সিঁড়ির কোনায় পানের পিক বা দেওয়ালে থুথু ফেলার আর জো নেই। ধূমপান করারও উপায় নেই অফিস চত্বরে। ওত পেতে আছে ২২টি ক্লোজড সার্কিট টিভি।
থুতু, পিক ফেললে, ধূমপান করলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনার ঘরের টিভির পর্দায় ধরা পড়ছে সেই দৃশ্য। নেহাত ব্যক্তিগত কারণে দিন কয়েক আগে মিনিট দু’য়েকের জন্য দফতরের পিছনে গিয়েছিলেন ভুমি ও সংস্কার দফতরের বহরমপুর ব্লক আধিকারিক সুব্রত হালদার। সিসি ক্যামেরায় সেই ছবি ওঠায় জবাবদিহি করতে হয়েছে সুব্রতবাবুকেও।
জেলা দফতরের কর্মীদের কথায়, অরবিন্দবাবু আসার কয়েক মাসের মধ্যেই কর্মসংস্কৃতি থেকে শুরু করে দফতরের পরিবেশটাই বদলে গিয়েছে। সোমবার থেকে সেখানে শুরু হয় আমজনতাকে দ্রুত পরিষেবা দেওয়ার ‘এক জানালা’ ব্যবস্থা। যা রাজ্যের ভূমি দফতরের মধ্যে প্রথম বলে কর্তাদের দাবি। পরিষেবা পেতে আসা আমজনতার জন্য এ দিন উদ্বোধন হয় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিশ্রামকক্ষ, এলইডি টিভি-র। রয়েছে ঠান্ডা পানীয় জল, নারী পুরুষের আলাদা শৌচালয়, মাছভাত থেকে চা-জলখাবারের ক্যান্টিনও।
বহরমপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ব্রিটিশ আমলের হেরিটেজ ভবনে রয়েছে ভূমি দফতরের জেলা, মহকুমা ও ব্লকস্তরের কার্যালয়। কিছু দিন আগেও ঝোপঝাড়ে পেরিয়ে, ঝুলে মোড়া, পলেস্তারা খসা, ভাঙাচোরা টেবিল সমৃদ্ধ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ঢুকতে হত। পানের পিক, থুতু ও ভিড়ে ঠাসা থাকাত সেই কার্যালয়। পরিষেবা নিতে আসা আমজনতার বসার কোনও জায়গা ছিল না। ছিল না পানীয় জল ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা। মোটা টাকার বিনিময়ে মহুরি না ধরলে জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ছিল অলীক কল্পনা মাত্র।
কয়েক যূগের সেই অচলায়াতন প্রায় সমূলে উৎপাটিত হয়েছে মাত্র মাস ছ’য়েকের চেষ্টায়। প্রথমেই জবরদখল উচ্ছেদ করে ভূমি দফতরের চৌহদ্দির বাইরে মহুরিদের বের করে দেওয়া হয়। তারপরে ধীরে ধীরে ভোলই পাল্টে দেওয়া হয়েছে। নীল-সাদা রঙের ভবনটির ভিতরে ও বাইরে এসেছে কর্পোরেট আদল। মহুরিদের সাহায্য ছাড়া আমজনতার পরিষেবা দেওয়ার জন্য খোলা হয়েছে এক জানালা ব্যবস্থা সম্বলিত সহয়তা কেন্দ্র। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘আনপড় মানুষও সহায়তা কেন্দ্রের অনুসন্ধান জানালা থেকে জেনে নিয়ে সেই মতো আবেদন করতে পারবেন। কবে সমস্যার সমাধান মিলবে সেই তারিখ তখন জানিয়ে দেওয়া হবে। সমাধান না করা গেলে কেন করা যায়নি, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
জেলার যে কোনও প্রান্তের ভূমি দফতর সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ জানানোর জন্য এ দিন টোল ফ্রি নম্বর (১৮০০৩৪৫৩২৬২) চালু করা করা হয়। কারণ জানা কিংবা প্রতিকার পেতে অভিযুক্ত বা সংশ্লিস্ট কর্মীর কাছে তিন দিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয় পৌঁছে যাবে বলে জানান অরবিন্দকুমার মিনা। এক ছাদের তলায় থাকা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এক জানালার সহায়তা কেন্দ্র ও আমজনতার বিশ্রামঘরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন জমির রেকর্ড (পড়চা) নিতে আসা ৫৫ বছরের প্রৌঢ় মিলন দাস, নবরূপে সজ্জিত বাগানের দ্বারোদ্ঘাটন করেন খাজনা দিতে আসা ৫২ বছরের প্রৌঢ়া কৃষ্ণা দত্ত। অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, প্রায় সওয়া কোটি টাকা খরচ করে যাঁদের জন্য এই আয়োজন, তাঁদের দিয়েই দ্বারোঘ্টানের এই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান করা হয়। প্রতিটি ঘরের সামনে টাঙানো হয়েছে আধিকারিকদের নাম, পদ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজের তালিকা। সাধারণ মানুষের জন্য প্রকাশ্যে টাঙানো হয়েছে আধিকারিকদের মোবাইল নম্বর।