কংগ্রেসের ‘গড়’ দখলে মরিয়া ত্রিপক্ষ

বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক জমির দখল নিতে লড়াই এখন থেকেই জমে উঠেছে। কংগ্রেস যেমন নিজেদের ‘গড়’ রক্ষায় মরিয়া, তেমনই সেই ‘গড়ের’ দখল নিতে কোমর বাঁধছে তৃণমূল, বিজেপি তো বটেই, পিছিয়ে নেই সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামেরাও। মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ভাঙতে আগেই মাঠে নেমেছে তৃণমূল। এই কাজে বড় ভূমিকা নিয়েছেন সদ্য কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন এবং তাঁর পুত্র সৌমিক হোসেন। লোকসভা ভোটের সময় থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব এখানে কংগ্রেসের ভিত আলগা করার কাজ জোরদার করেছিলেন।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৯
Share:

বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক জমির দখল নিতে লড়াই এখন থেকেই জমে উঠেছে। কংগ্রেস যেমন নিজেদের ‘গড়’ রক্ষায় মরিয়া, তেমনই সেই ‘গড়ের’ দখল নিতে কোমর বাঁধছে তৃণমূল, বিজেপি তো বটেই, পিছিয়ে নেই সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামেরাও।

Advertisement

মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ভাঙতে আগেই মাঠে নেমেছে তৃণমূল। এই কাজে বড় ভূমিকা নিয়েছেন সদ্য কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন এবং তাঁর পুত্র সৌমিক হোসেন। লোকসভা ভোটের সময় থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব এখানে কংগ্রেসের ভিত আলগা করার কাজ জোরদার করেছিলেন। গত ১০ জুলাই মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল কমিটি ভেঙে দিয়ে দলের পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য তিন জন সভাপতি নিয়োগ করেন। মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে মান্নান গত শনিবার গঠন করলেন দলের নতুন জেলা কমিটি এবং ১৪টি ব্লক কমিটি (একাধিক দাবিদার থাকায় বাকি ব্লক কমিটিগুলি আপাতত গঠন করা হয়নি)। জেলা ও ব্লক কমিটি গঠনের সঙ্গে যুব, মহিলা ও সেবাদলের মতো বিভিন্ন শাখা সংগঠনেরও পদাধিকারী নিয়োগ করা হয়েছে মান্নানের অনুমোদন সাপেক্ষেই।

মান্নান বলেন, “জেলা কমিটি ও ব্লক কমিটির পদাধিকারিদের প্রস্তাবিত তালিকা অনুমোদনের জন্য দলের রাজ্য কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।” তিনি ‘প্রস্তাবিত’ বললেও ওই তালিকাই চূড়ান্ত বলে মনে করছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। দলীয় সূত্রে খবর, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মান্নানের একটি চুক্তি হয়। সেই অলিখিত চুক্তি হল-- গোষ্ঠীকোন্দলে জোরবার মুর্শিদাবাদ জেলার সাংগঠনিক ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবেন মান্নান। তবেই তিনি ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভাঁড়ারে ফসল তুলে দেবেন। সেই কাজে তিনি ও তাঁর ছেলে সৌমিক গত শনিবার থেকে কোমর বেঁধে আসরে নেমে পড়ছেন। মান্নান ও সৌমিকের পছন্দ মতোই যুব তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি করা হয়েছে অশেষ ঘোষকে।

Advertisement

‘যুদ্ধং দেহি’ ভঙ্গিমায় আসরে নেমে পড়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসও। গত রবিবারই বহরমপুর শহরে দু’ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দলীয় সভা করেছে কংগ্রেস। বহরমপুর শিল্পতালুকের একটি অভিজাত হোটেলে দুপুর ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বৈঠকে ছিলেন বিধানসভায় কংগ্রসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সহরব, দুই সাংসদ-- অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও মৌসম বেনজির নূর। ছিলেন দলের নদিয়া,বীরভূম, বর্ধমান, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের সভাপতি-সভনেত্রীরা। ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার ১৪ জন দলীয় বিধায়কদের মধ্যে ৬ জন। অধীর চৌধুরী বলেন, “সাম্প্রদায়িক মেরুকরণে মেতে উঠেছে বিজেপি। দেশের ওই ভয়ঙ্কর বিপদের মোকাবিলা বরাবরের মতো কংগ্রেসকেই করতে হবে।” দলত্যাগ করে তৃণমূলে ভিড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটিও ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচিত হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

বহরমপুর বাস টার্মিনাস মোহনায় অনুষ্ঠান বাড়িতে দ্বিতীয় সভাটি হয় দুপুর দু’টো থেকে বিকাল চারটে পর্যন্ত। কংগ্রেসের ওই বৈঠকে ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার ১২১টি পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান, ১৩৩ পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা, ১০টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহকারি সভাপতি, ১৪টি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা, জেলা পরিষদের ৩৮ জন সদস্য, ১১ জন বিধায়ক ও দুই সাংসদ অধীর চৌধুরী ও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।

জেলাপরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, “ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কাজকর্মের পর্যালেচানা করার জন্য ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। তৃণমূল সরকারের বাধা সত্ত্বেও কংগ্রেসের দখলে থাকা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ উন্নয়নূলক কাজ করতে পারলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আখেরে লাভ হবে দলেরই। সেই সব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।”

২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে এগোচ্ছে বিজেপি-ও। দলের বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মণ্ডল বলেন, “দলের শক্তি বৃদ্ধি করতে এ জেলায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেই মতোই কাজ হবে।”

এ দিকে হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া সিপিএম। তবে তাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে সাংগঠনিক সম্মেলনের নির্ঘণ্ট। নির্ঘণ্ট মেনে নভেম্বরের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলার ১৬৭টি লোকাল কমিটির ও আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ২৪টি জোনাল কমিটির সম্মেলন শেষ করতে হবে। আগামী বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ দিন ধরে রঘুনাথগঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলন।

দলের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “সাংগঠনিক পর্যালোচনা ছাড়াও সম্মেলনে উঠে আসছে ‘সারদা’, ‘অনুব্রত-মণিরুল-আরাবুল’ ও ‘খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ’-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন