জেলা ছাত্র যুব উত্‌সব

উত্‌সবে ব্রাত্য সাংসদ, পুরপ্রধান

ফের সেই চেনা বিভাজন, ‘আমরা-ওরা’। এবং ঘটনাস্থল সেই বহরমপুর! জেলা ছাত্র-যুব উত্‌সবে ‘ব্রাত্য’ রাখা হল কংগ্রেসকে। সেই ‘অসম্মান’ মেনে নিতে না পেরে ওই উত্‌সব বয়কট করলেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্য সরকারের যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে ৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার থেকে বহরমপুর গার্লস কলেজে ওই উত্‌সব শুরু হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের নেতারা সাদরে আমন্ত্রিত হলেও ডাক পাননি কংগ্রেসের স্থানীয় সাংসদ, বিধায়ক, পুরপ্রধান কেউই। বাদ দেওয়া হয়েছে বাম বিধায়কদেরও।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫১
Share:

ফের সেই চেনা বিভাজন, ‘আমরা-ওরা’। এবং ঘটনাস্থল সেই বহরমপুর!

Advertisement

জেলা ছাত্র-যুব উত্‌সবে ‘ব্রাত্য’ রাখা হল কংগ্রেসকে। সেই ‘অসম্মান’ মেনে নিতে না পেরে ওই উত্‌সব বয়কট করলেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব।

রাজ্য সরকারের যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে ৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার থেকে বহরমপুর গার্লস কলেজে ওই উত্‌সব শুরু হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের নেতারা সাদরে আমন্ত্রিত হলেও ডাক পাননি কংগ্রেসের স্থানীয় সাংসদ, বিধায়ক, পুরপ্রধান কেউই। বাদ দেওয়া হয়েছে বাম বিধায়কদেরও। কংগ্রেস পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদারের দাবি, “সরকারি অনুষ্ঠানকে তৃণমূলের দলীয় অনুষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। তার ফলে এ জেলার অধিকাংশ ছাত্র-যুব ওই উত্‌সব বয়কট করেছে।”

Advertisement

গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ দিন ধরে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে ‘অন্তর্বঙ্গ নাট্যোত্‌সব’ অনুষ্ঠিত হয়। ওই উত্‌সবের আয়োজক ছিল রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অধীনে থাকা পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বহরমপুরের কোনও নাট্যদল ওই উত্‌সবে নাটক প্রযোজনার জন্য ডাক পায়নি। অভিযোগ, তৃণমূলের পতাকার তলায় থাকা ‘নাট্যস্বজন’- এর সদস্য না হওয়ায় বহরমপুরের কোনও দলকেই নাটক মঞ্চস্থ করতে ডাকা হয়নি। ওই নাট্যোত্‌সব শেষ হওয়ার ২ দিন পর, মঙ্গলবার সেই বহরমপুরেই শুরু হয়েছে জেলা ছাত্র-যুব উত্‌সব। উত্‌সবের আমন্ত্রণপত্রে বহরমপুর শহরের কংগ্রেসের কোনও জনপ্রতিনিধির নাম থাকা দূর অস্ত, তাঁদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর মতো ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখানো হয়নি।

বহরমপুর পুরভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বহরমপুর গার্লস কলেজ। সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেলা ছাত্র-যুব উত্‌সব। অথচ বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যেরই নাম নেই উত্‌সবের আমন্ত্রণপত্রে। নাম নেই বহরমপুর সাংসদ অধীর চৌধুরী ও বহরমপুরের বিধায়ক কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীরও। তাঁদের কাছে পাঠানো হয়নি আমন্ত্রণপত্রও। মনোজবাবু বলেন, ‘‘আমন্ত্রণপত্রে নাম থাকা বহু দূরের কথা, আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে, অথবা ফোন করে জানানোর সৌজন্যটুকুও এদের নেই। তৃণমূল চালিত প্রশাসনের কাছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আশা করা বাতুলতা মাত্র।” কংগ্রেসের দখলে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদারেরও নাম নেই আমন্ত্রণপত্রে। তবে নিয়মরক্ষার জন্য তাঁর কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।

ওই আমন্ত্রণপত্রে অবশ্য ‘বিশিষ্ট অতিথি’ হিসাব নাম রয়েছে বহরমপুরের পাশের লোকসভা কেন্দ্র মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের। রয়েছে সাগরদিঘির বিধায়ক তৃণমূলের সুব্রত সাহা থেকে শুরু করে বহরমপুর মহকুমাশাসকেরও নাম। সভাধিপতি পরিচালিত জেলাপরিষদের নির্বাহী আধিকারিক পদাধিকার বলে স্বয়ং জেলাশাসক। সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদারকে ব্রাত্য করে রেখে জেলাশাসক ওই উত্‌সবের ঘোষিত উদ্বোধক। এ প্রসঙ্গে শিলাদিত্য হালদার বলেন, “প্রাক্তন সাংসদ অনুষ্ঠানের বিশিষ্ট অতিথি হবেন, আর স্থানীয় বর্তমান সাংসদ নিমন্ত্রণটুকুও পাবেন না! জেলাপরিষদের সভাধিপতিকে বাদ দিয়ে নির্বাহী আধিকারিককে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক করা হয়েছে! কেন, তা জানতে চেয়েছিলাম ওই অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক তথা মুর্শিদাবাদ জেলা যুব আধিকারিকের কাছে।”

শিলাদিত্য বলেন, “জবাবে মুর্শিদাবাদ জেলা যুব আধিকারিক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘যা কিছু ঘটেছে সব ওপর তলার নির্দেশে।’ আসলে তৃণমূল শাসিত রাজ্যের প্রায় সব জেলায় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এক নিয়ম। অধিকাংশ পঞ্চয়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদ কংগ্রেসের দখলে থাকায় মুর্শিদাবাদ জেলায় অন্য নিয়ম। সেই বেনিয়মের পরিবর্তন চেয়ে কিছু দিন আগে মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। উন্নয়ন সংক্রান্ত ওই বৈঠকে সুরাহা হবে বলে তখন মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন।”

সভাধিপতির অভিযোগ, তবুও এ জেলার ব্যাপারে সরকারি অনুষ্ঠানে সেই আগের মতোই একদ্বেষদর্শী রীতিই চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুর্শিদাবাদ জেলা যুব আধিকারিক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছাত্র-যুব উত্‌সবের জন্য জেলাস্তরের একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির আমি আহ্বায়ক মাত্র। কমিটির যা সিদ্ধান্ত সেটিই আমি মেনে চলতে ব্যধ্য। এ ক্ষেত্রে তা-ই ঘটেছে।”

কেবল নাট্যোত্‌সব, বা ছাত্র-যুব উত্‌সবেই নয়, একই ঘটনা ঘটতে চলেছে মাটি তীর্থেও। শিলাদিত্য হালদার বলেন, “আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানে মাটি তীর্থেওর উদ্বোধন হতে চলেছে। ওই উত্‌সবের জন্য তৈরি রাজ্যের বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতি স্বয়ং জেলা পরিষদের সভাধিপতি। ব্যতিক্রম কেবল মুর্শিদাবাদ। এমনকী মুর্শিদাবাদের সভাধিপতিকে বর্ধমানের অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন