রাস্তার ধারেই চলছে ব্যবসা (বাঁ দিকে)। অন্যদিকে অবহেলায় পড়ে রয়েছে বাজার ভবন। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যবসা করতে এসে গুলতি নিয়ে কাক তাড়াতে হয়, আবার কাউকে লাঠি নিয়ে ছুটতে হয় কুকুরের পেছনে। কান্দি-সাঁইথিয়া রাজ্য সড়কের ধারে খোলা আকাশের নীচে এভাবেই চলে ছানা-চাঁচির ব্যবসা। কান্দি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় বিকিকিনি চলে রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরেও। অথচ শুধু এই ছানা-চাঁচি ব্যবসায়ীদের জন্য এক দশক আগে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ তৈরি করেছিল একটি ভবন। দশ কাঠা জায়গা জুড়ে কান্দি বাসস্ট্যান্ডের কাছে সেই ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। জেলা পরিষদ যে কেন ওই বাজার ভবন চালু করতে পারছে না তা জানা নেই এলাকার ব্যবসায়ীদের।
২০০৫ সালে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস কান্দি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কানা ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ওই বাজারটি তৈরি করেছিল। রয়েছে নয়টি ঘর। তাছাড়াও ছানার বাজারের উপযোগী শেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই ভবনে কোনও দিন ছানার বাজার বসেনি। জেলা পরিষদ ওই ভবনটির কক্ষগুলি বিলি-বণ্টনই করতে পারেনি। বাড়ি তৈরি হয়ে গেলেও এখনও নেই কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ। গোটা ভবনটিতে শৌচাগারের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দশ বছর ধরে বাড়িটি একই ভাবে পড়ে আছে। ব্যবহার তো হয়ই না, নেই রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও। তাই সরকারি অর্থ ব্যয় করে তৈরি করা ভবনটির দেওয়ালে ফাটল ধরছে। লোকসমাগম একেবারেই না থাকায় দিনের আলোতেই বসে মদ-গাঁজার আসর। রাতের অন্ধকার নামলে বাড়ে অসামাজিক কাজকর্ম। অথচ, প্রতিদিন গড়ে কান্দি বাজার থেকে প্রায় দেড় টন ছানা ও কুড়ি টন চাঁচি আমদানি হয়। ওই পাইকারি বাজারে কান্দি মহকুমার কান্দি, বড়ঞা, খড়গ্রাম, ভরতপুর ছাড়াও বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর থানা ও বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানা এলাকার বহু ছানা ব্যাবসায়ী আসেন। আবার ওই বাজার থেকে বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ছাড়াও ভিন্ রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ডের মিষ্টি ব্যাবসায়ীরা ওই বাজার থেকে ছানা নিয়ে যায়। আর চাঁচি যায় কলকাতা, শিলিগুড়ি, অসমে। বিকেল থেকে কেনা বেচা শুরু হয়। চলে মাঝরাত পর্যন্ত। কান্দি-সাঁইথিয়া রাজ্য সড়কের ধারে অশ্বত্থ গাছের নীচেই বসে বাজার। বিকেলে গাছের ডালে ভিড় করে কাকের দল। ব্যবসায়ীরা অন্যমনস্ক হলেই ছোঁ মেরে নিয়ে যায় ছানা। ছানা ভর্তি পাত্রের পাশে ঘোরাফেরা করে কুকুরের দল। পাত্রের গায়ে লেগে থাকা ছানা মুখ দিয়ে খেতেও দেখা যায় কিছুক্ষণ ওই বাজারে দাঁড়িয়ে থাকলে। তাছাড়া যানবাহনের ধোঁওয়া, ধুলো তো রয়েছেই। ওই বাজারের ৩৫ বছর ব্যবসা করছেন নল ঘোষ। তিনি বলেন, “আমি ওই বাজারে ভবনে ঘর চেয়ে একবার একশো টাকা দিয়ে আবেদন করে ছিলাম। সে ঘর আমি আজও পাইনি। তাহলে এত টাকা খরচ করে ওই বাজার ভবন তৈরি করার দরকার কী ছিল?” আর এক ব্যবসায়ী বসুদেব ঘোষ বলেন, “জায়গার অভাবে আমাদের রাস্তার ধারে ব্যবসা করতে হয়। অথচ ওই বাজার ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কারও হেলদোল নেই।”
জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার বলেন, “গোটা জেলায় কান্দি মহকুমা দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বেশি হয়। ওই বাজার থেকে বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যেও ছানা-চাঁচি সরবরাহ হয়। ওই বাজারটি জেলা পরিষদ তৈরি করেছিল। কেন সেটা চালু করা যায়নি, খোঁজ নিয়ে দেখছি। দ্রুত যাতে ওই বাজারটি চালু করা যায় সেই ব্যবস্থা করব।”