জনসংযোগে কংগ্রেসের হাতিয়ার ফুটবল

গ্রামে গ্রামে বার্তাটা রটে গিয়েছিল দিন কয়েক আগেই। গাঁয়ের মাঠে ফুটবল প্রতিযোগিতা। হার-জিত যাই হোক না কেন ইজ্জত কা সওয়াল! আর সেই কারণেই দলের সঙ্গে তো বটেই, সেই সকাল থেকেই পিলপিল করে লোক জমতে শুরু করেছিল সাগরদিঘি স্কুল ফুটবল মাঠে। চারপাশে কালো মাথার ভিড়ের বহর দেখে হাসিটা ক্রমশ চওড়া হচ্ছিল স্থানীয় ব্লক কংগ্রেস নেতাদের। কেন আবার? ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজক যে তাঁরাই।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

সাগরদিঘিতে চলছে ফুটবল খেলা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি।

গ্রামে গ্রামে বার্তাটা রটে গিয়েছিল দিন কয়েক আগেই। গাঁয়ের মাঠে ফুটবল প্রতিযোগিতা। হার-জিত যাই হোক না কেন ইজ্জত কা সওয়াল! আর সেই কারণেই দলের সঙ্গে তো বটেই, সেই সকাল থেকেই পিলপিল করে লোক জমতে শুরু করেছিল সাগরদিঘি স্কুল ফুটবল মাঠে। চারপাশে কালো মাথার ভিড়ের বহর দেখে হাসিটা ক্রমশ চওড়া হচ্ছিল স্থানীয় ব্লক কংগ্রেস নেতাদের। কেন আবার? ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজক যে তাঁরাই। সামনে বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে জনসংযোগ বাড়াতে গত শনি ও রবিবার নকআউট ফুটবল প্রতিযোগিতায় আয়োজন করেছিল সাগরদিঘি ব্লক কংগ্রেস। দোসর ছিল কংগ্রেসের অন্যান্য শাখা সংগঠনগুলোও।

Advertisement

‘বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছি না, একটু ব্যবস্থা করে দে বাপু’, ‘আমাদের এলাকার মিড মিলের অবস্থা খুবই খারাপ, আপনারা কিছু একটা করুন’, কিংবা ‘জানেন, গৌরীপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তো চিকিৎসকই থাকে না’--- এরকম নানা অভাব-অভিযোগের কথাও নেতাদের জানালেন সাগরদিঘির ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে খেলা দেখতে আসা বহু মানুষ। কংগ্রেসের নেতারা সে সব মন দিয়ে শুনলেন। আশ্বাসও দিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস কতটা জুতসই হল তা নিয়ে অবশ্য একটা প্রশ্ন থেকেই গেল। জেলা পরিষদ ও জেলার অর্ধেকের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেসের দখলে। তবুও রাজ্যে বিরোধী দল হিসেবে তাদের ক্ষমতা যে সীমিত তা বুঝিয়ে দিয়েই উদ্যোক্তাদের অন্যতম জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলছিলেন, “কংগ্রেস আপনাদের পাশে আছে। যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে প্রতিবাদ করতে হবে।”

কিন্তু এই দাওয়াই কতটা কাজে দেবে? আমিনুলের জবাব, “আজও মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দেন। ফুটবলে মাঠে লোকজনের উপস্থিতিটা একবার দেখলেন! আমরাও যে ওঁদের সঙ্গে আছি এই বার্তাটা তো ফুটবলের মাধ্যমে দিতে পেরেছি। এটাও কিন্তু একটা বড় ব্যাপার।” বিধানসভাকে মাথায় রেখে ফুটবলের মাধ্যমে কংগ্রেস যে আসলে নিজেদের ঘর গোছাতে শুরু করেছে সে কথা কবুল করছেন কংগ্রেসের অন্য নেতারাও। সাগরদিঘি ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি অলোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলের সমস্ত শাখা সংগঠনকে এখন থেকেই সঙ্ঘবদ্ধ করা ও ফুটবলের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনকে আরও কাছে টানা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।”

Advertisement

সাগরদিঘিতে তৃণমূল এখন দু’ভাগে বিভক্ত। পঞ্চায়েত সমিতি ও তৃণমূলের নয়া কমিটি গঠন সেই বিরোধকে আরও উসকে দিয়েছে। সম্প্রতি ১১ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূল ছেড়েছেন। এই এলাকায় বিজেপি ও বামেদেরও মাটি তেমন শক্ত নয়। লোকসভাতেও কংগ্রেস ভাল ফল করেছে। কংগ্রেসের পালে হাওয়া এখন খারাপ নয়। আর এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আগামী বিধানসভার আগে পর্যন্ত এরকম খেলা, মেলা-সহ নানা রকম আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। সাগরদিঘি পূর্ব ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি নিরঞ্জন সিংহ বলেন, “সাগরদিঘিতে ফুটবল নিয়ে একটা আলাদা উন্মাদনা আছে। আর সেটাকে কাজে লাগিয়েই সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমরা আরও মিশে যেতে চাইছি।”

স্থানীয় আদিবাসী নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক অন্তন হেমব্রম বলছেন, “সাগরদিঘিতে প্রায় ৩২টি আদিবাসী গ্রাম আছে। গ্রামের সকলেই ফুটবল বলতে পাগল। এলাকায় ফুটবল খেলা হলেও এ ভাবে দু’দিন ধরে কোনও প্রতিযোগিতা এর আগে হয়নি। ফলে আমরা সকলেই খুব খুশি।”

এলাকার ১৬টি দল যোগ দিয়েছিল ওই প্রতিযোগিতায়। রবিবার মণিগ্রাম আদিবাসী ব্ল্যাক ডায়মন্ড ও ফুলবন আদিবাসী ক্লাব ফাইনালে উঠেছে। আগামী ২১ ডিসেম্বর ওই দুটি দল মুখোমুখি হবে সাগরদিঘি স্কুলের ফুটবল মাঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন