ধাক্কায় কাত গাড়ির সিটেই জন্মাল শিশু

মাঝরাতে প্রসব বেদনা উঠেছিল কৃষ্ণগঞ্জের কাজলি ঘোষের। পাড়ারই এক জনের গাড়িতে খোরশুনা থেকে তাঁকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে যাচ্ছিলেন মা আর শ্বশুর-শাশুড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:২৭
Share:

মা ও ছেলে। — নিজস্ব চিত্র

মাঝরাতে প্রসব বেদনা উঠেছিল কৃষ্ণগঞ্জের কাজলি ঘোষের। পাড়ারই এক জনের গাড়িতে খোরশুনা থেকে তাঁকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে যাচ্ছিলেন মা আর শ্বশুর-শাশুড়ি।

Advertisement

গাঢ় কুয়াশায় চার হাত দূরের জিনিসও ভাল দেখা যাচ্ছিল না। সাবধানেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক বৃন্দাবন দাস। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। ভীমপুরের ঝাউতলার কাছে পৌঁছে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে ধাক্কা মারল গাড়ি। ভাল রকম জখম হলেন বৃন্দাবন।

কাত হয়ে যাওয়া গাড়ির ভিতরে ছটফট করছেন কাকলি। সামলানোর চেষ্টা করছেন তাঁর মা আর শ্বাশুড়ি। শ্বশুর বাসুদেব ঘোষ আর রক্তাক্ত বৃন্দাবন রাস্তায় ছোটাছুটি করছেন। যে ভাবেই হোক, একটা গাড়ি চাই! কিন্তু অত রাতে ফাঁকা মাঠের পাশে কাকে আর পাওয়া যাবে?

Advertisement

কাকলির স্বামী প্রশান্তও তখন তাঁদের সঙ্গে নেই। বাড়িতে বসে তিন বছরের ছেলেকে সামলাচ্ছেন তিনি। রাস্তায় গাড়িঘোড়া বেশি নেই। যাও বা আছে, হাত দেখালে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করছেন কাজলি। ভাগ্য ভাল, ঠিক সেই সময় ব্যাপারটা নজরে পড়়ে যায় কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ার ও আরজি পার্টির ছেলেদের। ভীমপুর থানার টহলদার পুলিশ ভ্যানে ফোন করেন তাঁরা।

শীতের রাতে কেউ ফোন ধরেনি। মরিয়া হয়ে মোটরবাইকে কৃষ্ণনগরের দিকে ছোটেন দুই ভলান্টিয়ার। প্রায় এক কিলোমিটার যাওয়ার পরে তাঁরা পুলিশের গাড়ির দেখা পান। সেই গাড়ি যখন এসে পৌঁছয়, ঠিক তখনই কাত হয়ে যাওয়া গাড়ির সিটে জন্ম নিচ্ছে কাজলির দ্বিতীয় সন্তান। দিদা আর ঠাকুমাই অতি সন্তর্পণে বের করে আনছেন তাকে।

ঠিক হয়ে যায়, পুলিশের গাড়িতেই মা আর শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। কাপড়ে মোড়া রক্তমাখা শিশুটিকে নিজের কোলে নিয়ে নেন এএসআই মানাউল্লা শেখ। নাড়িতে যাতে সামান্য টানও না পড়ে তার জন্য অতি সাবধানে কাত হয়ে যাওয়া গাড়ি থেকে বের করে আনা হয় মা আর সদ্যোজাতকে। কনস্টবল গণেশ মণ্ডল ও হোমগার্ড অরুণ সরকারের উর্দিও রক্তে মাখামাখি হয়।

রাত তখন সাড়ে ৩টে ছুঁই-ছুঁই। মা আর ছেলেকে নিয়ে গাড়ি ছোটে আসাননগর প্রাথমিক হাসপাতালে। ওই সময়ে পুলিশের গাড়ি থেকে শিশু কোলে উর্দিধারীদের নামতে দেখে কর্মীরা বেরিয়ে আসেন। চলে আসেন ডাক্তারবাবুও। দু’জনকেই ভর্তি করে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সুব্রত বিশ্বায় বলেন, “আর একটু দেরি হয়ে গেলেই শিশুটির বড়সড় ক্ষতি হতে পারত।”

যে পুলিশের নাম শুনলে অনেকে ভুরু কুঁচকে পেলেন, তাদের তৎপরতা দেখে মুগ্ধ কাজলি আর তাঁর বাড়ির লোকজন। সকালেই ভীমপুর থানার ওসি শঙ্করপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় গিয়ে দু’টি ধবধবে তোয়ালে দিয়ে এসেছেন মা-শিশুকে। দরকারে চিকিৎসার ভার নিতেও রাজি, জানিয়েছেন তাঁরা।

ছেলের কী নাম রাখছেন কাজলি?

কুজ্ঝটিকা? নাকি মৃত্যুঞ্জয়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন