ওয়ার্ড কমিটির বৈঠকে অধীর চৌধুরী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
ভোটের দামামা বাজল বহরমপুরেও। বুধবার নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরেই তৃণমূল ও বামফ্রন্ট প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছিল। তারপর বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে আরএসপি-র প্রার্থী প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে যত না আলোচনা শহরে, তার চেয়েও বেশি তৃণমূলের প্রার্থী গায়ক ইন্দ্রনীল সেনকে নিয়ে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বহরমপুর গ্রান্ট হলে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। গায়ক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পোড় খাওয়া নেতা বলেন, “আমি রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনে নামি। দলের বিরুদ্ধে লড়াই করব। আগেই বলেছি কংগ্রেস এখানে একাই পারে। আজও বলছি কংগ্রেস এখানে একাই পারে।”
অধীরবাবু রাজনীতির আচার মেনে যতই নিরাসক্ত প্রতিক্রিয়া দিন না কেন, আর এক প্রতিপক্ষ প্রমথেশবাবু সাফ বলছেন, “ইন্দ্রনীল সেন সুগায়ক। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে আমি জানি। তবে বহরমপুর লোকসভা এলাকার মানুষের অভাব-অভিযোগ এবং আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক আছে বলে আমার জানা নেই। এলাকার মানুষের নাড়ির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই।” বহরমপুরের সাংসদ ননী ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পরে ১৯৯৬ সালে উপনির্বাচনে জয়ী হন আরএসপি-র প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়। এক টানা তিন বার জয়ের হ্যাটট্রিক, পরের তিন বার পরাজয়। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রমথেশবাবু সপ্তম বারের জন্য ভোটের ময়দানে কিসের জোরে বাজি রাখলেন? গম্ভীর গলায় তিনি বলেন, “ভারতবর্ষে কংগ্রেসের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। সব মিলিয়ে ৬০-৭০টি আসন তারা পেতে পারে। অপশাসন এবং দুর্নীতির ফলে কংগ্রেস ডুবো জাহাজে পরিণত হয়েছে। অধীর চৌধুরী বা কংগ্রেস চাইলেও বহরমপুর লোকসভা ভোটে ওই ডুবো জাহাজকে টেনে তুলতে পারবে না।” যার উত্তরে বহরমপুর শহর কংগ্রেসের সভাপতি অতীশ সিংহের (কাল্টু) বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বামপন্থীদের ভরাডুবি হয়েছে মুর্শিদাবাদে। আর অধীর চৌধুরীর অভিধানে অসম্ভব বলে কিছু নেই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পরে দলের কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে যাবে কংগ্রেস ডুবো জাহাজ নাকি নৌজাহাজ, যা দেশের অতন্দ্র প্রহরী।”
এ দিকে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ আলিকে। সিপিএমের প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান। বিজেপির প্রার্থী সুজিত ঘোষতিনি আবার অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার। তিনি ডিজি হোমগার্ড পদ থেকে অবসর নেন। মহম্মদ আলি ও বদরুদ্দোজা খান পেশায় শিক্ষক। দুজনেই একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দলে পরিচিত। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময়ে মহম্মদ আলি সম্বন্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘খুব ভাল ছেলে।’ এই ‘ভাল ছেলে’ পরিচয়টাই তৃণমূল প্রার্থীর ‘প্লাস পয়েন্ট।’ এলাকার মানুষও তাঁকে ভাল ছেলে হিসেবে জানেন এবং মানেন। এর আগে ২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে লোকসভায় প্রার্থী হয়ে কংগ্রেস, সিপিএমের পরে তৃতীয় স্থানে ছিলেন মহম্মদ আলি। এ বার অবশ্য শাসকদলের জোরে প্রত্যয়ী তিনি। তাঁর কথায়, “দলের অনুগত সৈনিক হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূূল কংগ্রেসের সাফল্য এবং রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতাকে মাথায় রেখে মানুষ ভোট দেবেন।”
যদিও আব্দুল মান্নানের মুর্শিদাবাদে ‘ভাল ছেলে’ কতটা দাগ কাটতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ঠিক যেমন ভাবে অধীর চৌধুরীর বহরমপুরে ইন্দ্রনীল সেনকে নিয়ে। কংগ্রেস এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। তবে, দলীয় সূত্রে খবর, এই দুই কেন্দ্রে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী পরিবর্তনে কোনও ইচ্ছা নেই কংগ্রেসেরও।