দেবশ্রীর শ্বশুর ও শাশুড়ি। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
মাত্র মাস চারেক আগে হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছিলেন। ইটাহার থেকে বিয়াল্লিশ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে গত ৮ অক্টোবর যোগ দিয়েছিলেন পুলিশ লাইনে। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেই চাকরিই যে বছর বত্রিশের দেবশ্রী ঘোষ দালালের মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ হবে, তা কল্পনা করতে পারেননি কেউ।
হোমগার্ডদের থ্রি নট থ্রি সার্ভিস রাইফেল দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে কৃষ্ণনগর পুলিশ লাইনে সেই সার্ভিস রাইফেল নিয়ে গুলি ভরছিলেন দেবশ্রী ও তাঁর কয়েক জন সহকর্মী। আচমকা টেবিলের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা এনভিএফ কর্মী মিঠুন মীরের রাইফেল থেকে একটি গুলি ছিটকে এলে লাগে দেবশ্রীর রাইফেলের বাঁটে। সেখান থেকে ছিটকে দেবশ্রীর হাত ছুঁয়ে ঢুকে যায় তাঁর পেটে। লুটিয়ে পড়েন তিনি।
মুহূর্তের মধ্যে গোটা বিষয়টি ঘটে যাওয়ায় প্রথমে থতমত খেয়ে যান অন্য সহকর্মীরা। গুলির শব্দ শুনে ছুটে আসেন পুলিশ লাইনের ভিতরে থাকা অন্যরাও। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় দেবশ্রীকে। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দেবশ্রীর এক সহকর্মী শেফালি বিশ্বাস বলছেন, “আমরা সবাই নিজেদের মতো করে গুলি ভরছিলাম রাইফেলে। হঠাৎ একটা গুলির শব্দ শুনি, তার পরই তাকিয়ে দেখি দেবশ্রী মাটিকে পড়ে গিয়েছে। আমাকে দেখে শুধু তিনটি শব্দ বলতে পেরেছিল—‘‘আমার মেয়েটাকে দেখিস।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার একে নিছক দুর্ঘটনা বলে দাবি করেছেন। তিনি বলছেন, “এটি একটা দুর্ঘটনা। তবে ঠিক কী ভাবে তা ঘটল তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” মিঠুনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪-এ ধারায় গাফিলতির ফলে প্রাণহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মিঠুন দাবি করেছেন যে, তিনি নিয়ম মেনেই গুলি ভরছিলেন। কী ভাবে গুলিটা রাইফেল থেকে বেরিয়ে গেল তিনি বুঝতে পারছেন না।
বছর দু’য়েক আগে কোতোয়ালির দিগনগরের বাসিন্দা দেবশ্রীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল শান্তিপুরের পুইপাড়ার বাসিন্দা অমিত দালালের। তাঁদের একটি এগার মাসের মেয়েও আছে। শান্তিপুর পুঁইপাড়া এলাকায় তিনি থাকতেন। বৃহস্পতিবার সেখান থেকেই কৃষ্ণনগর পুলিশ লাইনে এসেছিলেন। সার্ভিস রাইফেল নেওয়ার পর সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ একে দুর্ঘটনা বললেও একে কেন্দ্র করে ক্রমশ রহস্য দানা বাঁধছে। উঠছে একের পর এক প্রশ্ন।
যেমন, থ্রি নট থ্রি রাইফেলে ম্যাগাজিন লোড করার পরে বোল্ট না-টানলে কোনও ভাবেই গুলি বের হওয়ার কথা না। তা হলে এ ক্ষেত্রে গুলি বের হল কী করে? মিঠুন কি তা হলে বোল্ট টেনেছিলেন?
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানাচ্ছেন, ম্যাগাজিন না খুলে বোল্ট টেনেই গুলি ভরছিলেন মিঠুন। তখনই কোনও ভাবে একটা গুলি ব্যারেলের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। তার পর যেই তিনি ব্যারেলটি ছেড়েছেন তখনই অনেকটা ট্রিগার টেপার মতো অভিঘাত হয়েছে এবং নল থেকে গুলি ছিটকে বেরিয়ে দেবশ্রীর শরীরে ঢুকে গিয়েছে।
মিঠুনের সহকর্মীরা অবশ্য অভিযোগ করেছেন, স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি একটু কম ছিল মিঠুনের। তার ফলেই এমন কাণ্ড ঘটেছে কিনা খতিয়ে দেখা হোক। মিঠুনের বাবা মান্নান মীরও বলেছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই ওর বুদ্ধি একটু কম। আমি আগাম অবসর নেওয়ায় চাকরিটা ও পেয়েছে। পুলিশের ব্যায়ামাগারে ওর ডিউটি থাকত।’’ ফলে প্রশ্ন উঠছে, মানসিক সমস্যাযুক্ত কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র কী করে তুলে দেওয়া হয়।