আঘাত দেখাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।
বুথ চত্বরে ভিড় করেছে তৃণমূলের লোকজন। ভয় দেখানো হচ্ছে ভোটারদের। খবরটা পাওয়া মাত্রই দু’জন সঙ্গী নিয়ে হাঁসখালির দহরবুইচা গ্রামের ১৪৩ ও ১৮৪ নম্বর বুথে ছুটেছিলেন বিজেপি প্রার্থী মানবেন্দ্র রায়। তাঁর কানে আসা খবরটা যে মিথ্যে নয় তা হাড়েহাড়ে টের পেলেন ঘটনাস্থলে গিয়ে। বুথের প্রায় পঞ্চাশ মিটারের ভিতরে তখন ৬০ থেকে ৭০ জন তৃণমূলকর্মীর ভিড়। গোটা পরিস্থিতি ভাল করে বুঝে নিয়ে তিনি কথা বলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে। তাতে সমস্যার বিশেষ কোনও সুরাহা না হওয়ায় মানবেন্দ্রবাবু কথা বলেন ভোটকর্মীদের সঙ্গে।
বিজেপি প্রার্থীর এতটা ‘স্পর্ধা’ সহ্য হয়নি ওই তৃণমূলকর্মীদের। প্রথমে ওই ভিড় থেকে উড়ে আসতে শুরু করল নানা কটূক্তি। এরপরে একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার পরে মানবেন্দ্রবাবুর গাড়ি তখন সবে বুথ চত্বর পেরিয়েছে। আচমকা ওই ভিড় থেকে জনাকয়েক যুবক এগিয়ে এসে মানবেন্দ্রবাবুর হাতে সজোরে আঘাত করে। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রার্থীর গাড়ি লক্ষ্য করে ধেয়ে এল একটা থান ইট। গাড়িতে না লেগে ইটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ল গাড়ির কাছেই। কোনওমতে গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে প্রার্থী সটান চলে আসেন হাঁসখালি বিডিও অফিসের সামনে। মানবেন্দ্রবাবু বলেন, “অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি। ইটটা গাড়িতে এসে পড়লে কী যে হত ভাবলেই ভয় করছে।” তাঁর কথায়, “ভাবতেই পারিনি যে, তৃণমূল এমনটা করতে পারে। আসলে ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছে। গোটা বিষয়টি পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককে ফোনে জানানো হয়েছে।”
এরই মধ্যে ফের মানবেন্দ্রবাবুর মোবাইলে খবর আসে কালীপাড়ার ১৬৭ ও ১৬৮ নম্বর বুথের কাছেও ভিড় করেছে তৃণমূলের লোকজন। সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাঁর পোলিং এজেন্টকে। বিডিও অফিস থেকে প্রার্থী ফের ছুটলেন সেদিকে। বুথের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে ডেকে পাঠালেন তাঁর পোলিং এজেন্টকে। সেক্টর অফিসারের সঙ্গে কথা বলে এজেন্টকে আবার বুথের ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেন তিনি। এরই মধ্যে খবর এল কাটাখালিতে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপির এক কর্মী। কাটাখালির বুথ থেকে সামান্য দূরে তখন দাঁড়িয়ে প্রায় শ’খানেক তৃণমূল কর্মী। গাড়ি নিয়ে তিনি রাস্তায় ওঠার আগেই ‘গো ব্যাক বিজেপি। গো ব্যাক মানবেন্দ্র রায়’ বলে স্লোগান শুরু করেন তৃণমূলের ওই কর্মীরা। সে দিকে একবার তাকিয়ে জানালার কাচ তুলে দিয়ে প্রার্থী ছুটলেন কাটাখালি।
সেখানে বিজেপির শিবিরে বসার ‘অপরাধে’ এক কর্মীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কল্যাণ মজুমদার নামে ওই বিজেপি কর্মী বিড়ি কিনতে এসেছিলেন তৃণমূলের শিবিরের কাছে একটি দোকানে। সেখানেই তাঁকে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি দোকানও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দোকানের মালিক নির্মল সরকার।