করিমপুর

থানায় ফোন করে হুকুম, দু’বোতল দিশি তাড়াতাড়ি

ফোনটা একবার বেজেই কেটে গিয়েছিল। পরের বার রিং হতেই তড়িঘড়ি রিসিভার তুলেছিলেন ডিউটি অফিসার, “নমস্কার, করিমপুর থানা..।”

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১০
Share:

ফোনটা একবার বেজেই কেটে গিয়েছিল। পরের বার রিং হতেই তড়িঘড়ি রিসিভার তুলেছিলেন ডিউটি অফিসার, “নমস্কার, করিমপুর থানা..।”

Advertisement

কথা শেষ করতে না দিয়েই ফোনের অন্য প্রান্ত ধমকে ওঠে, “বাজে কথা রাখ। তাড়াতাড়ি দু’বোতল দিশি আর ছোলাভাজা পাঠিয়ে দে।” মাঘের শেষ সন্ধ্যার শীত আর এমন ফোনের যুগল চাপে রীতিমতো চুপসে গিয়েছিলেন কড়া মেজাজের ওই ডিউটি অফিসার। যান্ত্রিক কোনও গোলযোগ ভেবে কাজে মন দিতেই ফের বেজে ওঠে ফোন। এবার আর দিশি-টিশি নয়, একেবারে টপ-আপ। মহিলা কন্ঠে কাতর অনুরোধ, “আমার এই ফোন নম্বরে কুড়িটা টাকা রিজার্জ করে দেবেন?”

এটা দু’একদিনের ঘটনা নয়। নয় যান্ত্রিক কোনও গোলযোগও। গত কয়েক মাস ধরে এমন সব ফোনের গুঁতোয় নাজেহাল করিমপুর থানার পুলিশ। একই ভাবে করিমপুর দমকলেও রাতদুপুরে ‘মনের আগুন নেভানো’ কিংবা ‘একটা গান শোনাবেন’- এর মতো ফোন আসছে অহরহ। তাই বলে খোদ থানায় ফোন করে দিশি কিংবা রিচার্জের কথা!

Advertisement

যা শুনে থানার এক আধিকারিক বলছেন, “সেই গানটা শুনেছেন তো? কত কী যে সয়ে যেতে হয়...। ওই ভালবাসার জায়গায় পুলিশ শব্দটা বসিয়ে দিয়েছি। ফলে এখন সবই সহ্য করতে হচ্ছে!”

কিন্তু ফোনগুলো থানায় আসছে কী ভাবে? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টোল ফ্রি ১০০ নম্বর ডায়াল করলেই ফোন চলে যাওয়ার কথা স্থানীয় থানায়। যেহেতু ওই নম্বর টোল ফ্রি, তাই যে কেউই যখন তখন মোবাইল কিংবা ল্যান্ডফোন থেকে এ ভাবে ফোন করে বিরক্ত করছে। করিমপুর থানায় এই ফোন-অত্যাচারে অতিষ্ঠ পুলিশকর্মীরা।

থানার এক পুলিশকর্মী বলছেন, “এইসব ফোনের কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। তার মধ্যে আবার গুরুত্বপূর্ণ ফোনও তো আসছে। ধরুন, প্রথম ফোনটা এল অমুক জায়গায় গোলমাল। ঠিক তার পরের ফোনটা এল নতুন সিনেমা কী এসেছে জানতে চেয়ে। কাজের সময় এ সব কারও ভাল লাগে?”

আর এক পুলিশকর্মী হাসতে হাসতে বলছেন, “দিনকয়েক আগে বেশ রাতের দিকে একটা ফোন এসেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই ফোন ধরে আমি বলেছি নমস্কার, করিমপুর থানা। শুনে ও প্রান্তের গলা বলল, ‘যাঃ, আমার আগেই আপনি বলে দিলেন?’ এরপর ফোনটা রেখে দিয়েছিলাম।”

কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন? জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, “আমরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। কারা এই ফোনগুলো করছে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।” নদিয়ার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলছেন, “বিপদগ্রস্ত মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্যই এই ১০০ নম্বর। কিছু নিম্নরুচির মানুষ এ ভাবে ওই জরুরি নম্বরে ফোন করে সকলকেই বিব্রত করছে। আমরাও কড়া নজর রাখছি। ধরা পড়লেই তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”

তাঁর সংযোজন, “এই জরুরি নম্বরে এ ভাবে ফোন করলে সেই নম্বরটিও তো অহেতুক ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে বিপদে পড়েও অনেকে সেখানে ফোন করতে পারেন না। আমরা সম্প্রতি জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে নদিয়ার সব থানার পুলিশ আধিকারিক ও ওসিদের নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিপদে পড়লে সেই নম্বরেও ফোন করা যাবে।”

শুধু থানা নয়, এই অহেতুর ফোনের জ্বালায় অতিষ্ঠ করিমপুর দমকলও। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও রাতদুপুরে এমন অনেক ফোন আসে যা শুনে প্রথমে পিলে চমকে যেত। এখন অবশ্য তা সকলেরই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।

দমকলের ওসি সুখেন সরকার বলেন, “পুলিশের যেমন ১০০, তেমনি দমকলের টোল ফ্রি নম্বর ১০১। ফলে একই ভাবে বিব্রত আমরাও। মানুষ সচেতন না হলে এই অভ্যাস বন্ধ করা কঠিন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন