অভাবে হার না মেনে হার ফেরত সাধনের

স্ত্রী, পুত্রকে নিয়ে দিনভর মায়াপুরে বেড়িয়ে রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছিলেন স্কুল শিক্ষক খায়ের শেখ। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই মাথায় হাত! গলার দেড় ভরি সোনার হারটা গেল কোথায়? জামার পকেট, ব্যাগপত্তর তন্নতন্ন করে খুঁজেও হারের দেখা নেই। স্ত্রী আবিদা সুলতানারও বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। “গাড়িতে ফেলে আসোনি তো?” স্ত্রীর মুখে কথাটা শুনতেই খায়ের আর দেরি করেননি।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৬:২৮
Share:

সাধন মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

স্ত্রী, পুত্রকে নিয়ে দিনভর মায়াপুরে বেড়িয়ে রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছিলেন স্কুল শিক্ষক খায়ের শেখ। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই মাথায় হাত! গলার দেড় ভরি সোনার হারটা গেল কোথায়? জামার পকেট, ব্যাগপত্তর তন্নতন্ন করে খুঁজেও হারের দেখা নেই। স্ত্রী আবিদা সুলতানারও বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। “গাড়িতে ফেলে আসোনি তো?” স্ত্রীর মুখে কথাটা শুনতেই খায়ের আর দেরি করেননি। তড়িঘড়ি পকেট থেকে মোবাইল বের করে সটান ফোন গাড়ির চালক সাধন মণ্ডলকে। খায়ের বলেন, “ফোনটা করে হারের কথাটা বলতেই উনি ‘দাঁড়ান দেখছি’ বলে ফোনটা কেটে দেন। তারপর মিনিট কয়েকের মধ্যে সাধনবাবুই ফোন করে জানান যে হারটা গাড়ির সিটের নীচে পড়ে ছিল। আমি গিয়ে হারটা নিয়ে আসি। সাধনবাবুকে কী বলে যে ধন্যবাদ জানাব, বুঝতে পারছি না।”

Advertisement

তেহট্টের নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের শিক্ষক খায়েরবাবু করিমপুরের বাজিতপুরের বাসিন্দা। রবিবার করিমপুরেরই একটি গাড়ি ভাড়া করে তিনি সপরিবারে মায়াপুরে গিয়েছিলেন। স্ত্রী আবিদা সুলতানা বলছেন, “ভাবতেই পারিনি হারটা ফেরত পাব। ওই গাড়ির চালকের সততার কথা আমাদের সারা জীবন মনে থাকবে।”

যাঁকে নিয়ে এত কথা সেই গাড়ির চালক সাধন মণ্ডল অবশ্য নির্বিকার মুখে বলেন, “এটা নিয়ে এত হইচই করার কী আছে? আমি আমার কর্তব্যটুকু করেছি মাত্র।” করিমপুর কলেজপাড়ায় দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সাধনবাবুর এক চিলতে সংসার। অন্যের গাড়ি চালিয়ে আয়ও তেমন আহামরি কিছু নয়। সেই কবে স্ত্রী আবদার করেছেন একটা সোনার হারের। অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে করতে সে টাকা আজও জমানো হয়নি। সাধনবাবু বলেন, “আজ প্রায় তেরো বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি। অভাব রয়েছে ঠিকই। তাই বলে অভাবের কাছে হার মেনে অসৎ হতে পারব না। মেহনতের টাকায় স্ত্রীর জন্য সোনার হার এক দিন নিশ্চয় কিনব।” নদিয়ার ছোট গাড়ি চালক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সাহা বলেন, “গাড়ি চালাতে গেলে সতর্কতা ও সাবধানতার পাশাপাশি সততাও জরুরি। সাধন সেটাই মনে করিয়ে দিল।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন