হাতছুট খুদেরা, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত

গত পাঁচ বছরে নানা ঘটনায় প্রগাঢ় ছাপ পড়েছে জনজীবনে। কখনও খুশি, কখনও ক্ষোভ, কখনও আশঙ্কা দুলিয়ে দিয়েছে দেশকে। ভোটের মুখে কতটা ফিকে সেই সব ছবি, কতটাই বা রয়ে গিয়েছে পুরনো ক্ষতের মতো? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ১২:০১
Share:

মৃত জ্যোৎস্না দাস। নিজস্ব চিত্র

দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে ট্রেন। সে দিকে খেয়াল নেই। রেললাইনের উপর দিয়ে দৌড় দিল দু’টো বাচ্চা। তা দেখে তাদের পিছু পিছু দৌড় দিলেন এক মাঝবয়সী মহিলা। বাচ্চা দু’টো কোনও মতে রেললাইন পার হয়ে গেলেও পারলেন না ওই মহিলা। ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়লেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কৃষ্ণনগরের বেলডাঙা রেলগেটের কাছে। মৃতার নাম জ্যোৎস্না দাস (৫০)। বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের মহম্মদপুর এলাকায়।

Advertisement

ওই দুই বাচ্চার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে জ্যোৎস্না কৃষ্ণনগরের বেলডাঙার সুমিত পাল নামে এক পুলিশকর্মীর বাড়িতে থেকে পরিচারিকা হিসেবে যোগ দেন। সুমিতের স্ত্রী শিপ্রাও পুলিশ চাকরি করেন। তিনি কৃষ্ণনগর ট্রাফিকে কর্মরত। দু’জনেই চাকরি করায় দিনের বেশির ভাগ সময় তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র গুঞ্জন ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সোনাক্ষী জ্যোৎস্নার কাছেই থাকত। দু’জনেই জ্যোৎস্নাকে দিদুন বলে ডাকত।

প্রত্যক্ষদর্শী ও রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন চড়কের মেলা দেখে ওই দুই বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন জ্যোৎস্না। ঘুর পথে না গিয়ে রেললাইন পার হয়ে বাড়ি আসছিলেন। সেই সময় কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুরগামী একটি ট্রেন আচমকা এসে পড়ে। বাচ্চা দু’টো আগে আগে ছুটছিল। পিছনে পিছনে ওই মহিলা। ওই দুই বাচ্চা ট্রেন আসছে তা খেয়াল করেনি। তাই তাদের ধরতে দৌড় দেন ওই মহিলা। কিন্তু ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন।

Advertisement

যদি গুঞ্জন বলে, “আমরা দিদুনকে বলেছিলাম যে ট্রেন আসছে। দাঁড়িয়ে যাও। দিদুন শুনল না।” তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বাচ্চা দু’টোকে বাঁচাতে গিয়েই ট্রেনের ধাক্কায় মরতে হল জ্যোৎস্নাকে।

খবর পেয়ে এসেছেন জ্যোৎস্নার একমাত্র মেয়ে সোমা দাস। তিনি জানান, ছোটবেলায় তাঁর বাবা তাঁদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। পরিচারিকার কাজ করে মেয়েকে মানুষ করেছেন। বিয়েও দিয়েছেন। মাঝেমাঝে ছুটি নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যেতেন। কিন্তু বেশি দিন থাকতেন না। তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চা দু’টোকে মা খুব ভালবাসত। বেশি দিন ছেড়ে থাকতে পারত না। এখন তো চিরদিনের জন্য ছেড়ে চলে গেল।” তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা কী ভাবে ঘটল জানি না। তবে বাচ্চা দু’টোর কোনও ক্ষতি মা যে দাঁড়িয়ে দেখতে পারত না তা বলতে পারি।”

ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কৃষ্ণনগর জিআরপি থানার পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন