দু’মাস পরে ঘরে ফিরলেন রঞ্জনা

সকাল থেকে সময়টা আর যেন কাটতে চাইছিল না তাঁর। হাসপাতালের গত দু’মাসের চেনা চৌখুপ্পি থেকে বারবার এসে দাঁড়াচ্ছিলেন চিলতে বারান্দাটায়। দুপুর গড়িয়ে দিনের আলো যখন কমে আসছে একটু একটু করে, হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ খেলে গেল মাঝবয়েসি রঞ্জনা হালদারের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

ছেলের সঙ্গে রঞ্জনা।— নিজস্ব চিত্র

সকাল থেকে সময়টা আর যেন কাটতে চাইছিল না তাঁর। হাসপাতালের গত দু’মাসের চেনা চৌখুপ্পি থেকে বারবার এসে দাঁড়াচ্ছিলেন চিলতে বারান্দাটায়। দুপুর গড়িয়ে দিনের আলো যখন কমে আসছে একটু একটু করে, হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ খেলে গেল মাঝবয়েসি রঞ্জনা হালদারের।

Advertisement

কিন্তু, পরক্ষণেই দপ করে নিভে গেল আলো। গ্রিলের অন্য পাড়ে মাঝবয়সি সনাতন হালদার যখন এসে দাঁড়ালেন, রঞ্জনার চোখে জল।

স্বামীর হাত ধরে বললেন, “কি চেহারা হয়েছে তোমার? দু’দিন বাড়ির বাইরে এসেছি, অমনি শরীরের অযত্ন করতে শুরু করেছে!” কী বলবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না সনাতন। আর তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে ছিল বছর উনিশের আকাশ— রঞ্জনা-সনাতনের ছেলে।

Advertisement

মঙ্গলবারের বিকেলে শক্তিনগর হাসপাতাল সাক্ষী হয়ে তাকল এমনই এক আবেগঘন দৃশ্যের। এদিন স্বামী সন্তানের হাত ধরে দু’মাস পর বাড়ি ফিরলেন লালবাগের রঞ্জনা।

২৩ জুন দুপুরে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলেন রঞ্জনাদেবী। তার পর থেকে নিখোঁজ। পরদিন কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যায় কিছু যুবক। মাথায় ও পায়ে আঘাত ছিল গুরুতর। সেই আঘাত সেরে যাওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় মানসিক বিভাগে।

চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। স্মৃতিও ফিরে পান। তাঁর কাছ থেকে ঠিকানা জানার পরে পুলিশের মাধ্যমে খবর পৌঁছয় তাঁর লালবাগের বাড়িতে। খবর পেয়েই রঞ্জনাদেবীকে নিতে আসেন স্বামী ও ছেলে। প্রথম বর্ষের ছাত্র আকাশ জানায়, অনেক দিন ধরেই তার মায়ের মানসিক সমস্যা ছিল। চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু ওষুধ খেতে চান না মোটেই। হাসপাতালের শয্যায় মায়ের পাশে বসে সে বলে, ‘‘তবে, বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেও কিছুক্ষণ পরই ফিরে আসত। গত দু’মাস আমরা পাগলের মত মাকে খুঁজেছি।”

ছেলের কথা মন দিয়ে শুনছিলেন রঞ্জনাদেবী। পরম মমতায় মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন “রাগ করিস না বাবা। পুজোয় ভালো জামা কিনে দেব।” চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিয়মিত ওযুধ খেতে হবে তাঁকে।

ছল ছল চোখে মা-ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, ওই বিভাগের আর এক রোগী দুলালী সাহা। এক সমাজসেবী সংস্থার উদ্যোগে ছেলে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বাড়ি। কিন্তু বছর ঘোরেনি। ‘অত্যাচারে’ ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রতিবেশীরা তাঁকে হাসপাতালেই রেখে যান। তাঁর চোখের সামনে দিয়েই ঘরের পথে পা বাড়ালেন রঞ্জনা। দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে দীপালি বললেন, ‘‘ভাল থাকিস মা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন