অবৈধ পার্কিং, হকারদের দাপটে ফুটপাথ উধাও

‘রাস্তা তুমি কার?’ এমন প্রশ্নের উত্তর যদি বহরমপুরের বেচারি ফুটপাথ দিতে পারত, তাহলে বলত, ‘আর যাই হোক পথচারীদের নয়।’ হকারদের ঝুপড়ি, স্থায়ী দোকানের বর্ধিত অংশ, গাড়ির পার্কি মুর্শিদাবাদের জেলাসদর বহরমপুরে ফুটপাথ জুড়ে বিরাজ শুধু এদেরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০০:৪০
Share:

দোকানের পসরা উঠে এসেছে ফুটপাথেও (বাঁ দিকে)। রাস্তার এক ধারে অবৈধ পার্কিং (ডান দিকে)। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের ছবি।

‘রাস্তা তুমি কার?’

Advertisement

এমন প্রশ্নের উত্তর যদি বহরমপুরের বেচারি ফুটপাথ দিতে পারত, তাহলে বলত, ‘আর যাই হোক পথচারীদের নয়।’ হকারদের ঝুপড়ি, স্থায়ী দোকানের বর্ধিত অংশ, গাড়ির পার্কি মুর্শিদাবাদের জেলাসদর বহরমপুরে ফুটপাথ জুড়ে বিরাজ

শুধু এদেরই।

Advertisement

গত কয়েক বছরে বহরমপুরে শহরে লোকসংখ্যা বেড়েছে বহু গুণ। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। সেই তুলনায় বহরমপুরে নতুন কোনও রাস্তা তৈরি হয়নি। উল্টে যে রাস্তাগুলি রয়েছে, তা-ও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তার উপরে শহরের রাস্তায় নিয়ন্ত্রণহীন রিকশার দাপট ও মোটর বাইকের দাপট ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কোথাও রাস্তা দখল করে চার চাকা দাঁড় করিয়ে ‘পার্কিং ফি’ নেওয়ার ব্যবসা চলছে। কোথাও আবার রাস্তার অর্ধেক জায়গা জুড়ে সারি দিয়ে রয়েছে ফলের দোকান।

যেমন, শহরের জনবহুল ও ব্যস্ততম রাস্তা বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গির্জার মোড় পর্যন্ত বাস-লরি থেকে বিভিন্ন দু’চাকা ও চার চাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েই থাকে।

বহরমপুরের প্রাণকেন্দ্র গ্রান্ট হল মোড়ে সকাল থেকে বিভিন্ন ফলের ডালা সাজিয়ে বসেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী। ওই মোড়ের মাথায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে সারের দোকান, সোনার দোকান, বিভিন্ন গ্যাজেট ও ঘর সাজানোর উপকরণের শো-রুম। সেখানে যাঁরা আসেন, তাঁরা রাস্তার উপরেই যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করা যায় না ওই পথে।

এর মধ্যে রানিবাগান পিলখানা রোডে সারি দিয়ে চার চাকা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে একচেটিয়া ‘গাড়ি ভাড়া’ দেওয়ার ব্যবসা চলছে।

বাসস্ট্যান্ড থেকে টেক্সটাইল কলেজ মোড়ের রাস্তা পার হতে গিয়ে সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় পথচারীদের। রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে ফলের দোকান থেকে চশমা-ডিভিডি দেদার বিক্রি হচ্ছে। রাস্তায় বিছিয়ে বিক্রি হচ্ছে পুরনো বইও।

তেমনই কাদাইয়ের নজরুল হোম থেকে কল্পনার মোড় পর্যন্ত ফুটপাথের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে দোকানের সামগ্রী বাইরে সাজিয়ে রাখেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ফুটপাথ চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

বহরমপুরের নাগরিক সমিতির সহ-সভাপতি তথা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিষাণ গুপ্ত বলেন, “বাবার কাছ থেকেই শুনেছি, ১৯৩৬ সালে প্রথম নিমতলা মোড় থেকে গির্জার মোড় পর্যন্ত বহরমপুরে পিচ রাস্তা তৈরি হয়। এখন নাটাতলা মোড় থেকে ওই নিমতলা মোড়ের দিকে যাওয়ার রাস্তা গরুর অবাধ বিচরণক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে।” তাঁর অভিযোগ, “ব্যবসার স্বার্থে যেমন হকার ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে নিচ্ছে, তেমনই বহুতল আবাসন নির্মাণের জন্য পাথর-বালি-ইট ফেলে রেখেও একশ্রেণির ঠিকাদার রাস্তা দখল করছে। পুরসভা কেন চোখ বন্ধ করে রয়েছে, জানি না।”

পুরপ্রধান বলেন, “রাস্তা বা ফুটপাথ দখল করে দোকানের সামগ্রী বাইরে না রাখার আবেদন জানিয়ে মাইকে প্রচার চালানো হয়। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সও বাতিল করা হতে পারে।” যদিও পুর-কর্তৃপক্ষের ওই ‘হুমকি’ অবস্থার কোনও পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি।

চেম্বার অফ কমার্সের জেলা সভাপতি অজয় সিংহ বলেন, “ফুটপাথ বা রাস্তা অধিগ্রহণ করে দোকানের সামগ্রী রেখে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের সচেতনতার অভাবে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। প্রশাসন বা পুরসভার উচিত অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।” ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁর আবেদন, “যাঁরা এই ধরণের আচরণ করছেন, তাঁরা নিজেদের দোকান ঘরের মধ্যেই পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে ব্যবসা করুন।”

এত কথা শুনছে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন