অভিষেকের সভা জমজমাট, স্বস্তি তৃণমূলে

বড়নীলপুরের চৌরঙ্গি মাঠের পর বাদকুল্লার অনামী ক্লাবের মাঠ। তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার উপচে-পড়া ভিড় দিয়ে বহু সমালোচকের জবাব দিল তৃণমূল। দুপুর থেকে বাস ও গাড়ি বোঝাই করে এসে তৃণমূল সমর্থকেরা সভার মাঠে ভিড় করতে থাকেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আসেন, মাঠ তখন কার্যত মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে। বাড়ির ছাদে, গাছের ডালে ভিড় জমিয়েছেন মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৭
Share:

বড়নীলপুরের চৌরঙ্গি মাঠের পর বাদকুল্লার অনামী ক্লাবের মাঠ। তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার উপচে-পড়া ভিড় দিয়ে বহু সমালোচকের জবাব দিল তৃণমূল। দুপুর থেকে বাস ও গাড়ি বোঝাই করে এসে তৃণমূল সমর্থকেরা সভার মাঠে ভিড় করতে থাকেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আসেন, মাঠ তখন কার্যত মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে। বাড়ির ছাদে, গাছের ডালে ভিড় জমিয়েছেন মানুষ।

Advertisement

বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, অভিষেকের সঙ্গে অভিনেতা হিরণকে দেখতেই ভিড় জমিয়েছিলেন লোকে। তাতে তৃণমূলের এক জেলা নেতার পাল্টা জবাব, “গায়ক, অভিনেত্রী এনে বিজেপি যে ভাবে জনসভাগুলিতে এতদিন বাজি মাত করে এসেছে, তাতে সাধারণ মানুষ ভুল বুঝতে শুরু করেছিলেন। সভায় ভিড় দেখে তাঁরা ভাবতে শুরু করেছিলেন বিজেপির বুঝি শক্তি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।”

তৃণমূল যে রাজনৈতিক সংগঠনে ভোটের ময়দানে বিরোধীদের চাইতে অনেকটাই এগিয়ে, তা নিয়ে কৃষ্ণগঞ্জে তেমন সন্দেহ নেই কারও। জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত তাঁর সাংগঠনিক কৌশলে দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে মাথা তুলতে দেননি, বিরোধীদেরও বিশেষ জমি ছাড়েননি। কিন্তু পরপর কয়েকটি জমজমাট জনসভা, রোড শো করে শাসকদলকে খানিকটা চাপে ফেলে দিয়েছিল বিজেপি।

Advertisement

গত দিনদুয়েকে বাবুল সুপ্রিয়, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রোড শো’, কিংবা কুমার শানুর সভায় মানুষের উপচে পড়া ভিড় খানিকটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল তৃণমূলকে। তাই মঙ্গলবারের সভায় মাঠ ভরানোর একটা‌ তাগিদ প্রথম থেকেই ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। সেই মতো বিধানসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগঠিত ভাবে লোক আনার উদ্যোগ নেন তাঁরা। এবং দিনের শেষে দেখিয়ে দেন, তাঁরা সফল।

জেলা তৃণমূূলের অবশ্য দাবি, এটা যদি কেউ ভাবেন যে, বিজেপি-র দেখাদেখি তারাও তারকা নিয়ে এসে লোক টানছে, তাহলে ভুল ভাবা হবে। কারণ তৃণমূলে তারকার কোনও অভাব নেই। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, “বিজেপি যাঁদের নিয়ে এসেছে তাঁদের এখন পড়তি বাজার। আমরা চাইলে একের পর এক স্টার নিয়ে আসতে পারি। যাঁরা এখনও তাঁদের জগতে স্বমহিমায় রয়েছেন। কিন্তু আমরা তা করিনি।” ওই নেতা জানান, স্টার এনে লোক জমানোর থেকে জয়ের ব্যবধান বাড়ানোটাই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবং তৃণমূল সেই কাজটা কার্যত নিঃশব্দে অনেক আগে থেকেই শুরু করেছে।

কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী সত্যজিত্‌ বিশ্বাস বলছেন, “এখানে আমরাই জিতছি, এই নিয়ে কারও কোনও সংশয় থাকার কথা নয়। অন্যরা কোন যুক্তিতে জেতার কথা বলছেন তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।” তাঁর যুক্তি, “এই বিধানসভার দু’টো পঞ্চায়েত সমিতি আমাদের দখলে। ১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩টিই তৃণমূলের। এই এলাকা আমাদের হাতের তেলোর মতো চেনা। গত কয়েকদিনে এলাকা চষে ফেলেছি। কর্মীরাও বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এরপরেও আর কী বলার থাকতে পারে!”

বিরোধীদের একাংশও মনে করছেন, বিধানসভা উপনির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে থেকেই বেশ কয়েকটি ইস্যুতে তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে ‘ঘায়েল’ করা যেত। নদিয়ার চৌমুহা গ্রামে তৃণমূলের সাংসদ তাপস পালের কু-কথা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছিল সারা দেশে। সারদা-কাণ্ড নিয়ে রাজ্যে শাসক দল রীতিমতো কোনঠাসা। সম্প্রতি কৃষ্ণগঞ্জ বিধাসভা এলাকারই ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখলকে কেন্দ্র করে গুলিতে নিহত হয়েছিলেন এক মহিলা। জখম হয়েছিলেন আরও তিন জন। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল তৃণমূলের। অথচ এর কোনওটাতেই তেমন ভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারেনি বিরোধীরা।

প্রত্যয়ের সুর তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের। বলছেন, “বিজেপি-র এই কাণ্ডকারখানা দেখে আগেই তো বলে দিয়েছি, ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি। দিল্লির ফলাফলের পরেও ওঁরা মানুষের সামনে দাঁড়াবেন কী করে! জয় নিয়ে আমরা কোনও ভাবেই ভাবিত নয়। আমাদের চ্যালেঞ্জ, জয়ের ব্যবধান বাড়ানো।”

এদিন বাদকুল্লায় প্রধান বক্তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা হিরণ আর গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। এ দিন রামপুরহাটে মমতা যে ভাবে বিজেপিকে আক্রমণ করেন, সেই একই সুরে প্রথম থেকেই অভিষেক বিজেপি বিরুদ্ধে সুর চড়ান। বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লিতে বিজেপির ধরাশায়ী হওয়ার ঘটনাকে তিনি বিদ্রুপ করে বলেন, “দিল্লিতে তিনজন বিধায়ক। মোটর বাইকে করেই তাঁরা বিধানসভায় যেতে পারবেন।” এ দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরেও হিরণ এসে না পৌঁছনোয় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেলেন তৃণমূল নেতারা। তবে হিরণ এসে পরিস্থিতি সামলে নেন। ‘যুবরাজের’ সভায় ভিড় না হলে জেলা নেতাদের মাথায় যে কোপ পড়ত তা জেলা নেতারা ভাল করেই জানতেন। সেই কারণে কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠ ভরাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল নেতারা।

এর আগেও রবিবার কৃষ্ণগঞ্জে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সির মিছিল ও সভায় যথেষ্ট ভিড় হয়েছিল বলে তৃণমূলের দাবি। এ জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত তৃপ্তির হাসি হেসে বলেন, “মাজদিয়ার পরে বাদকুল্লায় মানুষের উপস্থিতি আবারও প্রমাণ করে দিল, যে তাঁদের সমর্থন আমাদের সঙ্গেই আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন