গ্রেফতার বহরমপুরের সেই স্কুলমালিক

ছাত্রীদের উপরে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত সুশান্তকুমার দে অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল। বহরমপুর থানার পুলিশ রবিবার রাতে বহরমপুরের খাগড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার ধৃত সুশান্তকুমারকে জেলা জজ আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের বিশেষ আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক সুদেব মিত্র দু’দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৪
Share:

ছাত্রীদের উপরে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত সুশান্তকুমার দে অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল। বহরমপুর থানার পুলিশ রবিবার রাতে বহরমপুরের খাগড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার ধৃত সুশান্তকুমারকে জেলা জজ আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের বিশেষ আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক সুদেব মিত্র দু’দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই আদালতের সরকারি আইনজীবী মিতাভ্র ধরগুপ্ত বলেন, “পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ধৃত ব্যক্তিকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত দেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করে। বিচারক পুলিশের ওই আবেদন মেনে মাত্র দু’দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ওই মামলার তদন্তকারী অফিসারকে আগামী ১৯ নভেম্বর ধৃত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন।” গত ৯ নভেম্বর বহরমপুর বানজেটিয়া এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী ওই স্কুলের কর্ণধার সুশান্তকুমারের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করে। তার পরেই গত মঙ্গলবার ওই সুশান্তকুমারের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করেন চার জন আবাসিক ছাত্রী।

Advertisement

বহরমপুর থানার আইসি অরুনাভ দাস বলেন, “ঘটনার পরেই সুশান্তকুমার দে বহরমপুর ছেড়ে চলে যায়। পুলিশের নাগাল এড়াতে গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছে ওই ব্যক্তি। পরে বহরমপুরের খাগড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আসার খবর পেয়ে পুলিশ রবিবার রাতে সেখানে হানা দিয়ে গ্রেফতার করে।” ধৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘৩/৪ প্রোটেকশন অফ চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স অ্যাক্ট’-এ পুলিশ মামলা দায়ের করেছে।

ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার ছয় দিন পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সিবিএসই বোর্ডের ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়া বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। তার পরেই স্কুলেরই বেশ কয়েক জন আবাসিক-ছাত্রীও তাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তি একই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করে। সেই মতো গত ১৮ নভেম্বর সুশান্তের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ চালানোর অভিযোগ দায়ের করে চার জন আবাসিক ছাত্রী। যে চার জন ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দায়ের করে, তাদের মধ্যে অষ্টম শ্রেণির দু’জন, একজন দশম ও এক জন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী রয়েছে। ওই চার জন পৃথক ভাবে পুলিশের কাছে লিখিত বয়ানও জমা দেয়। পাশাপাশি স্কুলের পক্ষ থেকে সহ-অধ্যক্ষও অন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরেও ওই ব্যক্তি গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন অভিভাবক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করায় খুশি সকলেই।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী বলেন, “এ দিন আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে আরও একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে যে চার জন ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে, তাদের ১৬৪ ধারায় গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করার আবেদন জানায়। বিচারক ওই আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১লা ডিসেম্বরের মধ্যে ওই গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

এর আগে গত শুক্রবার গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য চার জন ছাত্রীকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু পুলিশের গাফিলতিতে ওই জবানবন্দি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। কেননা, ওই আইনের যাবতীয় মামলার বিচার শোনার জন্য জেলা জজ আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের বিশেষ আদালত রয়েছে। তাই পুলিশ ওই আইনে কোনও মামলা দায়ের করলে তার যাবতীয় নথি ওই বিশেষ আদালতেই পাঠাতে হবে। সেক্ষেত্রে গোপন জবানবন্দির কোনও আবেদন যদি পুলিশ করে, তাহলে ওই আদালতের বিচারকের কাছে করতে হবে। তখন ওই বিচারক কোনও এক জন ম্যাজিষ্ট্রেটকে গোপন জবাবনবন্দি নথিভূক্ত করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু পুলিশ ওই আইন না জানার ফলে সরাসরি মুর্শিদাবাদের সিজেএম আদালতে পাঠিয়ে দেওয়ায় ওই আদালতের বিচারক গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করতে পারেননি।

এ দিন আদালত চত্বরে সুশান্তকুমার দে অবশ্য বলেন, “আমি স্কুল বিক্রি করে দিতে চাই। তাই আমার চরিত্র কলুষিত করতে স্কুলেরই কয়েক জন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ছাত্রীদের দিয়ে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে। আইনের প্রতি আমার ভরসা আছে।” তবে যে ছাত্রীদের গোপন জবানবন্দি দেওয়ার কথা, সেই ছাত্রীদের হস্টেল থেকে জোর করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে স্কুল পরিচালন সমিতির একাংশের বিরুদ্ধে। ওই পরিচালন সমিতিতে রয়েছে সুশান্তের পরিবারের লোকজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন