রান্নার সময় সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু তরুণীর, বিষাদে বদলে গেল বিয়ের আনন্দ

সাটুই রাজেন্দ্রনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া তনুশ্রীর সঙ্গে পড়শি যুবক পেশায় চপ ব্যবসায়ী রতন পালের বিয়ে ঠিক হয়। আগামী ২ ডিসেম্বর তাঁদের বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

তনুশ্রী নন্দী।

বিয়ের কুড়ি দিন বাকি ছিল। বিয়ের আয়োজন প্রায় সারা হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে আত্মীয়-কুটুম্ব থেকে পাড়া-প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করার কাজ চলছিল। গত কয়েক দিন ধরে ওই বিয়েকে ঘিরে বাড়িতে ছিল খুশির আবহ। রবিবার সকালে আচমকা সেই তার ছিঁড়ে গিয়ে শোকের পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল বাড়ি জুড়ে। এ দিন সকালে রান্না করার সময়ে গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু হয়েছে ‘পাত্রী’র। মৃতের নাম তনুশ্রী নন্দী (১৮)। বাড়ি বহরমপুর থানার ছোট সাটুই গ্রামে। পুলিশ জানায়, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। ঘটনার তদন্ত চলছে।

Advertisement

সাটুই রাজেন্দ্রনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া তনুশ্রীর সঙ্গে পড়শি যুবক পেশায় চপ ব্যবসায়ী রতন পালের বিয়ে ঠিক হয়। আগামী ২ ডিসেম্বর তাঁদের বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল। কিন্তু তার আগে এ দিন সকালে ওই তরুণীর আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে দু’টি পরিবার। ছোটসাটুইতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এ দিন দুর্ঘটনার সময় পাত্র তাঁর আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে গিয়েছিলেন নিমন্ত্রণ কার্ড বিলি করতে। পাত্রীর কাকা রবি নন্দীও গিয়েছিলেন তাঁদের আত্মীয়-পরিজনদের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা দু’জনেই দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: অভিযুক্তেরা অধরাই, হুমকি প্রতিবেশীকেও

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তনুশ্রীর বাবা তামাল নন্দীরা দুই ভাই। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসের চালক তামাল বাড়ির দোতলায় থাকেন। সেই ঘরের বারান্দায় টালির চালি দেওয়া জায়গায় তাঁদের রান্নাঘর। নিচের তলায় ভাই রবি নন্দী তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন। ঘটনার সময় বাড়িতে তাঁরা কেউ ছিলেন না।

তনুশ্রীর মা সুপ্রিয়া নন্দী ও ঠাকুমা সুভদ্রা বাড়ির কাছেই ভাগীরথীতে স্নানে গিয়েছিলেন। এই অবস্থায় এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ির দোতলার রান্নাঘরে গ্যাস সিলিণ্ডার ফেটে গ্যাস গোটা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে এবং দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। ঘর থেকে বের হতে না পেরে পুড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। প্রতাপ জানান, ‘‘তনুশ্রী ভাত রান্নার পরে কড়াইয়ে আলু ভাজছিল। তখন কোনওভাবে গ্যাস লিক করে আগুন ধরে গিয়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। তাতে রান্নাঘরের বিদ্যুতের তার কেটে পড়ে যায়। ফলে ঘর থেকে সে বের হতে পারেনি।’’

বিস্ফোরণের পরে: রবিবার সাটুইয়ে। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

আগুন দেখতে পেয়ে পড়শিরা ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে বহরমপুর থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সুজিত পাল, সাগর বিশ্বাসেরা জানান, স্থানীয়রা আগুন নেভানোর পাশাপাশি তনুশ্রীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুনের তাপে ঘরের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পরে ঘরের ভেতরে যখন ঢোকেন, তত ক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। তনুশ্রীর গায়েও বিদ্যুতের তার জড়িয়েছিল।

শোকস্তব্ধ তনুশ্রী নন্দীর পরিবার। —নিজস্ব চিত্র

পাত্র রতন পাল ও তাঁর বাবা-মা সনাতন পাল ও সুপ্রিয়া পাল খবর পেয়ে তনুশ্রীদের বাড়িতে ছুটে আসেন। রতন কান্নায় ভেঙে পড়েন। রতনের মা সুপ্রিয়া পাল বলেন, ‘‘এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছি না।’’ তনুশ্রীর মা, বাবা, ভাই, কাকা ঘটনার আকস্মিকতায় ভেঙে পড়েছেন। বার বার তাঁরা অচৈতন্য হয়ে পড়ছেন। তাঁরা কোনও কথা বলতে পারেননি।

আরও পড়ুন: কেষ্টপুরের বাড়ি থেকে প্রৌঢ়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন