২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প খাতে রাজ্য সরকারের কাছে মুর্শিদাবাদ পুরবোর্ডের পাওনা প্রায় ২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু বছর খানেক ধরে ওই বকেয়া অর্থ রাজ্য সরকার দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। পুর-কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, মুর্শিদাবাদ পুরসভা যেহেতু কংগ্রেসের দখলে রয়েছে, তাই ‘প্রতিহিংসাবশত’ তৃণমূল সরকার গত প্রায় এক বছর ধরে ‘অর্থনৈতিক অবরোধ’ করে রেখেছে। অন্য দিকে জেলা প্রশাসনের পাল্টা দাবি, এক খাতের অর্থ অন্য খাতে খরচ করার ফলে পুরবোর্ড সঠিক হিসেবে জমা দিতে পারেনি। তাই বরাদ্দ মেলেনি। কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড আর তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের এই চাপানউতোরে মুর্শিদাবাদ পুরসভায় থমকে উন্নয়ন।
এমন অবস্থায় পুরভোটের মুখে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক অবরোধ’-এর অভিযোগ তুলে গত মঙ্গলবার লালবাগ মহকুমা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় লালবাগ শহর কংগ্রেস কমিটি। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদের কাউন্সিলর বিপ্লব চক্রবর্তী জানান, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে পুরবোর্ড প্রায় ১৪ কোটি টাকার বাজেট তৈরি করে। ওই বাজেটের মধ্যে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প খাতের টাকাও খরচ হিসেবে ওই বাজেটে ধরা ছিল। সেই মতো রাজ্য সরকারের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ শুরুও হয়। কিন্তু বকেয়া অর্থ রাজ্য সরকার না দেওয়ায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, “সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে বকেয়া রয়েছে প্রায় ২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা।”
মুর্শিদাবাদ পুরসভায় ১৬টি ওয়ার্ড রয়েছে। বর্তমানে ওই পুরবোর্ডে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ১২, ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি আসনে এবং বাকি ৩টি আসন তৃণমূলের দখলে রয়েছে। ওই ১৬টি ওয়ার্ডের রাস্তা সংস্কার থেকে নতুন রাস্তা নির্মাণ, নিকাশি নালা তৈরি, গরিব মানুষের গৃহ নির্মাণ-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থমকে থাকায় ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন পুর-নাগরিকরা। পুরপ্রধান কংগ্রেসের শম্ভুনাথ ঘোষ বলেন, “এ ভাবে আর কত দিন সুষ্ঠু নাগরিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে বুঝতে পারছি না। অবিলম্বে রাজ্য সরকার বকেয়া অর্থ না দিলে পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হবে।” পুর-এলাকার বিভিন্ন জায়গায় হাই-মাস্ট আলো লাগানো এবং বিভিন্ন রাস্তায় নিয়মিত আলো জ্বালানোর খরচ হিসেবে বিদ্যুতের বিল দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। মেলেনি সেই টাকাও। পুর কতৃর্পক্ষ গোটা বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের জেলা সম্পাদক সন্দীপ রায় ও শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ ধর জানান, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলে ভোটের মুখে সস্তা রাজনীতি করতে চাইছে কংগ্রেস। কংগ্রেস পরিচালিত ওই পুরবোর্ড সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা থেকে এক খাতের টাকা বেআইনি ভাবে অন্য খাতে খরচ করেছে। কিন্তু তার জন্য পুরবোর্ডে যে রেজোলিউসন নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হয়নি। সরকারি অর্থের সঠিক হিসেব দিতে না পারার জন্যই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ ফিনান্স বা ১৩ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা খাতের টাকা এলাকার উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে খরচ করার কথা বলা হলেও মুর্শিদাবাদ পুরবোর্ড সেই টাকা অস্থায়ী কর্মীদের বেতন ও পেনশনের কাজে ব্যবহার করেছে। স্টেট ফিনান্স খাতের টাকাও ঠিকাদারদের বকেয়া মেটাতে খরচ করেছে। এছাড়া পুরসভায় যে সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মী রয়েছে, তাদের বেতনের ১৫ শতাংশ দিতে হয় পুরসভাকে। সেই টাকা দিতে গিয়ে প্রায় সাত লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেছে। একই ভাবে কর্মীদের গ্র্যাচুইটির টাকা ও সাফাই কর্মীদের টাকাও অন্য খাত থেকে খরচ হয়েছে।
লালবাগের মহকুমাশাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অন্য খাতে টাকা খরচের অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসারকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পুরপ্রধান শম্ভুনাথবাবু বলছেন, “সব পুরবোর্ডই এক খাতের টাকা অন্য খাতে সাময়িক ভাবে খরচ করে থাকে।” তিনি জানান, বছরের শুরুতেই অধিকাংশ কাউন্সিলর বোর্ড অফ কাউন্সিলের বৈঠকে রেজুলিউসন করে এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচের জন্য পুরপ্রধানকে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে। ফলে প্রতি ক্ষেত্রে আলাদা করে আর রেজোলিউসন নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।