পাশে দেশির বোতল, মাঠে মৃত্যু যুবকের, চৌধুরীপাড়ায় ফের অঘটন

ফের সেই চৌধুরীপাড়া, ফের সেই মদ খাওয়ার পরে মৃত্যু। তবে এ বার আর চোলাই নয়, দেশি মদ। তবে মৃত্যুর জন্য যে মদই দায়ী, তা-ও পুলিশ হলফ করে বলতে পারছে না। 

Advertisement

সম্রাট চন্দ 

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

ফের সেই চৌধুরীপাড়া, ফের সেই মদ খাওয়ার পরে মৃত্যু। তবে এ বার আর চোলাই নয়, দেশি মদ। তবে মৃত্যুর জন্য যে মদই দায়ী, তা-ও পুলিশ হলফ করে বলতে পারছে না।

Advertisement

শীতের শুরুতে হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌধুরীপাড়া এলাকাতেই বিষমদে মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের। অসুস্থও হন অনেকে। বৃহস্পতিবার ভোরে সেই গ্রামেই মাঠে একটি মাচার নীচে মিলল এক যুবকের দেহ। মৃতের নাম দীপক মাহাতো (২৩)। বাড়ি ওই গ্রামেই। কাছেই একটি দেশি মদের বোতল ও কয়েকটি গ্লাস পড়ে ছিল। গায়ের গরম পোশাক ছিল না। জামা পড়ে ছিল পাশে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, প্রবল ঠান্ডায় খোলা মাঠে পড়ে থাকায় হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে। শান্তিপুর থানার পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীপক সে ভাবে কোনও কাজকর্ম করতেন না। মাঝে-মধ্যে বাবার সঙ্গে মাঠে দিনমজুরের কাজ করতে যেতেন। নিয়মিত মদ্যপান করতেন। অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। আর ফেরেননি। তাঁদের বাড়ির কাছেই একটি মেলা চলছে। তাঁকে সে দিকেই যেতে দেখা গিয়েছিল। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন সেই দিকেই খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু তাঁর খোজ মেলেনি। এ দিন সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মাঠের মধ্যে তাঁর দেহ দেখতে পান এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে দীপক ছিলেন ছোট। তাঁর দাদা রঞ্জন মাহাতো উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে থাকেন, একটি কারখানায় কাজ করেন। অবিবাহিত দীপক বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। বাবা রামপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “ও অসুস্থ, দুর্বল ছিল। প্রায়ই মদ খেত। তবে বুধবার বাড়িতে বসে মদ খায়নি। অন্য কোথাও করেছিল।” দীপকের এক সম্পর্কিত ভাইঝি আশা মাহাতো বলেন, “কাকা বুধবার সারা দিন কিছু খায়নি। খালি পেটে সকাল থেকেই মদ খেয়েছে, সেটা টের পেয়েছি। দুপুরেও অনেক বার খেতে বললাম, খায়নি।”

পুলিশের অনুমান, বাড়ির কাছে মাঠে বসে দেশি মদ খেয়েছিলেন দীপক। পরে পাশের মাচায় উঠে বসা বা শোওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তখনই কোনও ভাবে নীচে পড়ে যান। দেশি মদের বোতলটি পূর্ব বর্ধমানের কালনার দিকে কোনও দোকান থেকে কেনা হয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। কয়েকটি গ্লাস পাওয়া গেলেও সেগুলি ওই রাতেই ব্যবহৃত না পুরনো তা বুঝে উঠতে পারেনি পুলিশ। ফলে দীপকের সঙ্গে বসে আরও কেউ মদ খেয়েছিল কি না, সেটাও স্পষ্ট হয়নি।

এই ঘটনার সঙ্গে চোলাই মদের কোনও যোগাযোগ না থাকলেও এলাকায় নজরদারি নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই চৌধুরীপাড়া গ্রামে ঢোকার মুখে এবং ভাগীরথীর তীরে নৃসিংহপুর ঘাটে পুলিশ নজরদারি চালিয়ে আসছে, যাতে অন্য এলাকা থেকে চোলাই খেয়ে বা নিয়ে কেউ গ্রামে ঢুকতে না পারেন। তবে গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা যে এখনও নেশায় আসক্ত তা বলছেন প্রায় সকলেই।

চৌধুরীপাড়ার পুরুষেরা আগে কাজের ফাঁকেই চোলাইয়ের ঠেকে চলে যেতেন। এখন চোলাইয়ের বদলে কালনা বা হরিপুরের অনুমোদিত দোকান থেকে দেশি মদ কিনে খাচ্ছেন অনেকে। গ্রামের আশা মাহাতো, শ্যামলী মাহাতোরা বলেন, “পুরুষেরা অনেকেই গ্রামের বাইরে থেকে দেশি মদ খেয়ে আসছেন।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বীরেন মাহাতো বলেন, “গ্রামের মানুষকে সচেতন করার জন্য অনেক চেষ্টা হচ্ছে। কড়াকড়িও করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন