্ববাবুর বিরোধী শিবিরের লোকজনকে তারা কাছে টানতে পারবেন। বিষয়টি অজানা নয় কংগ্রেস নেতৃত্বেরও।

এই পরিস্থিতিতে এখন দেখার কোথায় কার ভাগ্যে পুরপ্রধানের শিকে ছেঁড়ে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন