খুনের কারণ স্পষ্ট বলে দাবি করলেন আইনজীবী

আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, মঙ্গলবার সেখান থেকেই সজল ঘোষ হত্যা মামলার সওয়াল শুরু করলেন সরকার পক্ষের আইনজীবী নদিয়ার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়। এ দিনও আদালত চত্বরে কড়া পুলিশি পাহারা ছিল। আদলত কক্ষে প্রবেশও ছিল নিয়ন্ত্রিত। দু’ঘণ্টার সওয়াল পর্বের বেশির ভাগ সময়েই প্রদীপবাবুকে কাঠগড়ায় পায়চারি করতে দেখা যায়।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪১
Share:

আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, মঙ্গলবার সেখান থেকেই সজল ঘোষ হত্যা মামলার সওয়াল শুরু করলেন সরকার পক্ষের আইনজীবী নদিয়ার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়। এ দিনও আদালত চত্বরে কড়া পুলিশি পাহারা ছিল। আদলত কক্ষে প্রবেশও ছিল নিয়ন্ত্রিত। দু’ঘণ্টার সওয়াল পর্বের বেশির ভাগ সময়েই প্রদীপবাবুকে কাঠগড়ায় পায়চারি করতে দেখা যায়।

Advertisement

এ দিন মামলার তৃতীয় সাক্ষী তথা প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি এবং জেরায় বলা কথা বিশ্লেষণ করে সওয়াল শুরু করেন বিকাশবাবু। মামলার তদন্তকারী অফিসার ছাড়া বাকি সমস্ত সাক্ষীর বক্তব্য এক এক করে আদালতের সামনে এনে সওয়াল করেন তিনি। আগের দিনের মতোই বিকাশবাবু এ দিনও টানা দু’ঘণ্টা সওয়াল করেন।

এ দিনের সওয়ালের মূল কথা ছিল, তাঁর আইনজীবীরা যতই বলুন যে প্রদীপ সাহাকে রাজনৈতিক ভাবে ফাঁসানো হয়েছে, আদালতের কাছে তাঁরা তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং মামলার বিভিন্ন সাক্ষীর কথায় খুনের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক শত্রুতার বশে প্রদীপবাবুকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করার বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে বিকাশবাবু বলেন, প্রদীপ সাহার খুনের ‘মোটিভ’ খুব স্পষ্ট। তাঁর যুক্তি, সিপিএম ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রদীপবাবু সিপিএমের টিকিটে হেরে গিয়েছিলেন। তারপরে তৃণমূলের টিকিটে তপন চট্টোপাধ্যায় তাঁকে হারিয়ে বিধায়ক হন। সজল ঘোষ, পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়, গৌতম নাথ, কাজল শেখ, ফজলুল হক প্রমুখ মামলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা তপনবাবুকে ভোটে জেতানোর জন্য সরাসরি খেটেছিলেন। তাঁদের জন্যই খুব অল্প ভোটে প্রদীপবাবু হেরে যান। ফলে প্রদীপবাবুর ওঁদের ওপর রাগ থাকা স্বাভাবিক। সেই রাগ থেকেই এই খুনের পরিকল্পনা বলে বিকাশবাবুর দাবি। তিনি আরও বলেন, যদি প্রদীপবাবুর জন্য তপনবাবু হেরে যেতেন তাহলে পরাজয়ের রাগে প্রদীপ সাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় ইন্ধন দিয়েছেন তপন চট্টোপাধ্যায় বা তাঁর দল এ কথা বলা যেত।

Advertisement

সওয়ালের পরবর্তী পর্যায়ে আর একটি বিষয়ে আদালতের চোখ টানার চেষ্টা করেন বিকাশবাবু। তিনি বলেন, বিভিন্ন সাক্ষীর বক্তব্য থেকে জানা গিয়েছে ঘটনার রাতে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পূর্বস্থলী কলেজের দুই টিএমসিপি সমর্থক ছাত্র শৌভিক আইচ ও হালিম শেখ এবং সন্তু ভৌমিক নামে এক এসএফআই সমর্থক ছাত্র ভর্তি হয়েছিলেন। সজল ঘোষ খুনের একটু আগে হাসপাতালের ওয়ার্ডে এক অচেনা ব্যক্তি এসে সন্তু ভৌমিকের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে। তারপরেই সন্তু, শৌভিককে বলে হাসপাতালের নীচে লোকনাথ দেবনাথ এসেছে, শৌভিকের সঙ্গে কথা বলতে চায় সে। তখন ওয়ার্ডে সজল ঘোষ-সহ পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য তৃণমূল নেতারা হাজির ছিলেন। কথা বলার পরে শৌভিকের সঙ্গে নীচে নেমে যান সজল ঘোষ। কিন্তু শৌভিকের হাতে স্যালাইনের চ্যানেল থাকায় সে হাসপাতালের নীচের গেটে দাঁড়িয়ে থাকে এবং সজলবাবু এগিয়ে যান। এরপরেই গুলিবিদ্ধ হল সজল ঘোষ। বিকাশবাবুর দাবি, ওই দিন হয়তো শৌভিকই টার্গেট ছিল। কিন্তু তার বদলে সজল ঘোষ সামনে যাওয়ায় তাঁকে খুন হতে হয়। খুনের পরিকল্পনা ছিলই।

সওয়ালের শেষ পর্বে তিনি বলেন, এই হত্যা মামলায় প্রদীপ সাহা-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার মধ্যে কোনও মিথ্যা নেই। নবদ্বীপ হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র থেকে বারবারই তা প্রমাণিত হয়েছে। বুধবার মামলার তদন্তকারী অফিসারের পেশ করা তদন্ত রিপোর্ট এবং তার জবানবন্দি নিয়ে সওয়াল হওয়ার কথা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement