গ্রন্থাগার বন্ধ রেখে কর্মীরা বইমেলায়

গ্রন্থাগার তালাবন্দি রেখে গ্রন্থমেলা চলছে বহরমপুরে। ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভিড় বাড়াতে গ্রন্থাগার কর্মীদের হাজির হতে হচ্ছে বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানের ৩৪তম মুর্শিদাবাদ জেলা বইমেলায়। মেলার উদ্বোধক কবি সুবোধ সরকার ও বইমেলা স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন দু’জনেই গত বুধবারের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে শ্রোতাদের বেশি করে বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৯
Share:

বহরমপুর বইমেলায় ভিড়।

গ্রন্থাগার তালাবন্দি রেখে গ্রন্থমেলা চলছে বহরমপুরে। ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভিড় বাড়াতে গ্রন্থাগার কর্মীদের হাজির হতে হচ্ছে বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানের ৩৪তম মুর্শিদাবাদ জেলা বইমেলায়। মেলার উদ্বোধক কবি সুবোধ সরকার ও বইমেলা স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন দু’জনেই গত বুধবারের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে শ্রোতাদের বেশি করে বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অথচ সরকারি নির্দেশে গ্রন্থাগারগুলি তালাবন্দি রেখে পাঠকদের বই পড়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ওই বঞ্চনার মেয়াদ কাল ১০-১৮ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ ৯ দিন। এ ছাড়াও বইমেলার প্রস্তুতির জন্য গ্রন্থাগারিক ও কর্মী তুলে নেওয়ায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ৪টি গ্রন্থাগার। এহেন ঘটনার পরে খুব সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে বইমেলা করার ঘোষিত উদ্দেশ্য নিয়েই।

Advertisement

১৯৮১ সালের আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত গ্রন্থগার ছিল ১৩টি। ১৯৮১ সালে রাজ্য সরকার আরও ১৪৬টি গ্রন্থগারের অনুমোদন দেয়। তবে কর্মীর অভাবে ওই ১৪৬টির মধ্যে ১১টি গ্রন্থগার কোনও দিনই পৃথিবীর আলো দেখতে পায়নি। জেলায় গ্রন্থাগারিক, সহকারি গ্রন্থাগারিক ও নৈশপ্রহরী মিলিয়ে সরকারি ভাবে অনুমোদনপ্রাপ্ত পদের সংখ্যা ৩২০। বাস্তবে কিন্তু রয়েছেন মাত্র ১৮৯ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ১৩১। তার ফলে বেশ কয়েক মাস ধরে ১৮টি গ্রন্থগার তালাবন্দি। অর্ধেকের বেশি গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিক ও জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাসিস্ট্যান্টের মধ্যে রয়েছেন মাত্র এক জন। গ্রন্থাগারগুলির এ হেন মুখ থুবড়ে পড়ার পরেও জেলায় বইমেলা করতে গত ২৫ নভেম্বর থেকে ৬ জন জন গ্রন্থাগার কর্মীকে ও গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩৩ জনকে, অর্থাৎ মোট ৩৯ জনকে লিখিত নির্দেশ দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২২ জন কর্মী একাই একটি গ্রন্থাগার সামলাতেন। ফলে তাঁরা না থাকায় ওই ২২টি গ্রন্থাগারে তালা ঝুলছে।

গত বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ঘণ্টা দু’য়েক আগে ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান লাগোয়া গ্রন্থাগার প্রাঙ্গনে জেলার সব গ্রন্থাগার কর্মীদের সামনে বইমেলা সফল করতে ভাষণ দেন মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক প্রবোধ মাহাত। সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বইমেলা আপনাদের জন্য। ৭ দিন ধরে আপনারা সবাই বইমেলায় থাকবেন। মেলা উপভোগ করবেন।” এখানেই শেষ নয়। সিপিএমের ‘পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার কর্মী সমিতি’র জেলা সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, “বুধবারের ওই বক্তব্যের পরও বইমেলার সাংস্কৃতিক মঞ্চে ভিড় জমছে না। তাই সাংস্কৃতিক মঞ্চে ভিড় বাড়ানোর জন্য জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক আমাদের ফোন করে সব গ্রন্থাগার কর্মীকে মেলায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ শুনতে আমরা বাধ্য।” তৃণমূলের ‘বঙ্গীয় সাধারণের গ্রন্থগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক তপনকুমার ঘোষ বলেন, “বইমেলা করা হয় গ্রন্থাগার কর্মীদের জন্য। ফলে তাঁরাই তো মেলায় থাকবেন। তা ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ শুনতেই হবে।”

Advertisement

জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক প্রবোধ মাহাত বলছেন, “গ্রন্থগার কর্মীরা মেলায় থাকলে লক্ষ লক্ষ বই নেড়েচেড়ে দেখতে পারবেন। তাই প্রত্যেককে বইমেলা এনজয় করতে বলেছি।” তাই বলে গ্রন্থাগারে তালা দিয়ে? তিনি বলেন, “আমি তো তালাবন্ধ করতে বলিনি।”

প্রশ্ন উঠেছে, একই সঙ্গে গ্রন্থাগার খোলা থাকবে, আবার বইমেলাতেও গ্রন্থাগার কর্মী থাকবেন, এমনটা কী করে সম্ভব? কান্দির হাজারপুর-নবগ্রাম গ্রন্থাগারে রয়েছেন মাত্র একজন। তিনি তৃণমূলের গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির জেলা সভাপতি ফারুখ হোসেন। কান্দির মাহাদিয়া ও পাতনা এবং বড়ঞার পাঁচথুপি মিলিয়ে ৩টি গ্রন্থাগারেও রয়েছেন এক জন করে কর্মী। এরকম ৬টি গ্রন্থাগার থেকে তৃণমূলের গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির জেলা সভাপতি ফারুখ হোসেন ও সম্পাদক তপনকুমার ঘোষ-সহ মোট ৬ জনকে বইমেলার প্রস্তুতির জন্য লিখিত নির্দেশ দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে গত ২৫ নভেম্বর। ফলে আড়াই মাস থেকে তালাবন্দি সেই সব গ্রন্থাগার।

তৃণমূলেরই গ্রন্থাগার কমর্ীর্দের পাল্টা আরও একটি সংগঠন রয়েছে। নাম ‘পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতি’। তার জেলা সভাপতি হলেন তৃণমূলের ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন’-এর জেলা সহ-সম্পাদক তহিদুল ইসলাম। তাঁর মতে গ্রন্থাগারে তালা না দিয়েও বইমেলা করা সম্ভব ছিল। তিনি বলেন, “একাধিক কর্মী থাকা গ্রন্থাগার থেকে বইমেলার জন্য একজন করে তুলে নেওয়া হলে এই সমস্যার সৃষ্টি হত না।” অন্য একটি পন্থার কথা শোনালেন ‘পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার কর্মী সমিতি’র জেলা সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, “এর আগের বইমেলাগুলির জন্য ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, টেলিফোন ও রাজ্য সরকারে বিভিন্ন দফতর থেকে দু-চার জন করে কর্মী তুলে নেওয়া হত। ওই পথ অনুসরণ করলে গ্রন্থমেলা চলাকালীন বন্ধ থাকত না গ্রন্থাগার।”

ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন