অকাল ভাইফোঁটার আয়োজন বহরমপুরের ‘বিশেষ’ পড়ুয়াদের

রামায়ণে বর্ণিত দেবী দুর্গার অকাল বোধনের মতোই এ যেন অকাল ভাইফোঁটা। পঞ্জিকার তিথি মেনে শাস্ত্র মতে বাংলার ঘরে ঘরে ভাইফোঁটা হয়ে গিয়েছে গত শনিবার। কিন্তু তখন তো পুজোর ছুটি থাকায় বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তারপর স্কুল খোলার পরে বৃহস্পতিবার বহরমপুর শহরের মহারানি নীলিমাপ্রভা মূক ও বধির বিদ্যালয়ের ১১৮ জন ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের মায়েরা যোগ দিয়েছিলেন ভাইফোঁটায়।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩১
Share:

চলছে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র।

রামায়ণে বর্ণিত দেবী দুর্গার অকাল বোধনের মতোই এ যেন অকাল ভাইফোঁটা। পঞ্জিকার তিথি মেনে শাস্ত্র মতে বাংলার ঘরে ঘরে ভাইফোঁটা হয়ে গিয়েছে গত শনিবার। কিন্তু তখন তো পুজোর ছুটি থাকায় বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তারপর স্কুল খোলার পরে বৃহস্পতিবার বহরমপুর শহরের মহারানি নীলিমাপ্রভা মূক ও বধির বিদ্যালয়ের ১১৮ জন ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের মায়েরা যোগ দিয়েছিলেন ভাইফোঁটায়। ধান, দুর্বা, দই, মিষ্টি, উপহার ও শঙ্খধ্বনি সহযোগে ওই অকাল ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার, বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপ দত্ত, মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস, বিডিও বণর্মালা রায় ও উপ-পুরপ্রধান মৈনুদ্দিন চৌধুরি বাবলা-সহ বিশিষ্টজনেরা।

Advertisement

এ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দু’টি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় মূক ও বধির দুই ছাত্রের মূকাভিনয় দিয়ে। মূকাভিনয়ের মাধ্যমে তারা তুলে ধরে বৃক্ষনিধনের কুপ্রভাব ও সবুজায়নের সুফল। বধিরতার কারণে ওই অনুষ্ঠানের বক্তাদের বক্তব্য ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে শোনা সম্ভব নয়। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে বক্তার পাশে দাঁড়িয়ে একই সঙ্গে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে সেই বক্তব্য ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দেন বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষক। প্রধানশিক্ষক অর্কনারায়ণ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন ৮০ বছরের প্রাচীন ওই বিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্দশার কথা। পরে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন সভাধিপতি, অতিরিক্ত জেলাশাসক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

কাশিমবাজারের মহারাজার দান করা ১০ বিঘা জমির উপর ১৯৩৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ওই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তার আগে রাজ্যের মধ্যে কেবল কলকাতার রাজাবাজারেই একটি মূক ও বধির বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ বয়সের বিচারে বহরমপুরের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় প্রাচীন মূক ও বধির বিদ্যালয়। প্রাক প্রাথমিক স্তরে ৪টি ও প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত আরও ৪টি মিলে মোট ৮টি শ্রেণিতে লেখাপড়া করে ১১৮ জন ছাত্রছাত্রী। শিক্ষকশিক্ষিকা ৯ জন। সেই বিদ্যালয়ের প্রাচীন ভবনের জরাজীর্ণ দশা। প্রধানশিক্ষক বলেন, “একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে সম্প্রতি স্কুলে জলের পাইপ লাইন এসেছে। মিড ডে মিলে সপ্তাহে দু’ দিন ডিম দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু আর্থিক দুরাবস্থার কারণে এই স্কুলের ঐতিহাসিক ঝুলন ও রাখি উৎসব কয়েক বছর ধরে বন্ধ। একই কারণে বন্ধ রয়েছে বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও।”

Advertisement

তারপরই খুলে যায় প্রতিশ্রুতির ঝাঁপি। বাৎসরিক ক্রীড়ানুষ্ঠানের দায়িত্ব নেয় ওই দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আগামী ৩ ডিসেম্বর বাৎসরিক ক্রীড়ানুষ্ঠান হবে বলেও ঘোষণা করা হয় ওই সংস্থা দু’টির পক্ষ থেকে। অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “ঝুলন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ভাল ভবন ভেঙে গিয়েছে। দ্রুত ভবন তৈরি করা হবে। তার জন্য দেড় কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।” বছর তিনেক থেকে এই বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি নেই। সেই প্রসঙ্গ তুলে মহকুমাশাসক বলেন, “মূক ও বধির শিশুদের লালন পালন করেন তাদের মা। ফলে এই বিদ্যালয়ের ৩ জন অভিভাবিকা প্রতিনিধি নিয়ে দ্রুত পরিচালন সমিতি গড়ে ফেলুন।” তাঁর বক্তব্যে হেলেন কেলারের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে পড়ুয়াদের অনুপ্রাণিত করেন বিডিও বর্ণমালা রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন