চুল ছিঁড়ে সাজা, বিক্ষোভ বহরমপুরের স্কুলে

‘দুষ্টুমি’ করার অভিযোগে ছাত্রের মাথার চুল ছিঁড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল বহরমপুরের কাশিমবাজার এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সঞ্জয় ঘোষ নামে লাধুরাম তোষনিওয়াল সরস্বতী শিশু বাটিকা স্কুলের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতেই বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৫
Share:

উপড়েছে চুল।—নিজস্ব চিত্র।

‘দুষ্টুমি’ করার অভিযোগে ছাত্রের মাথার চুল ছিঁড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল বহরমপুরের কাশিমবাজার এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সঞ্জয় ঘোষ নামে লাধুরাম তোষনিওয়াল সরস্বতী শিশু বাটিকা স্কুলের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতেই বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩২৫ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছরের ‘উদয় শ্রেণি’র ওই ছাত্রের গত ২৮ নভেম্বর থেকে পরীক্ষা চলছে। মঙ্গলবার ছিল অঙ্কের পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে ওই দিন সাড়ে ১০টা নাগাদ বাবা জয়ন্ত কর্মকার স্কুল থেকে আনতে গিয়ে ছেলের দেখা পাননি। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি যখন ছেলের খোঁজ করছেন, সেই সময়ে তাঁকে দেখে গেটের বাইরে বেরিয়ে আসেন স্কুলের প্রাতঃবিভাগের শিক্ষক সঞ্জয়বাবু। জয়ন্তবাবু বলেন, “আমার কাছে এসে সঞ্জয়বাবু জানতে চান ছেলে শারীরিক ভাবে অসুস্থ কি না। উনি মাথায় হাত দিতেই নাকি পিছনের দিকের এক গোছা মাথার চুল উঠে এসেছে। শিক্ষকের ওই কথা আমার বিশ্বাস হয়নি। পরে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, ওই শিক্ষক পিছন দিক থেকে জোর করে মাথার চুল ধরে টানার ফলে তা উঠে যায়। মাথার পিছন দিকে পুরো টাক হয়ে গিয়েছে।” তাঁর কথায়, “গোটা বিষয়টি জানার পরে বাবা হিসেবে মেনে নিতে পারিনি। শিক্ষক তখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান এবং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন।”

এর আগেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকী কোনও বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তিনি তাঁদের কথার আমল দেননি বলে অভিযোগ। জয়ন্তবাবু বলেন, “প্রায় দেড় মাস আগে আমার ছেলেকে তার এক সহপাঠী মারধর করে। বিষয়টি ওই শিক্ষককে জানালে তিনি উল্টে আমার ছেলের দোষারোপ করেন। এ দিনের ঘটনার পরেও গোটা দোষ ছেলের উপরেই চাপানোর চেষ্টা করেন। শিশু-ছাত্র হিসেবে যদি কোনও দুষ্টুমি করে, শিক্ষক অবশ্যই তার শাসন করবেন। কিন্তু শাসনের নামে জোর করে মাথার চুল ছিঁড়ে দেবেন, এমনটা মেনে নেওয়া যায় না।”

Advertisement

ওই ঘটনা জানার পরেই স্কুলের বিভিন্ন অভিভাবক প্রতিবাদ করেন এবং গোটা বিষয়টি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন। তার পরেই ওই খুদে পড়ুয়ার অভিভাবক বহরমপুর থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ কাশিমবাজারের ওই বেসরকারি স্কুলে তদন্তে আসে। পড়ুয়ার মা সীমাদেবী বলেন, “মাথার পিছন দিকে হাত ছোঁয়ালেই ব্যথা হচ্ছে বলে ছেলে জানায়। তখন সন্ধ্যার পরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চিকিত্‌সকের কাছে যাই। সেই সময়ে ওই শিক্ষক-সহ স্কুলের বেশ কয়েক জন শিক্ষক আমাদের বোঝানোর জন্য বাড়িতে আসেন। কিন্তু চিকিত্‌সকের কাছে দেখিয়ে ফিরতে দেরি হওয়ায় তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়নি।”

বহরমপুর শহর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ দিন স্কুলে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। শহর কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ (কাল্টু) বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করার কথা বলা হয়েছে। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে দিকে নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশ জারি করে স্কুলে মারধর না করার দাবিও জানিয়েছি।”

এ দিন অবশ্য ওই শিক্ষক স্কুলে আসেননি। ফলে স্কুলে গিয়ে তাঁর দেখা মেলেনি। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করাও যায়নি। তবে স্কুলের পক্ষ থেকে দিবা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরোজ রায়চৌধুরী বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ওই বিষয়ে এ দিন জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই শিক্ষককে স্কুলে রাখা হবে কি না, সে ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন