সোমবার রাতের প্রবল ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন জেলার চাষিরা। ওইদিন জেলার সর্বত্র ঝড় হলেও করিমপুর ২ ব্লকের ধোড়াদহ ১ ও ধোড়াদহ ২ পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন করিমপুর ২ ব্লকের বিডিও।
এলাকায় ভেঙেছে বহু অনেক বাড়ি। ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। মাঠের বেগুন, পটল, লঙ্কা থেকে আম কাঁঠালের গাছ সবই নষ্ট হয়েছএ এ দিনের ঝড়ে।
ধোড়াদহ ২ পঞ্চায়েত এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কলা ও সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত। দোগাছির রাজিবুল শেখ জানালেন, তাঁর প্রায় তিন বিঘা জমিতে কলাবাগান ছিল। সব নষ্ট হয়েছে। লাল মহম্মদ শেখেরও পাঁচ বিঘা কলাবাগান ওই দিনের ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে। লাল মহম্মদ বলেন, “কলাবাগানের উপর নির্ভর করে আমাদের সংসার চলে। সব নষ্ট হয়ে গেল। এতদিনে কলার জমিতে খরচ যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। মজুর, সার ও জলের খরচ করে সবে গাছে কলা ফলতে শুরু করেছিল। এখন কলা বিক্রি করে ঘরে টাকা আসার সময়। ঠিক সেইসময় এই ঝড় হওয়াতে সর্বনাশ হয়ে গেল।”
লাল মহম্মদের বাগানের ৩০০ কাদি কলা ৪০০ টাকা দরে বিক্রির কথা ছিল আগের দিনই। কিন্তু সেদিন বিক্রি করা যায়নি। তাই সেই টাকাটাও পেলেন না।
ঝড়ের তাণ্ডবে চুরমার হয়েছে এলাকার অনেক বাড়ি ঘর। পশ্চিম দোগাছির আবজার মোল্লা বলেন, “আমাদের শেষ সম্বল বাঁশ আর টালির একটা ঘর। রাতে আচমকা মেঘের গর্জন, আর তার সঙ্গে দমকা হাওয়ায় ঘরের টালির চাল মাথার উপর ভেঙে পড়ে। ভাঙা ঘরের নিচে চাপা পড়ি আমি আর আমার স্ত্রী।” অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত বের হতে পেরেছিলেন আবজার মোল্লা। প্রাণে বেঁচেছেন স্ত্রীও। কিন্তু মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও এখন আর নেই।
ধোড়াদহ ২ পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের তহমিনা বিবি মণ্ডল বলেন, সোমবার রাতের ঝড়ে আমার পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৭০০ বিঘা কলা, ২০০ বিঘা বেগুন, লঙ্কা, পটল ও আম কাঁঠাল বাগানের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৬০ টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে আরও ১০০ টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। যাঁদের ক্ষতি হয়েছে তাঁরা পঞ্চায়েতে দরখাস্ত জমা দিচ্ছে। গত কাল এডিএ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা দেখে গিয়েছেন। তাছাড়া আমিও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে একটা রিপোর্ট বিডিওর কাছে পাঠিয়েছি। বিডিও আপাতত ৪০ টি ত্রিপল পাঠানোর কথা বলেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের ধোড়াদহ ২ অঞ্চল সভাপতি রেজাউল শেখ বলেন, “ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মঙ্গলবার এডিএ এবং বিডিওর একজন প্রতিনিধি এসেছিলেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে নিয়ে গিয়েছেন। সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়ে গিয়েছেন।”
করিমপুর ১ বিডিও তাপস কুণ্ডু জানান, এডিএ ও পঞ্চায়েতের একজন এক্সিকিউটিভ অফিসারের দেওয়া রিপোর্ট দেখে আমি এসডিও কে পাঠিয়ে দেব। তেহট্টের মহকুমা শাসক অর্ণব চ্যাটার্জি বলেন, “বিডিওর রিপোর্ট আমি এখনও হাতে পাইনি। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।