নবীন সদস্যদের প্রশিক্ষণ, নদিয়ায় শিবির বিজেপির

প্রশিক্ষণ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে ‘পড়ুয়াদের’ ভূমিকায় মুচকি হাসছেন ‘স্যারেরা’। ‘পরের প্রশ্ন রাষ্ট্র কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন?’ শিবিরে চাপা ফিসফাস, ‘ঈশ! একটু আগেই শুনলাম। ম্যাকিয়াভেলি না মার্ক্স রে?’ পাশ থেকে আলতো কনুইয়ের গুঁতো, ‘না রে, মনে হচ্ছে অ্যারিস্টটল। সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।’ এ বার গম্ভীর গলায় একজন বললেন, “শিবির চলাকালীন আপনাদের মনোযোগী হতে হবে। সঠিক উত্তর ফরাসি চিন্তাবিদ বোঁদ্যা।”

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৫
Share:

‘ভারতীয় সংবিধানের জনক কে?’

Advertisement

প্রশ্নটা শুনে অনেকগুলো হাত একসঙ্গে উঠে গেল। উত্তরটা কে দেবে সেটা ঠিক না হতেই সমস্বরে ভেসে এল‘বি আর অম্বেডকর।’

প্রশিক্ষণ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে ‘পড়ুয়াদের’ ভূমিকায় মুচকি হাসছেন ‘স্যারেরা’।

Advertisement

‘পরের প্রশ্ন রাষ্ট্র কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন?’

শিবিরে চাপা ফিসফাস, ‘ঈশ! একটু আগেই শুনলাম। ম্যাকিয়াভেলি না মার্ক্স রে?’ পাশ থেকে আলতো কনুইয়ের গুঁতো, ‘না রে, মনে হচ্ছে অ্যারিস্টটল। সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।’

এ বার গম্ভীর গলায় একজন বললেন, “শিবির চলাকালীন আপনাদের মনোযোগী হতে হবে। সঠিক উত্তর ফরাসি চিন্তাবিদ বোঁদ্যা।”

গত মাস দু’য়েক ধরে নদিয়া জেলা জুড়ে এ ভাবেই চলছে বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবির। শ’দেড়েক লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অর্থনীতি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক কিংবা গবেষকরা। উদ্দেশ্য, দলের জন্য স্থানীয় এবং জেলা পর্যায়ে নতুন মুখ খুঁজে আনা। যাঁরা আগামী দিনে বিজেপি-র ‘মিশন ২০১৬’ সফল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। তবে নদিয়ায় এমন প্রশিক্ষণ শিবির এই প্রথম নয়। গত লোকসভা ভোটের আগে সুবক্তা তৈরি করতে এমনই বেশ কয়েকটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সেখানে অবশ্য প্রশিক্ষক হিসাবে ছিলেন সুবক্তা হিসাবে পরিচিত স্থানীয় তৃণমূল নেতা, বাচিক শিল্পী ও নাট্যকর্মীরা।

কী হচ্ছে বিজেপি-র প্রশিক্ষণ শিবিরে? দলীয় সূত্রে খবর, এক একটি শিবিরে থাকছেন দেড়শো থেকে দু’শো লোক। তাঁদের সিংহভাগই তরুণ প্রজন্মের। সদ্য তাঁরা বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। প্রথম পর্বে সকাল থেকে শুরু হচ্ছে রীতিমতো বিষয় ভিত্তিক পড়াশুনো। অ্যারিস্টটল থেকে মিল, বেন্থাম, মার্ক্স, বোঁদ্যা থেকে মোদী, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দীনদয়াল উপাধ্যায়, বাজপেয়ী কে নেই সেই তালিকায়? দিনের শেষে পড়ুয়াদের মূল্যায়নের পরে ঠিক হচ্ছে পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণ শিবিরে কারা যাবেন।

আগামী বিধানসভাকে পাখির চোখ করে জেলায় একের পর এক শিবির করছে বিজেপি। সম্প্রতি নদিয়ায় এমনই এক প্রশিক্ষণ শিবিরে ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্য এবং জেলা স্তরের নেতারা। প্রতাপবাবু বলেন, “নতুনদের সব সময় স্বাগত। তবে বিজেপি আর পাঁচটা দলের থেকে আলাদা। নতুন যাঁরা আসছেন তাঁদের রাষ্ট্রের কথা, ব্যক্তির কথা, দেশের ইতিহাস, বিজেপি-র ইতিহাস সব জানতে হবে। নানা বয়সের নতুন সদস্যদের সে সব জানানোর জন্যই এই ধরনের শিবিরের আয়োজন।”

বিজেপির নদিয়া জেলার মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “প্রতিটি শিবির থেকে ৩০ বা ৩৫ জনকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। যাঁরা পরবর্তী ধাপের জেলা ভিত্তিক শিবিরে যোগ দিতে পারবেন। আগামী দিনে তাঁরাই জেলার গ্রাম-শহরে বিজেপিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।”

সম্প্রতি প্রশিক্ষণ শিবিরে এসেছিলেন তরুণ প্রজন্মের বিপুল মণ্ডল, অমিত দাস ও সমীর কর্মকারেরা। এর আগে তাঁরা কেউই কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের বি কম প্রথম বর্ষের ছাত্র সমীর বলেন, “বিজেপিতে যোগ দিয়েই রাজনীতির হাতেখড়ি। তবে এতদিন অর্থনীতি বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়তে হতো পরীক্ষায় পাশ করার জন্য। এখন রাজনীতি করতে গেলেও দেখছি বিস্তর পড়াশোনা করতে হচ্ছে।”

এক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা মন্থনা সাহাও এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়েছেন। তিনি বলছেন, “এতদিন জানতাম রাজনৈতিক দল মানেই শুধু মিটিং-মিছিল-প্রতিশ্রুতি। শুনেছিলাম, বামপন্থী দলে সদস্যদের নিয়ে রাজনৈতিক ক্লাস হয়। কিন্তু নতুন সদস্যদের নিয়ে এ ভাবে শিবির? বিজেপি-র এই শিবিরে না এলে সেটা জানতেই পারতাম না।”

আবার পরবর্তীতে জেলার শিবিরের জন্য যাঁরা সুযোগ পেলেন না তাঁরাও কিন্তু হাল ছাড়ছেন না। বলছেন, “জেলা শিবিরে নিশ্চয় একদিন যাওয়ার সুযোগ পাব। কিন্তু এখানে এসে যা শিখলাম সেটাই বা কম কী?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement