উৎসবে নিরানন্দ আশাবরী আবাসন

আশাবরী আবাসনের দুর্গাপুজো মণ্ডপ আলো করে গত বছরও ছিল আত্রেয়ী। মা বিজয়াদেবীরও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটত আবাসনের পুজোয়। অক্ষম শরীর নিয়ে পিসি প্রভাদেবীও চেয়ারে বসে থাকতেন।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০৯
Share:

আশাবরী আবাসনের দুর্গাপুজো মণ্ডপ আলো করে গত বছরও ছিল আত্রেয়ী। মা বিজয়াদেবীরও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটত আবাসনের পুজোয়। অক্ষম শরীর নিয়ে পিসি প্রভাদেবীও চেয়ারে বসে থাকতেন।

Advertisement

ওই তিন জনের অনুপস্থিতি এ বছর আশাবরীর ‘সি’ ওবং ‘ডি’ ব্লকের আবাসিকদের মুখে মুখে ফিরেছে। যদিও আবাসনে এ বছর দুর্গাপুজো আয়োজন করা হয়নি। তবুও আবাসিক থেকে পাড়া-প্রতিবেশী যেমন নিকটাত্মীয়ের অনুপস্থিতির ব্যথা অনুভব করেছেন, তেমনি আত্মীয়-পরিজনের পুজোর দিনগুলি কেটেছে চোখের জলে। গত ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি কালসর্পদোষ খণ্ডনের নামে তন্ত্রসাধনার উদ্দেশে বাড়িতে ঢুকে তিন জনকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ ওঠে জ্যোতিষী নিত্যানন্দ দাসের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার দু’দিন পরে বহরমপুর থানার পুলিশ ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে বৃদ্ধা পিসি প্রভারানি দাস, ভাইজি মধ্য চল্লিশের বিজয়া বসু ও তাঁর কিশোরী কন্যা আত্রেয়ী বসুর মৃতদেহ উদ্ধার করে। ধরা পড়ে নিত্যানন্দ।

বিজয়াদেবীর দিদি ইরা মিত্র বলেন, “গত বছরও সপ্তমী থেকে নবমী তিন দিনই গোরাবাজার থেকে কাশিমবাজার ঘুরে সমস্ত ঠাকুর দেখেছি। এ বছর বাড়ি থেকে বের হয়নি। একটাও ঠাকুর দর্শন করিনি। বাড়িতে বসেই কেঁদেছি।” ইরাদেবীর বাড়িতে ঘটা করে গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে। ওই পুজোর যাবতীয় ভার ছিল বিজায়দেবীর উপরে। তাঁর অনুপস্থিতিতে এ বছর লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন হয়েছে নমঃ নমঃ করে। এ বার পাড়া-প্রতিবেশীদের পাত পেড়ে খাওয়ানোও হয়নি। ইরাদেবী বলেন, “বিজয়া একা হাতে পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব সামলাত। সেই সঙ্গে পাড়া-প্রতিবেশী সকলকে বসিয়ে নিজে হাতে খাবার পরিবেশন করত অনেক রাত পর্যন্ত। বোন নেই। মনের অবস্থা ভাল নেই। তাই লোকজনও খাওয়াতে পারিনি। কোনও মতে পুজো সেরেছি।”

Advertisement

জামাইবাবু কৃষ্ণাশিস মিত্র বলেন, “বিজয়া ও আত্রেয়ী পুজোর সময়ে বাড়িতে এলেই আনন্দ-ফূর্তিতে কাটত। খাওয়া-দাওয়া হত। এ বছর আমাদের কারও মন ভাল নেই। বিষাদের মধ্যে কেটেছে পুজোর দিনগুলি। প্রতিমা দর্শনেও বের হইনি। এমনকী বাড়ির পাশেই আপনজন ক্লাব, সবুজ সংঘ, কমলাকামিনী তলা, স্বর্গধামের প্রতিমাও দেখতে যাইনি।”

আবাসিক রত্না দাস বলেন, “গত তিন বছর ধরে আবাসনে পুজো হয়েছে। বিজয়াদি এমনিতেই সাজতে ভালবাসতেন। পুজোর সময়ে বিজয়াদি সেজেগুজে সকাল থেকে মণ্ডপে বসে থাকতেন। সারা দিন ধরে চলত আড্ডা। বিভিন্ন গল্পগুজবে কেটে যেত পুজোর দিনগুলি। যদিও এ বছর আবাসনে পুজো হয়নি। কিন্তু খুব মিস করেছি বিজয়াদি ও তার পরিবারকে।” পুজোর চারটে দিন আবাসনের পুজো মণ্ডপে প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াত আত্রেয়ী। সমবয়সীদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা-খেলায় মেতে উঠত।

তবে পুজোর দিনগুলিতে সবচেয়ে বেশি শূন্যতে টের পেয়েছেন বাবা দেবাশিস বসু। বহরমপুর থেকে দূরে পুরীর হোটেলে পর্যটকদের বাড়তি আপ্যায়ন করে ভুলে থাকার চেষ্টা করেছেন স্ত্রী-মেয়েকে। তাঁর কথায়, “এখনও রাতে ঘুমোতে পারি না।” গত বছর পুজোর আগে পরিবারের সদস্যদের নতুন পোশাক কেনার জন্য পুরী থেকে টাকা পাঠান। দেবাশিসবাবু বলেন, “গত পুজোয় পুরীতে ঝড় হয়েছিল। ওই ঝড়ের রাতে আমাকে ফোন করে আমার খোঁজ-খবর নিয়েছিল। পরে বিজয়ার প্রণামও জানায়।” এ বছর সেই ফোন আসেনি।

পুজোর আলোয় ভেসেছে পাড়া। অন্য দিকে নিঝুম অন্ধকারে ডুবে রয়েছে আশাবরী আবাসনের ‘ডি’ ব্লকের দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন