চুরির অভিযোগ, আমলাই সালিশি ডেকে একঘরে

সালিশি ডেকে সামাজিক বয়কট। বিডিও-র নির্দেশ সত্ত্বেও মিলছে না স্থানীয় নলকূপ, পুকুরের জল ব্যবহারের অধিকার। প্রায় পাঁচ মাসের পুরনো চুরির ঘটনায় দোষী সাজিয়ে একঘরে করার এই ঘটনা মুর্শিদাবাদের ভরতপুর আমলাই গ্রামের। ঘটনার সূত্রপাত মে মাসে। সে সময় জমিতে বোরো ধান পাকছিল। বিশ্বনাথ দে নামে এক স্থানীয় কৃষক নিচুপাড়ার মোড়লের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর খেতের ধান চুরি গিয়েছে। মোড়লরা জানান, তদন্ত করে দেখা গিয়েছে ধান চুরি করেছে এলাকারই দুই যুবক ইজারুল শেখ ও কদর শেখ। সে সময়ই বিশ্বনাথবাবু আর কোনও অশান্তি চাননি। পাড়ার ছেলেরাই ধান চুরি করেছে ভেবে তিনি পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেননি।

Advertisement

কৌশিক সাহা

ভরতপুর শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৩
Share:

সালিশি ডেকে সামাজিক বয়কট। বিডিও-র নির্দেশ সত্ত্বেও মিলছে না স্থানীয় নলকূপ, পুকুরের জল ব্যবহারের অধিকার। প্রায় পাঁচ মাসের পুরনো চুরির ঘটনায় দোষী সাজিয়ে একঘরে করার এই ঘটনা মুর্শিদাবাদের ভরতপুর আমলাই গ্রামের।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত মে মাসে। সে সময় জমিতে বোরো ধান পাকছিল। বিশ্বনাথ দে নামে এক স্থানীয় কৃষক নিচুপাড়ার মোড়লের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর খেতের ধান চুরি গিয়েছে। মোড়লরা জানান, তদন্ত করে দেখা গিয়েছে ধান চুরি করেছে এলাকারই দুই যুবক ইজারুল শেখ ও কদর শেখ। সে সময়ই বিশ্বনাথবাবু আর কোনও অশান্তি চাননি। পাড়ার ছেলেরাই ধান চুরি করেছে ভেবে তিনি পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেননি।

এরপর কেটে গিয়েছে কয়েক মাস। গত শনিবার সেই ধান চুরির ঘটনায় সালিশি সভা ডাকা হয়। অভিযুক্ত দুই ভাই কদর শেখ ও ইজারুল শেখ উপস্থিত না হওয়ায় দুই মোড়ল আকবর শেখ ও আলেফ শেখ তাঁদের পরিবারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তারপর থেকেই চলছে সামাজিক বয়কট।

Advertisement

রবিবার ওই পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ জানানো হলে পুলিশ আলেফ ও আকবরকে গ্রেফতার করে। যদিও তাঁদের পরে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ দিকে মোড়লদের গ্রেফতার করা নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, যাদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ উঠছে তাদের গ্রেফতার না করে পুলিশ কেন মোড়লদের গ্রেফতার করবে!

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাই তাঁদের গ্রেফতার করার কোনও প্রশ্নই নেই। অন্যদিকে কোনও মানুষকে সামাজিকভাবে বয়কট করা অপরাধ, তাই ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

বুধবারই এলাকা পরিদর্শনে যান ভরতপুরের বিডিও প্রমিত দাস। তিনিও জানান, “এ ভাবে বয়কট করাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। যাতে এ রকম কিছু না হয়, ওই পরিবার জল বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা করছি।”

কিন্তু বৃহস্পতিবারেও দেখা গেল সেই বয়কট সমানে চলেছে। পাড়ার পুকুরে নামতে গেলে উড়ে আসছে অকথ্য গালাগালি। কাছের মুদি দোকানে মিলছে না নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে সারতে হচ্ছে বাজারহাট। কদর শেখ বলেন, “জল নিতে গেলেই গালাগালি করছে, মারধরের হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছি। শুক্রবার আবার থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে হবে।”

বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বুধবার দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়েছিলাম। কাজ হয়নি। আবার যেতে হবে। কালীপুজোটা কেটে যাক। সামনের সপ্তাহে গিয়ে দেখব।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের ইব্রাহিম শেখ বলেন, “বিডিও বুধবার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও জল পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ শুনিনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

এ দিকে অভিযুক্ত কদর শেখ বলেন, “আমি ওই পাঁচ মাস আগেই চেয়েছিলাম বিচার হোক। যদি আমি চোর প্রমাণ হই, তবে সাজা হোক। কিন্তু তখন তা করেনি। পাঁচ মাস পরে সভা ডেকেছে। আমি যাইনি বলে আমাদের বাড়ির বড় থেকে ছোট সকলকেই মারধর করে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়েছে।”

প্রায় একই কথা শুনিয়েছেন বিশ্বনাথবাবু। তিনি বলেন, “ধান চুরির ঘটনা মিটে গিয়েছে। পরের মরসুমের ধান ওঠার সময় হয়ে গেল। তাছাড়া সে সময়ও আমি কোনও সালিশি চাইনি, পুলিশেও অভিযোগ করিনি। ওই বয়কটের সাথে আমার ধানের কোনও সম্পর্ক নেই। মোড়লের সঙ্গে কোনও পুরোন বিবাদের জের বলেই মনে হচ্ছে।”

অন্যদিকে মোড়ল আলেফ শেখ বলেন, “আমরা ধান চুরির ঘটনার জন্য সালিশি সভা ডেকেছিলাম। ওই দু’ভাই হাজির তো হয়ইনি, উল্টে সভাকে গালিগালাজ করে। তাই গ্রামের সব মোড়লরা মিলে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে নলকূপের পানীয় জল ব্যবহার করাতে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন