প্রধান নেই, ভোগান্তি

সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের দায়ে পঞ্চায়েত প্রধান জেলে গিয়েছেন। তাই প্রায় তিন মাস ধরে যাবতীয় কাজ আটকে রয়েছে হুমাইপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। ৫ জুন দায়িত্ব পেয়েছেন উপপ্রধান। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে আছে পঞ্চায়েতের কাজ। ভরা বর্ষায় রাস্তার হাল ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, মেরামতির ন্যূনতম কাজটুকু করে দেওয়ার মতো ব্যবস্থাও নেই। পঞ্চায়েত প্রধানের অনুপস্থিতিতে অন্যান্য কর্মীরাও কাজ করতে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০০:৩২
Share:

সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের দায়ে পঞ্চায়েত প্রধান জেলে গিয়েছেন। তাই প্রায় তিন মাস ধরে যাবতীয় কাজ আটকে রয়েছে হুমাইপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। ৫ জুন দায়িত্ব পেয়েছেন উপপ্রধান। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে আছে পঞ্চায়েতের কাজ। ভরা বর্ষায় রাস্তার হাল ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, মেরামতির ন্যূনতম কাজটুকু করে দেওয়ার মতো ব্যবস্থাও নেই। পঞ্চায়েত প্রধানের অনুপস্থিতিতে অন্যান্য কর্মীরাও কাজ করতে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এদিকে লালনগর থেকে গঙ্গানারায়ণপুর তিন কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। কিন্তু গত তিন মাস ধরে পঞ্চায়েতে সব নিমার্ণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে দুর্গতির শেষ নেই এলাকাবাসীর।

Advertisement

লালনগর গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু মণ্ডল বলেন,“আমার মেয়ে মাধ্যমিক দেবে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের ফর্ম তুলে পঞ্চায়েতে গিয়েছি সামান্য কাজ নিয়ে। কিন্তু কাজ হল না। প্রধান নেই। নেই অন্য কর্মীরাও।” সকলেরই বক্তব্য প্রধান না থাকায় কর্মীরাও অনিয়মিত। যেন কাজ করার কোনও ইচ্ছাই নেই। শুধু কন্যাশ্রী নয়, আটকে আছে অন্য অনেক কাজ। এলাকার মিনাজুল মোল্লা, মজিবর শেখ, আমেদ আলি শেখ, হজরত আলি, সানোয়ার, বিল্লাল মজিবুর শেখরা জানান, হাজি নূর হুসেন ও ইসরাফিলের দুটি পুকুরে মাটি কাটার কাজ করেছিলেন ২বছর আগে। ১০০ দিনের কাজ-প্রকল্পের সেই টাকা আজও পাননি তাঁরা। এদিকে জন্ম ও মৃত্যু, স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র, ট্রেড লাইসেন্সের মতো জরুরি কাগজপত্র না পেয়ে ভুগতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

বহরমপুর-হরিহরপাড়া রাজ্যসড়ক ধরে বেশ কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই নিশ্চিন্দপুর মোড়। ডান দিকে ঠিক ৫ কিলোমিটার রাস্তা গেলে বাঁ হাতে হুমাইপুরের গ্রাম পঞ্চায়েত ভবন। ফ্যাকাশে দেওয়ালে রঙ চেনা দায়। নীচে পঞ্চায়েত প্রধানের ঘর। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে উপরের দুটি ঘর-- একটি সদস্যদের বৈঠক কক্ষ। অন্যটা কর্মীদের বসার ঘর। বেশির ভাগ চেয়ারই ফাঁকা। পঞ্চায়েত ভবনটাই যা আছে, এলাকার প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ কোনও পরিষেবাই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হরিহরপাড়া থানার হুমাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের আবদুল কাদের শেখ গ্রেফতার হন চলতি বছর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা তছরুপের দায়ে তাঁর হাজতবাস হয়েছে। আর তারপর থেকেই অচল এই পঞ্চায়েত। এলাকাবাসীর অভিযোগ জরুরি নানা কাজ নিয়ে পঞ্চায়েতে গিয়েও তাঁদের ফিরে আসতে হচ্ছে।

Advertisement

প্রধানের অবর্তমানে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করার কথা উপ-প্রধানের। প্রশাসনের বক্তব্য লোকসভা নিবার্চন প্রক্রিয়া চলায় উপ-প্রধানকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা যায়নি। সম্প্রতি সই দায়িত্ব হাতে পেলেও কাজ শুরু করতে পারছেন না উপ-প্রধান নির্মল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানের দায়িত্ব হাতে পেয়েছি। কিন্তু পঞ্চায়েত সচিব অন্য কাজে ব্যস্ত। তাই অর্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলির দায়িত্ব বুঝে পাইনি। কাজে হাত দিতে তাই দেরি হচ্ছে। তবে পরিষেবাগত সব কাজই করা হচ্ছে।’’ এ দিকে জানা গিয়েছে পঞ্চায়েতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে গড়িমসি। বিডিও, জয়েন্ট বিডিও-রা কেউই দায়িত্ব নিয়ে কাজগুলি সেরে দিচ্ছেন না।

হুমাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে। ২২ টা সংসদের ১০ টি গ্রামের এই পঞ্চায়েতে নিবার্চিত ১৭ সদস্যের ১২ টি সিপিএম, কংগ্রেসের ২, তৃণমূলের ৩ টি আসন। ব্লকের উচ্চপদের এক আধিকারিক জানান, জনস্বাস্থ্য কারিগরী, এমএসডিপি, সংখ্যালঘু দফতর ওবিসি, এসসি, এসটি-র মতো কয়েকটি ক্ষেত্র প্রধানকে ছাড়া সম্পূর্ণ অচল। তাই যত শীঘ্র সম্ভব প্রধানকে উদ্যোগ নিতেই হবে। বিরোধীদল নেতা তৃণমূলের সানারুল শেখ বলেন, ‘‘প্রধানের দুর্নীতিতে ৩০০ শ্রমিক দু বছর আগে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ করেও টাকা পায়নি। অন্যদিকে তিনি ৭০ দিনের বেশী জেলে আছেন। তাই পঞ্চায়েত কোনও কাজই হচ্ছে না। এর থেকে বেশি বিড়ম্বনা আর কী বা হতে পারে।’’

সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য বনমালী সরকার অবশ্য বলেন, “নিবার্চনের জন্য কাজ গতি হারালেও পঞ্চায়েত অচল হয়নি। এনআরজিপি প্রকল্পে এক বছর কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। ফলত প্রকল্প গুলি মার খাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন