দুর্গা পুজা দিয়ে শুরু। তারপর একে একে লক্ষীপুজো, কালীপুজো, দীপাবলি, অন্নকূট, ভাইফোঁটা শেষে এখন প্রস্তুতি চলছে জগদ্ধাত্রী, কার্তিক পুজো, রাসের। তবে এই পুজোর মরসুমের রেশ শুধুমাত্র পুজো মণ্ডপে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে অনান্য ক্ষেত্রেও। বিজয়া সম্মিলনীর আসর থেকে হেমন্তের বিকেলে খোলা মাঠের কবিতা মেলায় বা বাউলের আখড়া থেকে বুধমণ্ডলীর আলোচনা সভা- সর্বত্র যেন সেই উত্সবের ঢেউ আছড়ে পড়েছে।
গত ১৯ অক্টোবর, রবিবার নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের আয়োজনে দ্বাদশ বর্ষ নির্মলচন্দ্র চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার পরিষদের সভাগৃহে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শ্রীরামপুর কলেজের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক রেভারেন্ড প্রতাপ গাইন। এ বারের স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘ভারতবন্ধু রেভারেন্ড জেমস লঙ’। রেভারেন্ড জেমস লঙের জন্মের দ্বিশতবর্ষ স্মরণেই এই আয়োজন বলে জানান উদ্যোক্তারা। বিশিষ্ট গবেষক এবং প্রাবন্ধিক স্বপন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যে জেমস লঙ সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য উঠে আসে। অনুষ্ঠানে নির্মলচন্দ্র চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪ তুলে দেওয়া হয় হুগলীর উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ পাবলিক লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক প্রণবেশ চক্রবর্তীর হাতে।
একই দিনে গঙ্গার পূর্ব পাড়ের হরিহর ক্ষেত্রে বসেছিল বাউল ফকিরদের দু’দিনের আসর। লালনায়নের উদ্যোগে লালন ফকিরের ১২৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে গঙ্গাবাস হরিহর ক্ষেত্রে দু’দিনের ওই স্মরণ উত্সব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ কার্ত্তিক, রবিবার লালনের প্রয়াণ তিথিতে ভোর ৫টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক শক্তিনাথ ঝাঁ। সারা দিন ধরে চলে লালন বিষয়ক আলোচনা এবং লালনের গান ও বাউল কর্মশালা। সোমবার সদ্য প্রয়াত ডুবকি বাদক তিনকড়ি চক্রবর্তীর স্মরণে বাউল, ফকিরি গান এবং সাধু মহোত্সব অনুষ্ঠিত হয়। পুজোর ছুটির দুপুরে গ্রামীণ কবিদের সঙ্গে শহুরে কবিদের মেল বন্ধনের উদ্দেশে বসেছিল কবিতার পাঠশালা। পূর্বস্থলী ‘সাহিত্য সংসদের’ উদ্যোগে এবং কলকাতার ‘দাঁড়াবার জায়গা’র আয়োজনে রবিবার দুপুরে পারুলিয়ার আনন্দলোক সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের গাছগাছালিতে সাজানো উঠোনে নদিয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, হুগলী এবং কলকাতা থেকে আসা প্রায় ষাট জন কবি পড়লেন তাঁদের স্বরচিত কবিতা। কবি পিনাকি ঠাকুর প্রকাশ করেন দীপঙ্কর চক্রবর্তী সম্পাদিত পিলসুজের ৫৩তম সংখ্যা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বর্ষীয়ান সঙ্গীত শিল্পী ব্রজেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী।
দুর্গাপুজোর পর বিজয়া সম্মিলনী বাংলার সাস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি উল্লেখযোগ্য পর্ব। নবদ্বীপ সাহিত্য সমাজের আয়োজনে সেই বিজয়া সম্মেলন রবিবার দুপুরে নবদ্বীপ শ্রীবাসঅঙ্গন চড়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল দুর্গাপুজো এবং বিজয়া নিয়ে প্রবীণদের স্মৃতিচারণ। সঙ্গে ছিল কবিতা গান। প্রায় তিরিশ জন কবি ছিলেন কথা এবং কবিতায়।
যাঁরা চিরকাল উত্সব প্রাঙ্গণের পিছনে থাকেন তাঁদের নিয়ে অভিনব বিজয়া সম্মেলন করল নবদ্বীপের মণিপুর বারোয়ারি। পুরসভার বিচারে মণিপুর দুর্গাপুজো বারোয়ারি ২০১৪ সালের শহরের শ্রেষ্ঠ পুজো বলে পুরস্কৃত হয়েছে। শারদ উত্সবের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোরা যাঁদের জন্য সেইসব শিল্পীদের এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে সম্মাননা দিল মণিপুর বারোয়ারি কমিটি। রবিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে মণ্ডপসজ্জায় রাজকুমার ভট্টাচার্য, প্রতিমা শিল্পী গৌতম সাহা, আলোকসজ্জায় রণদীপ সাহানির হাতে ট্রফি এবং শংসাপত্র তুলে দেন শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
উত্সবের এই প্রাণবন্ত মরসুমেই নবদ্বীপে যাত্রা শুরু হল ‘শ্রীচৈতন্য পাঠকেন্দ্র এবং গবেষণা সংস্থার’। বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষণ মন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী তত্ত্বসারানন্দ মহারাজের উপস্থিতিতে গত ২৫ অক্টোবর শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হল ওই সংস্থার। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক এবং সেন্ট পলস কলেজের অধ্যাপক শেখ মকবুল ইসলাম। প্রকাশিত হয়েছে শেখ মকবুল ইসলাম এবং শিহরণ চক্রবর্তীর লেখা ‘শ্রীচৈতন্য অন্তরে; অন্বেষণে’ বইটি। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে সরোদ পরিবেশন করেন সিদ্ধার্থ কুমার বসু।