রাজ্য জুড়ে বেসামাল হলেও জঙ্গিপুর পুরসভায় তিন দশকের কর্তৃত্ব লোকসভা ভোটে ধরে রাখতে সক্ষম হল বামেরা। কিন্তু মোদী ঝড়ে যে ভাবে উঠে এসেছে বিজেপি, তাতে তাদের চিন্তা বেড়েছে বই কমেনি। ২০১৫তে জঙ্গিপুরে পুরভোট। বিজেপিকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূলও।
দীর্ঘ দিন ধরেই জঙ্গিপুর পুরসভা বামেদের দখলে। প্রায় ২২ বছর এই পুরসভার পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য। এখনও তিনি এই পুরসভার কাউন্সিলার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বহু চেষ্টা করেও মৃগাঙ্কবাবুকে হারিয়ে দখল করতে পারেননি এই বাম দুর্গ। ২০১০ সালের পুরভোটে স্বয়ং অধীর চৌধুরী বহরমপুর থেকে তাঁর অনুগত জেলা নেতাদের এনে জঙ্গিপুরে ঘাঁটি গেড়েও সুবিধা করতে পারেননি।
২০টি ওয়ার্ডের জঙ্গিপুর পুরসভায় বর্তমানে বামেদের সদস্য সংখ্যা ১২, কংগ্রেসের ৬ ও তৃণমূলের এক। এক বাম কাউন্সিলারের মৃত্যুতে একটি আসন আপাতত শূন্য। এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী ২০টি ওয়ার্ডের ১১টিতে এগিয়ে রয়েছে বামেরা। কংগ্রেস এগিয়ে ৩টি ওয়ার্ডে। মাঝখান থেকে পুর-রাজনীতিতে শূন্য স্থানে থাকা বিজেপি মোদী হাওয়ার দাপটে ৬টি ওয়ার্ড দখলে করে নিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বামেদের দখলে (১৫, ১৬ ও ১৯), দু’টি কংগ্রেসের, একটি তৃণমূলের।
বিজেপি-র মুর্শিদাবাদ উত্তর জেলা কমিটির সম্পাদক তথা জঙ্গিপুরের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী সম্রাট ঘোষ বলেন, “শুধুমাত্র এগিয়ে থাকা ৬টি ওয়ার্ডেই নয়, পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডেই নজর রাখছি আমরা। এমনকী সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওয়ার্ডগুলিতেও পুর-নির্বাচনে জঙ্গিপুরে প্রার্থী দেবে বিজেপি। কেন্দ্রে সরকার গঠনে বিপুল সাফল্য দেখে সংখ্যালঘু লোকজনও পুর-নির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছেন সিপিএমের এক কাউন্সিলার। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডটি আবার গত ২৫ বছর ধরে সিপিআইয়ের উপ-পুরপ্রধান অশোক সাহার খাসতালুক। এই ওয়ার্ড থেকে দু’বার জিতেছেন অশোকবাবু নিজে, দু’বার তাঁর স্ত্রী, একবার তাঁর দাদা।
সেখানে এ বারের ফলে বাম নেতৃত্ব চিন্তায় পড়লেও উপ-পুরপ্রধান বলেন, “২০১২ সালের উপনির্বাচনেও আমার ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল। এ বারও সেটাই হয়েছে। লোকসভা ভোট নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই। এই ওয়ার্ডে যা কাজ হয়েছে, তাতে পুরভোটে অন্য কোনও অঙ্ক কাজ করবে না।” তবে সিপিএমের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম মনে করছেন সাংগঠনিক ভাবে জনসংযোগে ত্রুটি রয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “এবারের লোকসভা ভোটে মানুষের ভাবাবেগ ছিল মোদী সরকারের উপর। আমাদেরও ত্রুটি ছিল। মানুষের কাছে ঠিক মতো পৌঁছতে পারিনি আমরা। হাতে এক বছর আছে। পুরভোটের আগে এই খামতি ঠিক কাটিয়ে উঠব আমর।”
অন্য দিকে, সামগ্রিক ভাবে জঙ্গিপুর পুরসভায় কোনও ওয়ার্ডেই এবারে সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি তৃণমূল। একমাত্র দখলে থাকা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপি-র দাপটে পিছিয়ে পড়েছে তারা। তৃণমূল নেতা গৌতম রুদ্রের স্ত্রী মনীষাদেবী ১৭ নম্বরে ওয়ার্ডের কাউন্সিলার। গৌতমবাবু বলেন, “লোকসভা ভোট আর পুরভোটের ব্যাপ্তিটা আলাদা। স্থানীয় ভাবে কে কতটা কাজ করতে পেরেছে সেটাই পুরভোটের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে। কাজেই এই ফল নিয়ে চিন্তা করছি না।” দলের রাজ্য কমিটির সদস্য শেখ ফুরকান বলেন, “এ বারের লোকসভা ভোটে পুরসভার ৫টি ওয়ার্ডে দল কিছুটা লড়াই দিয়েছে। পুর-নির্বাচনে এক বছর দেরি আছে। ২০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ওয়ার্ড কমিটি তৈরি করে, ভাল প্রার্থী দিয়ে এই ঘাটতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠব আমরা।”
জঙ্গিপুরে বিজেপি-র উত্থানে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় কংগ্রেস। যা অবস্থা, তাতে পুরসভার প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা না খোয়াতে হয় তাদের। ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩ বার জিতেছেন কংগ্রেসের বিকাশ নন্দ। সেই ওয়ার্ডেও এই লোকসভা ভোটে বিজেপি এগিয়ে। বিকাশবাবু বলেন, “লোকসভায় বিজেপি এগিয়েছে কারণ আমাদের বহু দলীয় সমর্থক মোদী হাওয়ায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। যাঁরা পুরসভায় আমাদেরই ভোট দেবে নআবার।” জঙ্গিপুর শহর কংগ্রেসের সভাপতি সঞ্জীব মণ্ডল জানান, লোকসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে ১৯ মে বহরমপুরে জেলা কংগ্রেসের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। লোকসভার ফলকে সামনে রেখে পুর-নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা।