ছেলেরা বাড়ি ফিরবে কবে, খোঁজ নেতাদের

সুতির বালিয়াঘাটি গ্রামের নেজামুদ্দিন শেখের বাড়িতে এখন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। ওই বৃদ্ধের ছেলে পেশায় রাজমিস্ত্রি। কর্মসূত্রে নাগাল্যান্ডে থাকেন। দুয়ারে ভোট। ছেলে কবে বাড়ি ফিরবে সেটা জানতেই নেতাদের ভিড়।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৮
Share:

সুতির বালিয়াঘাটি গ্রামের নেজামুদ্দিন শেখের বাড়িতে এখন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। ওই বৃদ্ধের ছেলে পেশায় রাজমিস্ত্রি। কর্মসূত্রে নাগাল্যান্ডে থাকেন। দুয়ারে ভোট। ছেলে কবে বাড়ি ফিরবে সেটা জানতেই নেতাদের ভিড়। নেজামুদ্দিন বলছেন, “সকলেরই এক জিজ্ঞাসা, ছেলে কবে বাড়ি ফিরবে? বাড়িতে যেভাবে লোকজন খোঁজ নিতে আসছেন তাতে নিজেকেই কেমন ভিআইপি মনে হচ্ছে।”

Advertisement

নেজামুদ্দিন একা নন, মুর্শিদাবাদে কর্মসূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন তাঁদের সকলের বাড়িতেই দু’বেলা এমন ভিড় করছেন রাজনীতির লোকজন। কেউ কেউ আবার নিজের ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলছেন, “এসটিডি তো কী হয়েছে? এই ফোন থেকেই ছেলেকে একবার জিজ্ঞাসা করুন কবে নাগাদ সে আসতে পারবে।” কেউ কেউ আবার ‘দাদা চেয়েছে’ বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যাচ্ছেন মোবাইল নম্বরও।

জেলায় জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে ভোট ২৪ এপ্রিল। আর দু’ সপ্তাহও হাতে নেই। বহরমপুর কেন্দ্রে ভোট ১২ মে। হাতে সময় রয়েছে এখনও এক মাস। জেলা জুড়ে প্রায় সাত লক্ষেরও বেশি ভোটার কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। আর এই বিপুল সংখ্যক ভোটাররা ভোটের সময় আসবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত জেলার রাজনৈতিক দলের নেতারা। মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৪৩ লক্ষ ভোটার রয়েছেন। রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, বহরমপুর ছাড়া এবার জেলার দুই কেন্দ্রেই রীতিমতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। স্বভাবতই কংগ্রেস, তৃণমূল, বামফ্রণ্ট সব দলই চাইছে বাইরে কাজে যাওয়া এই বিরাট সংখ্যক ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে হাজির করাতে। বুথ স্তরের কংগ্রেস কর্মীদের ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে কোন দলের কত সমর্থক বাইরে আছে সেই খবর সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। সেইমতো তাঁরা খোঁজখবর নেওয়া শুরুও করেছেন।

Advertisement

মুর্শিদাবাদে তিনটি লোকসভা কেন্দ্রই কংগ্রেসের দখলে। গত নির্বাচনে বিজেপি থাকলেও তৃণমূল ছিল না। কিন্তু এবারের লোকসভা কংগ্রেসের কাছে যেমন মর্যাদার লড়াই, তৃণমূলের কাছে তেমনই অস্তিত্ব জানান দেওয়ার লড়াই। আর বামেদের লড়াই ঘুরে দাঁড়াবার। এই কারণেই জেলার ভোটারদের ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার তাগিদ রয়েছে প্রায় সব দলেরই।

কংগ্রেসের বিধায়ক আখরুজ্জামান বলেন, “এই মহূর্তে জেলার বাইরে থাকা ভোটারের সংখ্যা জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদেই প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ। বহরমপুরে সংখ্যাটা কিছু কম। বাইরে থাকা ভোটারদের মধ্যে কংগ্রেস সমর্থকের সংখ্যাই বেশি। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলের স্থানীয় নেতারা খুঁজে দেখছেন কারা কারা বাইরে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ভোটের আগে এলাকায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। আশা করছি প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটারকে শেষ পর্যন্ত ভোট দেওয়াতে পারব।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলছেন, “কাজের সূত্রে যেসব ভোটাররা বাইরে থাকেন তাঁদের নিয়ে আমরাও চিন্তায় রয়েছি। প্রতিটি এলাকায় দলীয় কর্মীদের এই বিষয়ে বার বার বলা হচ্ছে যাতে ওই ভোটারদের নিজের নিজের এলাকায় এনে ভোট দেওয়ানো যায়। মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন। আমাদের ধারণা, দেশের পরিস্থিতিটা তাঁরাও বুঝবেন। সকলে না আসতে পারলেও ৭০ শতাংশ মানুষ ভোটের সময় আসবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।”

হাত গুটিয়ে বসে নেই তৃণমূুলও। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য শেখ ফুরকান বলেন, “এ জেলায় তৃণমূলের লড়াই সম্মান রক্ষার। ২০০৯ সালের লোকসভায় আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছিলাম। তাই প্রার্থী দিইনি। ২০১২ সালের উপ নির্বাচনেও জঙ্গিপুরে প্রার্থী দিইনি। এ বারেই প্রথম একক ভাবে লড়ছি। তাই কোথাও এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নই। তাই যাঁরা বাইরে থাকেন ভোটের সময় তাঁরা যাতে ভোট দিতে আসেন সে ব্যাপারে আমরাও সবরকম ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি। ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া লোকজনের পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। বাড়ি থেকে তাঁদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে সেই ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। আশা করছি, বাইরে থাকা সাত লক্ষ ভোটারের অন্তত ৭৫ ভাগকেই ভোটকেন্দ্রে আনা যাবে। আর এটা সম্ভব হলেই জেলায় আশাতীত ফল করবে তৃণমূল।”

নেজামুদ্দিন বলছেন, “ছেলেদের বলেছি ২৪ এপ্রিল ভোট। কিন্তু যাতায়াত করতে সময়ের পাশাপাশি টাকাপয়সাও খরচ হয় যথেষ্ট। তাঁরা বলেছে চেষ্টা করবে।” অরঙ্গাবাদের খানাবাড়ির জ্যোৎস্না বিবি বলছেন, “স্বামী বাইরে থাকলেও ভোটের সময় ভোটটা কিন্তু দিতে আসে। এবারও দিন পাঁচেক আগে আসবে বলেছে।”

বহরমপুর লোকসভার বাগিরাপাড়ার সখিনা বিবির স্বামী ও দুই ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে চেন্নাইয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “স্বামী আসতে না পারলেও দুই ছেলেই ভোটের আগে চলে আসবে।” কয়াডাঙ্গার আকলেমা বেওয়ার দুই ছেলেই রাজমিস্ত্রির কাজে ওড়িশায় আছেন। আকলেমা বলছেন, “পার্টির লোকজন রোজই একবার করে বাড়িতে আসছে। ছেলেদের ফোন নম্বরও তাদের দিয়ে দিয়েছি। বলেছি, ছেলেদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে নিতে।”

এখন শুধু পরিবার নয়, কর্মসূত্রে বাইরে থাকা লোকজনের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছে রাজনৈতিক দলগুলোও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন