টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রণক্ষেত্র বগুলা কলেজ

পরীক্ষা চলাকালীন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে উত্তাল হয়ে উঠল বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজ। ভাঙচুর চালানো হয়েছে কলেজে। জখম হয়েছে বেশ কয়েক জন ছাত্র। তাঁদের মধ্যে তিন জন বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার এই ঘটনার জেরে প্রায় ঘণ্টাখানেক কৃষ্ণনগর-বগুলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

বগুলা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

পরীক্ষা চলাকালীন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে উত্তাল হয়ে উঠল বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজ। ভাঙচুর চালানো হয়েছে কলেজে। জখম হয়েছে বেশ কয়েক জন ছাত্র। তাঁদের মধ্যে তিন জন বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার এই ঘটনার জেরে প্রায় ঘণ্টাখানেক কৃষ্ণনগর-বগুলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ফলে চরম হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। পরে হাঁসখালি থানার পুলিশ গিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “বগুলার কলেজে দুই দল ছাত্রের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। একটা অভিযোগও দায়ের হয়েছে। গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখে যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপি এর দখলে। প্রথম বর্ষে ভর্তি নিয়ে প্রথম থেকেই সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। দুই গোষ্ঠীই কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে রাখার জন্য মরিয়া। এর আগে দু’একবার গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার তা চরম আকার নেয়।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ কলেজের ভিতরে দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট শুরু হয়। বাঁশ, লাঠি ও রড নিয়ে তারা পরস্পরের উপরে ঝাপিয়ে পড়ে। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় কলেজের ছাত্র সংসদ। ভাঙচুর করা হয়েছে টিচার্স রুমের সামনের কাচ, নোটিস বোর্ড ও বেশ কয়েকটি মোটর বাইক। উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। এ দিন দুপুর দু’টো থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত কলেজের প্রথম বর্ষের আবশ্যিক ইংরেজির পরীক্ষা ছিল। ঘর থেকে পরীক্ষার্থীদের বের করে এনেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক শুকদেব ঘোষ বলেন, ‘‘পরীক্ষার একেবারে শেষ মুহূর্তে কলেজের ভিতরে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে একদল ছাত্র। তবে পরীক্ষা চলাকালীন গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটলেও পরীক্ষায় কোনও সমস্যা হয়নি।’’

তবে কলেজের কর্মীদেরই একাংশ অবশ্য জানান, কলেজের ভিতরে এ ভাবে দুই দল ছাত্রের মধ্য সংঘর্ষ চলায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে এসে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। কলেজর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রনি দত্ত বলেন, ‘‘বিকেল চারটে নাগাদ একদল বহিরাগত হঠাৎ দশ-বারোটা মোটরবাইকে করে কলেজের ভিতরে ঢুকে আমাদের ছেলেদের উপরে আচমকা হামলা চালায়। তারা বাঁশ, লাঠি, লোহার রড নিয়ে আমাদের ছেলেদের মারতে থাকে। কলেজে ভাঙচুর করে। ছাত্র সংসদে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে। আমাদের নেত্রীর ছবিও ভেঙে দিয়েছে। ’’ তিনি বলেন, ‘‘ওরা আগে কলেজে পড়ত। এখন আর পড়ে না। কিন্তু কলেজের ছাত্র ভর্তি করে টাকা আয় করার জন্য কলেজে দখল ছাড়তে চাইছে না। আমারা এ বার স্বচ্ছ ভাবে ভর্তি করতে চেয়েছি। তাতেই ওরা খেপে গিয়ে আমাদের উপরে চড়াও হয়েছে। আমাদের ছেলেরা জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।” বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত শতদল বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘এই বছরেই আমি তৃতীয় বর্ষে পাশ করেছি। বিকেলে আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে কলেজে গিয়েছিলাম। হঠাৎ ওরা আমার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। আমাদেরই সংগঠনের ছেলেরা ঠেকাতে এলে তাদেরকেও বাঁশ ও লোহার রড দিয়ে মারতে থাকে। আমরা কোনও রকমে পালিয়ে এসে প্রানে বেঁচেছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আসলে এ বার ছাত্র ভর্তি করতে গিয়ে মোটা টাকা আয় করেছে ছাত্র সংসদ। আমরা তাতে বাধা দেওয়াতেই আমাদের উপরে এই হামলা।’’

Advertisement

তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন, “বগুলার কলেজে বেশ কিছু দুষ্কৃতী আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে। যারা হামলা চালিয়েছে তারা বহিরাগত। তাদের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা চাই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করুক।” এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, ‘‘আসলে কলেজে ভর্তির টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল চলছিল। এদিন তা চরম আকার নিয়েছে।’’

বগুলার নোনাগঞ্জ মোড় থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে যানজটে জেরবার থাকেন এলাকার মানুষ। দিনের বেশির ভাগ সময়েই এই রাস্তাটুকু পার হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তার উপরে বৃহস্পতিবার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাস্তা অবরোধ করায় চরম হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, “কলেজে টাকার বখরা নিয়ে নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল। অথচ তার জেরে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে এ ভাবে হয়রান করাটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ কিন্তু কেন কলেজের ভিতরের গণ্ডগোল বাইরে নিয়ে এসে সাধারণ মানুষকে হয়রান করা হল? রানাঘাট উত্তর-পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের সমীর পোদ্দার বলেন, “আমরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোকে সমর্থন করি না। যখনই জানতে পেরেছি যে আমাদের ছেলেরা পথ অবরোধ করেছে তখনই আমি ফোন করে অবরোধ তুলে নিতে বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন