দলের কোনও কমিটিতে নেই প্রাক্তন মন্ত্রীরা

লোকসভা ভোটে এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী না জেতায় ইস্তফা দিতে হয়েছে কোনও মন্ত্রীকে, কোনও মন্ত্রীর বদলি হয়েছে গুরুত্বহীন দফতরে। এ বার মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের কোনও কমিটিতেই নাম রইল না দুই প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর এবং সুব্রত সাহার। একই দশা হল জেলায় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা সাগির হোসেন এবং মহম্মদ আলিরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৯
Share:

সভা থেকে বেরিয়ে আসছেন হুমায়ুন কবীর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

লোকসভা ভোটে এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী না জেতায় ইস্তফা দিতে হয়েছে কোনও মন্ত্রীকে, কোনও মন্ত্রীর বদলি হয়েছে গুরুত্বহীন দফতরে। এ বার মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের কোনও কমিটিতেই নাম রইল না দুই প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর এবং সুব্রত সাহার। একই দশা হল জেলায় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা সাগির হোসেন এবং মহম্মদ আলিরও।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবার বহরমপুরে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জেলায় দলের বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করার পরে, যাঁদের নাম কমিটিতে নেই বৈঠক ছেড়ে তাঁদের বেরিয়ে যেতে বলেন জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন। আপত্তি না করে বাইরে বেরিয়ে যাওয়া তৃণমূল নেতারা আর মুখ খোলেননি। ফোন বন্ধ করে দেন সুব্রত সাহা, মহম্মদ আলিরা। তৃণমূল সংত্রের খবর, সংবাদমাধ্যমের কাছে বৈঠকের ব্যাপারে বা কমিটি গঠন নিয়ে কারও কোনও বক্তব্য দেখতে পেলে ইন্দ্রনীল বিষয়টি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানোর ‘হুমকি’ও দেন। তাই নেতাদের মুখে কুলুপ পড়ে। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে হুমায়ুন কবীর বলেছেন, এই ‘অপমান’ তিনি হজম করবেন না।

লোকসভা ভোটে দল যখন বহরমপুরে ইন্দ্রনীল সেনকে প্রার্থী বাছে, অভিমানে ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নেওয়ার কথা বলেছিলেন হুমায়ুন। তার পরে দু’পক্ষের সম্পর্কটা কখনও অম্ল, কখনও মধুর বলেই দেখেছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটের আগে ইন্দ্রনীল ‘মুর্শিদাবাদে তৃণমূল নেতাদের একাংশ ভোটের আগে কংগ্রেসের কাছে বিক্রি হয়ে যান’ বলে মন্তব্য করায় দলের অন্দরেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেই বিতর্কের রেশ না কাটতেই গায়ক-প্রার্থী দলের নেতাদের ‘ক্যানসার’ এবং তাঁদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করায় অস্বস্তিতে পড়ে জেলা তৃণমূল। দু’টি ক্ষেত্রেই হুমায়ুন সরাসরি ইন্দ্রনীলকে আক্রমণের রাস্তায় হাঁটেননি।তবে বলেছিলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলায় আমাদের সংগঠন কেন শক্তিশালী হচ্ছে না, সেটা এই জেলা ও রাজ্যের নেতারাও জানেন।” সে সময় মন্তব্য করে বিতর্কে জড়াননি সুব্রত সাহা, মহম্মদ আলিরা।

Advertisement

ভোট পেরনো অবধি ইন্দ্রনীলের সঙ্গে জেলার নেতাদের কোনও সংঘাত না হলেও, জেলা তৃণমূলের একাংশের ধারণা ছিল, সংঘর্ষের ক্ষেত্র তৈরি হয়েই রয়েছে। হুমায়ুনের সঙ্গে জেলা রাজনীতিতে তাঁর বিপক্ষ শিবিরের নেতা বলে পরিচিত সুব্রত সাহা, মহম্মদ আলিরাও পদ না পাওয়ায় জেলা তৃণমূলের একটা অংশ মনে করছেন, নতুন মুখ এনে সংগঠন বাড়ানোর উদ্দেশে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে, এ বার সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস, ভগবানগোলার বিধায়ক চাঁদ মহম্মদ আর দলের জেলা-নেতা সুবোধ

দাসকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুনদের সামনে রেখে দলের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘কে আগে, কে পরে দলে এসেছেন, সেটা মাপকাঠি নয়’।

জেলা তৃণমূলের একটি সূত্র আবার দাবি করেছে, বেশ কয়েকজন বিরোধী দলের বিধায়ক ও নেতা তৃণমূলে যোগ দিতে চান। রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তাঁরা এ ব্যাপারে আবেদনও করেছেন। কিন্তু মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের বিভিন্ন পদাধিকারীর সঙ্গে তাঁদের বনিবনা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কমিটিতে মুখ বদলের সেটাও একটা কারণ হতে পারে। তা ছাড়া, কিছু নেতার দল-বিরোধী কাজের জন্য লোকসভা ভোটে দলের ফল খারাপ হয়েছে বলেও খবর ছিল দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। সেই সব মিলিয়েই এ দিনের সিদ্ধান্ত। ইন্দ্রনীল অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

এ দিন বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে তৃণমূলের সব মাপের নেতাদেরই মোবাইল জমা রাখতে হয়েছে। খাতায় নিজেদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে হয়েছে। দলের কথা দলের অন্দরে রাখতেই এই কড়াকড়ি বলে

জানা গেলেও, জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র আশিস রায়চৌধুরীর দাবি, “ঘনঘন মোবাইল বেজে উঠলে বৈঠকে বিঘ্ন হয়। তাই মোবাইল সভাঘরের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল।”

তৃণমূল-অন্দরের খবর, হুমায়ুন এ দিন বহরমপুর থেকে রেজিনগরের বাড়িতে ফিরেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে তিনি কলকাতায়

এসে এ ব্যাপারে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন