জঙ্গিপুরে কংগ্রেসের দুর্গ সেকেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিল তৃণমূল। রবিবার পঞ্চায়েত প্রধান মানোয়ারা বিবি ও উপ-প্রধান কাউসার বিশ্বাসের নেতৃত্বে ৮ জন কংগ্রেস সদস্য তৃণমূলে যোগ দিলেন। এছাড়া কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির দু’জন সদস্যও এদিন যোগ দেন তৃণমূলে। ১৭ সদস্যের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে ১১ জন সদস্য ছিল কংগ্রেসের, ১ জন তৃণমূলের এবং ৫ জন সিপিএমের। এই দলবদলের ফলে সেকেন্দ্রা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে ৯ হল।
রবিবার সেকেন্দ্রার লালখাঁন্দিয়ার গ্রামে এক প্রকাশ্য জনসভা করে তৃণমূল। সভায় হাজির ছিলেন শাসক দলের বিধায়ক ও জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় সভাপতি ইমানি বিশ্বাস, দলে জেলার সাধারণ সম্পাদক একদা প্রণব মুখোপাধ্যায়-ঘনিষ্ঠ নেতা মুক্তিপ্রসাদ ধর। এদিনের সভায় হাজির ছিলেন সেকেন্দ্রার বিতর্কিত কংগ্রেস নেতা ইলিয়াস চৌধুরীও। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় বহু অভিযোগ রয়েছে। বছর খানেক আগে তিনি গ্রেফতারও হন। তারপর দীর্ঘদিন ঝাড়খণ্ডের জেলে আটক ছিলেন। পরে জামিন পেয়ে ফিরে আসেন গ্রামে। ইলিয়াস চৌধুরী স্থানীয় রাজনীতিতে বরাবরই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ থেকেছেন। বাম জমানায় তিনি ছিলেন সিপিএমের নেতা। তিন দশক সেকেন্দ্রা ছিল সিপিএমের দখলে। এমনকী বেশির ভাগ আসনে সিপিএম ছাড়া বিরোধীরা কেউই প্রার্থীও দিতে পারেনি সে সময়। বাম শাসন আলাগা হতেই ইলিয়াস চৌধুরী কংগ্রেসে যোগ দেন। কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সেকেন্দ্রা পঞ্চায়েতের দখল যায় শাসক দলের শরিক কংগ্রেসের হাতে। সেকেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএম ও তৃণমুল সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে বহুদিন থেকেই। বাম জমানায় কংগ্রেস সমর্থকরা ছিল গ্রামছাড়া। ২০০৯ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বার দাঁড়ানোর পর গোটা এলাকার দখল নেয় কংগ্রেস, এলাকা ছাড়া হন সিপিএম সমর্থকরা। এলাকা যার যখন দখলে থেকেছে ভোটে একচেটিয়া ভাবে জয়ী হয়েছে তারাই। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক রঙ বদলের ইঙ্গিত মেলে সেকেন্দ্রায়। ২০১২ সালে লোকসভা উপ-নির্বাচনে সেকেন্দ্রা পঞ্চায়েতে প্রায় ৩০০০ ভোটে এগিয়ে থাকা কংগ্রেসের ব্যবধান এবারের লোকসভায় অর্ধেকে নেমে আসে।
রবিবার ইলিয়াস চৌধুরী প্রধান, উপ-প্রধান-সহ ১০ জন পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেকেন্দ্রা কার্যত কংগ্রেসের হাতছাড়া হল। শুধু তাই নয়, এলাকায় কংগ্রেস অস্তিত্বই এখন সঙ্কটের মুখে। তৃণমূলের বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেবেন। পাশের গিরিয়া পঞ্চায়েতও হাতছাড়া হবে কংগ্রেসের। সেখানে গত পঞ্চায়েতে গায়ের জোরে ১০টি আসন দখল করে কংগ্রেস। বিরোধীদের কাউকে নির্বাচনে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি সেখানে।”
রঘুনাথগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামান বলেন, “তৃণমূলের চোখে এতদিন যারা সমাজবিরোধী ছিল তাদের এভাবে দলে নেওয়ায় স্পষ্ট হয়ে গেল কারা সমাজবিরোধীদের প্রশ্রয় দেয়। এই দল বদলে কংগ্রেসের কোনও ক্ষতি হবে না এলাকায়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের নিজের এলাকা সেকেন্দ্রায় এই পালা বদলকে সমাজবিরোধীদের ‘জার্সি বদল’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “শাসক দলে নাম লিখিয়ে এরা নিজেদের পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে চাইছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই অজস্র মামলা রয়েছে।”